চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যয়নে বিশেষ উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। কর্মস্থল পরিবর্তন ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। মনে অস্থিরতা। ... বিশদ
গৌতম হালদার (নাট্য ব্যক্তিত্ব)
ভাষাটা একটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। বাঙালি জাতি হিসেবে সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে, পৃথিবীর মধ্যে বেশ পিছিয়ে আছে। যেগুলো একসময় তার গর্ব করার বিষয় ছিল- ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য- সবেতেই আজ পিছিয়ে। বাংলা আজ আমরা শুদ্ধভাবে বলতেও পারি না। বলতে গেলে মনে হয়, তার সঙ্গে ক’টা হিন্দি, ইংরেজি শব্দ জুড়ে দিলে ভাষার ইজ্জত বাড়বে। এই ভাবনা বাঙালি হিসেবে মোটেই গর্ব করার মতো নয়। জাতির মেরুদণ্ড ভাঙলে বাংলা ভাষাও ভাঙতে থাকবে। বাংলা ভাষা আমার মায়ের মতো। মাকে তো ছাড়া যাবে না। আমি ছবি দেখি বাংলায়, ভাবি বাংলায়, স্বপ্ন দেখি বাংলায়। তারপর হয়তো সেটাকে ইংরেজি বা হিন্দিতে অনুবাদ করি। সেটা না করে তো কোনও উপায় নেই। কিন্তু বাংলা ভাষার মতো প্রিয় আর অন্য কিছু হতে পারে না।
লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (চিত্রনাট্যকার)
মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে পারছি না, এটা যেমন সত্যি, তেমনি অন্য ভাষা জানলে তো কোনও ক্ষতি নেই। সেই সীমাবদ্ধতা আমাদের কারও মধ্যেই থাকার কথা নয়। তবে নিজের মাতৃভাষা ভুলে অন্য ভাষা শিখলে সেই ভাষারও ততটা শ্রীবৃদ্ধি হয় না। মাতৃভাষাও বঞ্চিত হয়। যে কাজই করুন, নিজের মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিয়েই করা উচিত। পৃথিবী জুড়ে যাঁরা মাতৃভাষাকে সম্মান করেছেন, তাঁরা প্রতিদানও পেয়েছেন। ভাষা তো মায়ের মতোই। যাঁরা বাংলাকে আপন করেছেন, তাঁরা বাংলা ভাষাটাকেও আপন করতে শিখুন।
অভিজিৎ গুহ (পরিচালক)
শিক্ষা এবং অর্থনীতির দিক থেকে যাঁরা একটু এগিয়ে, তাঁদের মধ্যে ইংরেজি বলার প্রবণতা বাড়ছে। একইসঙ্গে যাঁরা সেদিক থেকে একটু পিছিয়ে, তাঁদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। ভাষার মধ্যে পরিবর্তন আসবেই, সেটাকে মেনে নিতে হবে। ভাষা নদীর মতোই প্রবহমান, সে কোন শালগ্রাম শিলা নয়। ভাষা গতিশীল, তাই বিভিন্ন সময়ে তাতে নতুন নতুন শব্দের সংযোজন ঘটে চলেছে। সেটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। আমরা জানি, অক্সফোর্ড ডিকশনারিতেও প্রচুর হিন্দি এবং বাংলা শব্দ ঢুকেছে। কিন্তু কোনও ভাষার মধ্যে যদি চূড়ান্তভাবে অন্য শব্দ বা ভাষার আধিক্য ঘটে যায়, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। আমি তার বিরোধিতা করি। আমি বাংলা ভাষাতেই কথা বলি, লিখি, ছবি বানাই। লিখিত ভাষা যখন মৌখিক ভাষায় পরিণত হয়, সে ভাষা উন্নতি লাভ করে। তবে আঞ্চলিক ভাষা থাকবেই, সেটাকে আমরা অস্বীকার করতে পারব না। বই লিখে, সিনেমা তৈরি করে, থিয়েটার করে নানাভাবে বাংলা ভাষার চর্চাটা করে যেতে হবে।
অমৃতা চট্টোপাধ্যায় (অভিনেত্রী)
বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মিশ্রিত একটা খিচুড়ি ভাষা এতটাই আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে যে, অধিকাংশ মানুষকেই আমরা এমন ভাষায় কথা বলতে দেখি। ভাষার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভাষার সঙ্গে এমনিই অনেক বিদেশি ভাষা জুড়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি তো বটেই তার সঙ্গে হিন্দির একটা খারাপ বঙ্গানুবাদ করে সেই ‘বাংলায়’ কথা বলার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটা ভাষার একটা ব্যাকরণ আছে, সেটা সকলের অনুসরণ করা উচিত। আমি বলছি না যে, গুরুগম্ভীর বাংলা প্রতিদিনের কথার মধ্যে সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু সাধারণ ব্যাকরণ যেন আমরা মেনে চলতে পারি। আমি নিজেও যতটা সম্ভব খিচুড়ি ভাষা এড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করি।