মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
রোগীর খাওয়াদাওয়া কেমন হবে, সাধারণ মানুষ কতটা পরিমাণ খাবার খাবেন, চোখে দেখার অসুবিধা হলে বা কানে শোনার অসুবিধা হলে কী করতে হবে বা দূরবর্তী রোগীকে দেখার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে বেশ কিছু বিষয় পড়ে নেওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম-
অপ্টোমেট্রি
অপ্টোমেট্রি একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত পেশা। চোখ এবং দৃষ্টি সংক্রান্ত প্রাথমিক চিকিৎসা করে থাকেন অপ্টোমেট্রিস্টরা। এছাড়াও চোখের এবং দেখার ক্ষমতার বিশদ যত্ন যেমন চশমা দেওয়া, চোখের রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসার বন্দোবস্ত এবং সামগ্রিক দৃষ্টির অবস্থার উন্নতি ঘটানোর ব্যবস্থা করার কাজ করেন অপ্টোমেট্রিস্টরা।
প্রাইভেট প্র্যাকটিস, গ্রুপ প্র্যাকটিস অর্থাৎ এমবিবিএস, এমডি, বিডি ডাক্তারদের সঙ্গে যুক্ত থেকে চক্ষু হাসপাতালে বা অন্য হাসপাতালে চক্ষু বিভাগে এবং চক্ষু পরীক্ষালয় বা চক্ষু পরীক্ষাকেন্দ্রে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। কনট্যাক্ট লেন্স বা অপথ্যালমিক লেন্স শিল্পে পেশাদার কর্পোরেট ম্যানেজার হিসাবে, রিটেল অপটিক্যাল চেনবিজনেসগুলির শোরুম ম্যানেজার রূপে, উদ্যোগপতি হিসেবে, ভিশন থেরাপিস্ট, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ, স্পোর্টস ভিশন স্পেশালিস্ট হিসাবে কাজের চাহিদা আছে।
উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষার পর মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজির সেট পরীক্ষা দিয়ে অপ্টোমেট্রি বা ভিশন সায়েন্স নিয়ে পড়ে নেওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি পড়িয়ে থাকে।
এই ধরনের আরেকটি কোর্স ব্যাচেলর অব ভিশন সায়েন্স অ্যান্ড অপ্টোমেট্রি। পড়ে নেওয়া যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের অধীন প্রতিষ্ঠান থেকে।
বি এসসি ইন টেলিমেডিসিন অ্যান্ড ডিজিটাল হেলথ্
কোভিড সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এই টেলিমেডিসিন। যখন কেউ ঘরে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তখনই ফোন করে বা ভিডিও কল করে ডাক্তারদের সুপরামর্শ পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের সুযোগ বিদেশ থেকেও পাওয়া যায় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। হেলথ কেয়ার সিস্টেমেকে ডিজিটাল করা হয়েছে এইভাবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বিষয়টি নিয়ে ৩ বছরের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সটি করে নেওয়া যায়। পড়া শেষে কাজ করা যায় – এন্ট্রি লেভেল ডিজিটাল প্রোডাক্ট এক্সিকিউটিভ, অ্যাসোসিয়েট মেডিকেল রাইটার, ডিজিটাল হেল্থ ডেটা অ্যানালিসিস, অপারেশন এক্সিকিউটিভ, ডিজিটাল হেলথ এডুকেটর হিসাবে।
ডিপ্লোমা ইন নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ্ এডুকেশন
কোনও নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠীর পুষ্টি কেমন হওয়া দরকার এবং তার জন্য কেমন ধরনের খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন তার ধারণা দেয় এই বিষয়টি। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এই ডিপ্লোমা কোর্সটি করা যায়। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এই কোর্সটি পড়ে নেওয়া যায়।
কাজের সুযোগ রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টরে নিউট্রিশনিস্ট বা হেলথ্ এডুকেটর হিসাবে।
নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স
নিট্রিশনিস্ট এবং ডায়াটেটিস্টরা কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা। বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে জানা যায় নিউট্রিশনিস্টদের কাছ থেকে। অন্যদিকে রোগীদের খাবারের তালিকায় কী ধরনের খাবার রাখলে সঠিক পুষ্টি পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন হয় ডায়াটেটিস্টদের।
তিন বছরের নিউট্রিশনে বি এসসি করা যায়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নিউট্রিশন বা বায়োলজি অথবা দুটো বিষয়ই থাকতে হবে। এছাড়া ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, কম্পিউটার সায়েন্স এবং স্ট্যাটিসটিক্স থাকতে হবে। আবার পড়া যায় হোম সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশনে বি এসসি। ভর্তির যোগ্যতায় প্রয়োজন নিউট্রিশন-কেমিস্ট্রি বা ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি অথবা কেমিস্ট্রি – বায়োসায়েন্স।
এছাড়াও পড়া যায় এম এসসি ইন অ্যাপ্লায়েড নিউট্রিশন, এম এসসি ইন নিউট্রিশন। এই বিষয়গুলি পড়ার জন্য ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন, ডায়াটেটিক্স, ফুড সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, ফিজিওলজি, ফুড টেকনোলজি, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স বিষয়ে বি এসসি করা থাকতে হবে।
পড়া যায় ডিপ্লোমা ইন ডায়াটেটিক্স। ভর্তির জন্য ফিজিওলজি, কেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল ডায়াটেটিক্স, ফুড নিউট্রিশন, নার্সিং, এমবিবিএস বা হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়া ফুড অ্যান্ড ডায়াটেশিয়ানের উপর ভোকেশনাল কোর্স করানো হয়। রয়েছে এম এসসি ইন নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়াটেটিক্স এবং ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন কলেজ থেকে কোর্সগুলি করে দেওয়া যায়। নিউট্রিশন নিয়ে পড়ার পর সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে।
কাজের ধরন অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ডায়াটেশিয়ান, কমিউনিটি ডায়াটেশিয়ান, ম্যানেজমেন্ট ডায়াটেশিয়ান-এর মতো ভাগ রয়েছে।
অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচথেরাপি
কানে শোনা বা সেই সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা হলে বা কানের ভিতরের অঙ্গর কারণে যে ভারসাম্য রক্ষা হয় তার কোনও অসুবিধা হলে অডিওলজিস্টরা সাহায্য করে থাকেন। সাধারণত এধরনের অসুবিধা হলে আমরা ইএনটি স্পেশালিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকি। কিন্তু এক্ষত্রে অডিওলজিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কানে শোনার অসুবিধা হলে কথা বলতে পারারও সমস্যা তৈরি হয় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। আর এই অসুবিধায় সাহায্য করার জন্য রয়েছেন স্পিচ থেরাপিষ্টরা। হেয়ারিং এইড লাগবে কি না সেটাও জানিয়ে দিতে পারেন স্পিচথেরাপিস্ট।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ্ সায়েন্সের অধীন ব্যাচেলর ডিগ্রি অব অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজি নিয়ে পড়া যায়। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি , বায়োলজি, ইংলিশ এবং একটি ফিফথ পেপার নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল পাশ করতে হয়। ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স টেস্ট দিতে হয়।
কাজের সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে। নিজস্ব ক্লিনিকও খোলা যায়। বেশ কিছু স্কুলও আছে যেখানে কথা বলতে না পারা শিশুদের কথা শেখানোর তালিম দেওয়া হয়, সেখানেও কাজের সুযোগ রয়েছে। ওল্ড এজ হোমে বয়স্ক মানুষদের জন্য অডিওলজিস্টদের চাহিদা রয়েছে।
সাইকোলজি
লক ডাউন এবং তার পরবর্তী সময় অতিবাহিত হয়েছে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন, কম্পিউটার নিয়ে। বাস্তবের সঙ্গে ধীরে ধীরে কমছে সম্পর্ক। কাজ হারিয়েছেন প্রচুর মানুষ। কাজের বাজারে এসেছে মন্দা। আর্থিক দিকে শুরু হয়েছে অনিশ্চয়তা। আর এর থেকে শুরু হয়েছে নানা মানসিক সমস্যা। দেখা দিচ্ছে ফ্রাসট্রেশন, ডিপ্রেশন। মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা কমছে। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে দ্বারস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকের। তবে এ সমস্যা সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিংয়ে অনেকটা সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়।
এ রাজ্য থেকে বিএ বা বিএসসি করার সুযোগ রয়েছে। যে কোনও শাখায় পড়ার পর সাইকোলজি নিয়ে পড়ে নেওয়া যায়। অনার্স পাশ করে পিওর সাইকোলজি বা অ্যাপ্ল্যায়েড সাইকোলজি হিসাবে মাস্টার ডিগ্রি করা যায়। এম ফিল করার সুযোগও রয়েছে।
সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং নিয়ে পিজি ডিপ্লোমা করে নেওয়া যায়। সাইকোলজি, সোশিওলজি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন, ফিলোজফি, ফিজিওলজি বা অ্যানথ্রোপলজি-তে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট বা অনার্স গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। মেডিক্যাল সায়েন্সে ডিগ্রি থাকলেও আবেদন করা যায়।