মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
মধ্য কলকাতার একটি নামী স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র দেবদান দত্তের কথায়, ‘আমার অনেক বন্ধু নিয়মিত স্কুলে আসছে না।’ কেন? তার ব্যাখ্যা, অনেকেই ধরে নিয়েছে, নবম শ্রেণির মূল্যায়ণ যেখানে ঘরে বসে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের (সরকারের দেওয়া বিষয়ভিত্তিক নির্দিষ্ট প্রশ্নাবলী) উত্তর লিখেই হয়ে যাবে, তাহলে আবার স্কুলে যাওয়ার কী দরকার? আর যারা একটু ভালো ছাত্র, তারা ভাবছে, ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বাড়িতে প্রস্তুতি নিলেই ভালো। তবে, তার মতো বেশ কিছু সহপাঠীকে বাড়ির অভিভাবকদের চাপেই স্কুলে যেতে হচ্ছে।
দেবদানের পর্যবেক্ষণ অমূলক নয়। ১৬ নভেম্বর স্কুল খোলার দু’তিন দিনে যে উৎসাহ বা উদ্দীপনা ছিল, তা ধীরে ধীরে কমে গিয়েছে। দশম শ্রেণির টেস্ট হবে ডিসেম্বরে। সেই কারণে কোনও কিছু বিশেষভাবে বোঝার থাকলেই তারা স্কুলে যাচ্ছে। বাকি দিনগুলি তারা বাড়িতে বসেই প্রস্তুতি নেওয়ার পক্ষপাতী। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও উচ্চ মাধ্যমিককেই পাখির চোখ করেছে। তবে, সেটা এপ্রিলে হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে উপস্থিতির হার এখনও খুব একটা কম নয়।
দীর্ঘদিন পর অনেকে স্কুলে গিয়ে দেখেছে, তাদের প্রিয় নারকেল গাছটা, যেটা ঘুরে ঘুরে তারা খেলত, সাইক্লোনের দাপটে সেটা পড়ে গিয়েছে। গাছটা কেটে ফেলতে হয়েছে। এগুলিও তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তবে, মনোবিদদের কথায়, স্কুলে আসতে আসতেই এগুলি কাটবে। বাড়িতে বসে নেতিবাচক চিন্তাভাবনার অবকাশ থাকে। বড় কোনও অসুবিধা না থাকলে স্কুল কামাই করা এই মুহূর্তে উচিত হবে না।
একজন মানুষ তার স্কুল জীবনেই টিমম্যান হয়ে উঠতে শুরু করে। আর সেই সময়টাই তাদের চলে যাচ্ছে ঘরে বসে। এটা ভবিষ্যৎ জীবনে প্রভাব ফেলবে। নিচু ক্লাসের পড়ুয়ারা প্রায় দু’বছর স্কুলের বাইরে। প্রাথমিকের অনেক পড়ুয়া জানেই না স্কুল জিনিসটা কী! অন্তত সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে আনার দাবি উঠছে। সেক্ষেত্রে রান্না করা মিড ডে মিলও পাবে তারা। নাহলে যারা মিড ডে মিল পাওয়ার যোগ্য দাবিদার, তারা শুধুমাত্র মিড ডে মিলের সামগ্রী পাচ্ছে।
শিক্ষকরাও পড়েছেন নতুন সমস্যায়। অনেককে অনলাইন এবং অফলাইন, দু’রকম ক্লাসই করতে হচ্ছে। আবার রয়েছে হাইব্রিড ক্লাস। অর্থাৎ, শিক্ষক ক্লাসে চেয়ার টেবিলে বসে ক্লাস নেবেন। আর তাঁর সামনে খোলা থাকবে ল্যাপটপের ওয়েব ক্যামেরা। একই সঙ্গে ক্লাসরুম এবং বাড়িতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছতে পারবেন তিনি। বিষয়টি অভিনব ঠিকই। তবে, এ ধরনের ক্লাসের সঙ্গে সিংহভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই সড়গড় হয়ে উঠতে পারেননি।
বহু সমস্যা থাকলেও রাজ্য সরকারের স্কুল খোলার বিষয়টিকে সাধুবাদই জানিয়েছে শিক্ষামহল। সরকারি স্কুলগুলিতে দিন বা সময় বেঁধে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষকদের একাংশের আপত্তি থাকলেও, অনেকেই তা মেনেও নিতে শুরু করেছেন। তবে, স্কুলটা খোলা থাকুক, এটাই একবাক্যে বলছেন সকলে।