সম্পাদকীয়

একরৈখিক সংকীর্ণ প্রচেষ্টা

একেবারে গোড়া কেটে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে মোদি সরকার। ভারতীয় সংবিধানে একক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের বদলে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শে চালিত দেশের অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ রয়েছে—তাকে গলা টিপে হত্যা করতে উদ্যত কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠী। এক দেশ, এক ভোট, এক ধর্ম, এক ভাষা, এক সংস্কৃতি, এক দল, এক নেতা, এক সরকার—এ যেন আরএসএসের ভাবধারা মেনে এক স্বৈরাচারীর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। ভাবনার শুরু মোদি জমানার শুরু থেকেই। ‘এক দেশ, এক ভোট’। এবার এই পরিকল্পনায় সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে লোকসভা-বিধানসভা, পরের পর্যায়ে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের ভোট এক যোগে করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, এতে নির্বাচনী খরচ কমবে। সরকারের কাজের সময় বাড়বে। তাছাড়া ভোটের নির্ঘণ্ট জারি হলে নতুন উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যায়, দেশে একবারই ভোট হলে কাজের গতি অব্যাহত থাকবে। এসব যুক্তি কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, বর্তমানে নির্বাচন প্রক্রিয়া অনেকাংশে প্রচার ভিত্তিক, যে কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। ভোটে প্রার্থীদের প্রচারের বহর দেখে বিভিন্ন সময়ে আদালতও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুতরাং উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা নির্বাচনী খরচ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই এই উদ্বেগ কমতে পারে। কিন্তু কেন্দ্র সেই সদিচ্ছা দেখাতে নারাজ। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে দেশের লোকসভা-বিধানসভা-পুরসভা-পঞ্চায়েতের ভোট আলাদাভাবেই হয়। গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যদি এই ব্যবস্থাতেই সরকারি কাজ চলতে পারে, তাহলে হঠাৎ করে কেন তা শাসকগোষ্ঠীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল? তৃতীয়ত, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে শুধু নির্বাচনী বিধি নয়, একইসঙ্গে সংসদ ও বিধানসভার কার্যরীতি ও গঠন নীতিতেও সংশোধন আনতে হবে। এতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিই লঙ্ঘিত হবে না, সংসদীয় ব্যবস্থাতেও বড়সড় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেবে। ফলে এটা পরিষ্কার, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী যে একটি একরৈখিক সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা চালাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে মোদিবাহিনী চাইছে, বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থাকে বিদায় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধাঁচে প্রেসিডেন্ট শাসিত একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে। যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়।
বিরোধীদের আপত্তি ঠিক এইখানেই। তাদের মতে, ভারত এক বহুজাতিক, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, সম্প্রদায়, সংস্কৃতির দেশ। তাদের নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান। বহুত্বের মধ্যে সমন্বয় হল বৃহত্তর সমাজের ঐক্য সংহতির ভিত্তি। দেশের সংবিধানও এই আধারেই নির্মিত। সংবিধানের দুই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল, যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই নীতি মেনেই কেন্দ্রে ও রাজ্যগুলির এক্তিয়ার ও কাজ ভাগ করে দিয়েছে দেশের সংবিধান। ভোটেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। লোকসভা ভোট হয় দেশের ভালোমন্দ-র দিকে তাকিয়ে। বিধানসভা ভোটের ভাগ্য নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নিজস্ব বিষয়গুলির উপর দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলির ভোট হয় একেবারেই স্থানীয় ইস্যুগুলির ভিত্তিতে। এই সবটা এক ছাঁচে ফেলে দেওয়ার মানে ভারতীয়ের আত্মাকে অস্বীকার করা। বিরোধীদের আশঙ্কা, ‘এক দেশ, এক ভোট’ চালু হলে জাতীয় ইস্যুতে চাপা পড়ে যাবে আঞ্চলিক ইস্যু। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও জলের মতো টাকা খরচ করে কার্যত ভোট কিনে নিতে চাইবে কেন্দ্রের শাসকদল। সেখানে বিরুদ্ধ স্বরের হয়তো কোনও অস্তিত্বই থাকবে না। এই আশঙ্কা অমূলক নয়।
কিন্তু আদৌ কি এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা যাবে? কারণ ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করতে গেলে সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন। এই মুহূর্তে বিজেপি তথা এনডিএ জোটের সেই শক্তি নেই। এনডিএ জোটের সব শরিকদল এই ইস্যুতে সরকারের পাশে দাঁড়াবে—এমন নিশ্চয়তা এখনই কেউ দিতে পারছে না। সুতরাং বলা যায় দিল্লি অনেক দূর। সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা হল, শীতকালীন অধিবেশনেই এই বিল সংসদে আনা। ২০২৯ সালে লোকসভার সঙ্গে বিধানসভার ভোটও সেরে ফেলা। কিন্তু লোকসভায় বর্তমানে দুই যুযুধান পক্ষের যে বিন্যাস তাতে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মতো এই বিলটিকেও না অনির্দিষ্টকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিতে হয়। তেমনটা হলে শাসকের উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় নরেন্দ্র মোদিদের মুখ কালিমালিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছেন অনেকে।
21d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৫ টাকা৮৪.৮৯ টাকা
পাউন্ড১০৮.২৫ টাকা১১১.৮০ টাকা
ইউরো৯০.৭১ টাকা৯৩.৮৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা