গত সাত বছরে বদলেছে গায়িকা পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন। কীভাবে? একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন নানা কথা।

রিয়ালিটি শো জীবন বদলেছে?
হ্যাঁ, রিয়ালিটি শোয়ের পর থেকে ধরলে গত সাত বছর ধরে আমার পেশাদার জীবন চলছে। সাত বছরে যতটুকু করেছি, আমি খুব খুশি। আমি তো ছোট শহরের মানুষ। কখনও ভাবিনি কলকাতায় এসে কাজ করব। সেটাও তো হল। আসলে আমি ইঁদুরদৌড়ে নেই। কোভিডের সময় এটা নিজেকে বুঝিয়েছি। তার আগে ‘ও পেয়ে গেল, সে এগিয়ে গেল’— এগুলো মনে হতো। 

পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী হবেন, এ স্বপ্ন কি ছোটবেলার?
আমি গান শিখেছি ছোট থেকেই। উচ্চমাধ্যমিকের পর বিশ্বভারতীতে মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা করি। আমার পরিবারে গান কখনও গৌণ ছিল না। গান নিয়ে পড়াশোনা করব, এটাই বাবা, মা চেয়েছিলেন।

গত সাত বছরে ইন্ডাস্ট্রি এগল?
এই ভাবনাটা আপেক্ষিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে। লোকগান আগে কেউ শুনত না। আমি গত সাত বছর ধরে লোকগান নিয়ে লড়াই করছি। কালিকাদাকে (কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য) দেখেই লোকগান নিয়ে লড়াইয়ের শুরু। আর অভিজিৎ সেন। ‘সারেগামাপা’-র পরিচালক। উনি চেয়েছিলেন পৌষালি লোকগান নিয়েই থাকবে। ছোট থেকে কিন্তু আমার পছন্দের ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত। লোকসঙ্গীত গাইব, এটা ভাবিনি। 

শ্রোতার মিউজিক সেন্স কি বদলেছে?
শুরুর দিকে বহু জায়গায় গিয়ে শুনেছি, ‘টুম্পা সোনা’ শুনব। আমি বলেছি টুম্পা সোনা তো গাইতে পারব না। অন্য একটা সোনা গাইছি। বলে ‘সোনা বন্ধু রে’, গেয়েছি (হাসি)। 

পুজোর জন্য নতুন গান গাইছেন?
আমার নতুন দুটো কাজ। একটা শাহ আবদুল করিমের প্রোডাকশন। ‘বন্দে মায়া লাগাইসে’ গানটাকে লোফি মিউজিকে করা হয়েছে। আর ‘অন্য রকম পৌষালি’ নামের একটা অ্যালবাম হচ্ছে। লোকসঙ্গীত নয়। চারটে চার রকমের গান। এটা পুজোর আগেই আসবে। আর একটা প্রোজেক্ট আছে, ‘হারানো মাটির টান’। পুরনো বাতাসা তৈরির গান, সুন্দরবনের বনবিবির গান। সেটা আর্কাইভ করছি। এটা অনেক বড় মাপের কাজ। শুধু ‘পিন্দারে পলাশের বন’ কিন্তু লোকসঙ্গীত নয় (হাসি)। 

ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু তৈরি হল? 
ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ বন্ধু হয় না। ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে প্রচুর রাজনীতি, প্রচুর গোষ্ঠী। কিন্তু আমি কোনও গোষ্ঠীতে নেই।

তাতে কি ক্ষতি হয়েছে?
ধরুন, একটা গান গাওয়ার সুযোগ এল। পরের দিন দেখলাম স্টুডিওতে গিয়ে অন্য একজন গেয়ে ফেলল সেই গানটা। আমার সঙ্গে ১০-১২ বার এমন ঘটনা ঘটেইছে। লবিতে নেই বলেই হয়তো সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। তবে কয়েকজনের কথা বলব। প্রথম ব্রেক দিয়েছিল অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। জয়দার (সরকার) সুরে শ্রীজাতদার লেখা একটা গান গেয়েছিলাম। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে সদ্য একটা প্রোজেক্ট গান গাইলাম।  

কোনও সঙ্গীতশিল্পীকে অ্যাডমায়ার করেন?
লোপামুদ্রা মিত্র। লোপাদি বলেছে, জীবনে কোনওদিন পিছনে ফেলে আসা বইয়ের পাতা পড়বি না। ওখানে কোনও গল্প নেই। সামনের পাতাগুলোতে গল্প আছে। 

জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার ভয় হয়?
অবশ্যই। সেজন্য সবসময় ‘প্ল্যান বি’ তৈরি করে রাখি।

সেটা কী? 
গান শেখানো। যখন মনে হবে আমার গ্রাফ কমে যাচ্ছে, এনার্জি নেই, গাইতে পারছি না, তখন থেকে শুরু হবে প্ল্যান বি।

আপনার প্রতিযোগী কে বা কারা?
লোপাদি, জোজোদি, ইমন, অনুপমদা সকলেই আমার প্রতিযোগী (হাসি)।