সম্পাদকীয়

অজুহাতের রাজনীতি

ছ’মাস আটকে রাখার পর গত মার্চ-এপ্রিল নাগাদ শহুরে আবাস প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য ৫০০ কোটি টাকা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। আরও খোলসা করে বলা যায়, মোদি সরকার ওই টাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। এবার আসছে এই প্রকল্পেরই পরবর্তী পর্যায়ের ১৯০ কোটি টাকা। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পগুলির জন্য রাজ্যের ঘাড়ে কেন্দ্র কিছু একতরফা শর্ত আরোপ করে। সেখানে রাজ্য আর্থিক অংশীদার হওয়ার সত্ত্বেও রাজ্যের আপত্তি কেন্দ্র গ্রাহ্য করে না। রাজ্যের কোনও পরামর্শকে আমলও দেয় না তারা। রাজ্য কোনও যুক্তিসংগত দাবি উত্থাপন করলে কিংবা কেন্দ্রের অন্যায় ফরমান মানবে না বলে প্রতিবাদ জানালে কেন্দ্র উল্টে ‘শাস্তি’র বন্দোবস্ত করে। রাজ্যের প্রাপ্য টাকাকড়ি আটকে দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য, এজন্য মূলত টার্গেট হয়ে ওঠে বিরোধী দলের নির্বাচিত সরকারগুলি বা মোদির অভিধানিক ভাষায় যা এখন ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকার! তার ফলে দুর্ভোগে পড়েন মূলত গরিব মানুষগুলি। মোদিযুগে প্রবর্তিত এই সংকীর্ণ রাজনীতির সর্ববৃহৎ বলির নাম পশ্চিমবঙ্গ এবং এরাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ। ঠিক এই সংস্কৃতির যূপকাষ্ঠে এখনও রয়েছে মনরেগা (বছরে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রকল্প) এবং গ্রামীণ আবাস যোজনা (গ্রামের গরিব মানুষের জন্য পাকাবাড়ি তৈরির প্রকল্প)। উপর্যুক্ত প্রকল্প দুটির জন্য গ্রামবাংলার গরিব মানুষকে কত কষ্ট পেতে হয়েছে এবং খেসারত দিতে হয়েছে তার নজির এই স্বাধীন দেশে কমই রয়েছে। মনরেগা এবং গ্রামীণ আবাস—দুটি প্রকল্পেই বাংলাকে টাকা দেওয়া কেন্দ্র বন্ধ রেখেছে টানা তিনবছর। তার ফলে বিগত দুটি অর্থবর্ষে (২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪) বাংলার ক্ষেত্রে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৬২ কোটি শ্রমদিবস। ওই দুই বছরে বাংলার গরিব গ্রামবাসীর সঙ্গে আর্থিক বঞ্চনার পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। তার সঙ্গে চলতি অর্থবর্ষের লোকসান যোগ করলে ‘পরিকল্পিত বঞ্চনা’র যে ছবিটা সামনে আসে তা আরও ভয়াবহ! 
এরপরও কি বুঝতে বাকি থাকে কেন এরাজ্যের বহু গরিব মানুষকে স্রেফ কাজের খোঁঁজে অন্য রাজ্যে যেতে হয় এবং নানারকম অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির শিকার হন তাঁরা? এবার গোদের উপর বিষফোঁড়া ‘ম্যান-মেড’ বন্যা। তার ফলে অসংখ্য কাঁচাবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যুরও ঘটেছে কয়েকটি। সরকারি প্রকল্প চালু থাকতেও কেন কিছু মানুষ মাটির অস্বাস্থ্যকর ঘরে বসবাস করবেন? কেন অকাল মৃত্যুর শিকার হবেন তাঁরা? এর দায় কেন্দ্র নেবে না কেন? এমন জোরালো প্রতিবাদ যখন ধ্বনিত হয়, তখনই কেন্দ্রের পাপকে আড়াল করতে আসরে অবতীর্ণ হন বঙ্গ বিজেপির কিছু নেতা। এমনকী কেউ কেউ তো দিল্লি গিয়েও দরবার করেন, যাতে বাংলার সঙ্গে বঞ্চনার কারবারটি আরও জোরদার হতে পারে। তাহলে নাকি বাংলার শাসক দল এবং বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘টাইট’ হবেন! এরপরও কি বিশ্বাস করতে হবে, বিজেপি নেতারা মানুষের জন্য রাজনীতি করেন এবং পদ্মপার্টি বাংলার ভালো চায়?
যাই হোক, এবার হাজার ফন্দি ফিকির করেও শহুরে আবাস প্রকল্পের টাকাটা দিল্লির মাতব্বররা আটকাতে পারেননি। বাগড়া দেওয়ার মতো ‘মহান’ কর্মে বঙ্গ বিজেপির কেষ্টবিষ্টুরাও ডাহা ফেল করেছেন। শহুরে আবাস প্রকল্পের অধীনে নির্মিত বাড়ির গায়ে কেন্দ্রের ঠিক করে দেওয়া ‘লোগো’ বসানো-সহ একগুচ্ছ শর্ত ছিল। সেগুলি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে বাংলায় পর্যবেক্ষক দলও পাঠিয়ে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁরা পরিদর্শনে এসেও রাজ্যের পুর এলাকায় আবাস প্রকল্প নিয়ে কোনোরকম অনিয়ম খুঁজে পাননি। বাংলাকে ক্লিনচিট দিয়েই কেন্দ্রের কাছে তাঁরা রিপোর্ট জমা দেন। এর আগে ছ’মাস আটকে রাখার পর, গত মার্চ-এপ্রিলে শহুরে আবাস প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়তে বাধ্য হয় মোদি সরকার। এবার আসছে পরবর্তী পর্যায়ের ১৯০ কোটি টাকা। ফলে এই ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সমস্ত দরজা বিরোধীদের সামনে বন্ধই হয়ে গেল। বিজেপি সত্যিই যদি বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে চায়, তবে মোদি সরকারের উচিত, মনরেগা এবং গ্রামীণ আবাস-সহ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে নবান্নের প্রাপ্য যেন দ্রুত মিটিয়ে দেয় তারা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পূরণেও তৎপর হতে হবে দিল্লিকে। নিম্ন দামোদর অববাহিকা এবং ঘাটাল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানেও আন্তরিক হতে হবে কেন্দ্রকে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিরাজ এবং অজুহাতের রাজনীতির ধার ভোঁঁতা হয়ে গিয়েছে। এসব আঁকড়ে থাকলে ক্ষতিবৃদ্ধি হবে বিজেপিরই। আম জনতার তা না ভাবলেও চলবে যদিও, কিন্তু গেরুয়া শিবিরের এই ঘৃণ্য রাজনীতির যূপকাষ্ঠে যে বাংলার গরিব মানুষগুলি! তাই ভাবনাটি থেকে অন্যরাও কোনোভাবে পৃথক হতে পারছে না।
2Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায়...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.১৩ টাকা৮৫.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২৭ টাকা১০৭.৯৮ টাকা
ইউরো৮৬.৪২ টাকা৮৯.৭৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা