শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
গত তিন দশক ধরে মঞ্চগানের প্রচার ও প্রসারের কাজ করছেন আপনি। নাট্যগবেষক দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকভাবে পেয়েছি। কিন্তু সঙ্গীতশিল্পী দেবজিৎকে মঞ্চে এত কম পাওয়া যায় কেন?
কম পাওয়া যায় না। যাঁরা শুনতে চান, তাঁরা পান। এখনকার দিনে সবটাই পলিটিক্যাল হয়ে গেছে। আমি পলিটিক্যাল হলেও,আমার সঙ্গীত পলিটিক্যাল নয়। আমি মানুষের জন্য গান গাই। একদল মানুষের জন্য গান গাই না। সেই জন্যই কেউ পছন্দ করেন, আবার কেউ করেন না।
নিন্দুকেরা বলে যাঁরা আপনার গান শুনতে যান তাঁরা নাকি শ্রোতার থেকেও শুভাকাঙ্ক্ষী বেশি।
শুভাকাঙ্ক্ষী না হলে শ্রোতা হবে কী করে! ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, এরকম কথা শুনলে আমার জেদ আরও বেড়ে যায়। যখন শুরু করেছিলাম তখন কেউ জানত না থিয়েটারের গান কী? খায় না মাথায় দেয়? বহু লোক প্রশ্ন করতেন আপনি কোন দলে আছেন? আমি বলতাম কোনও দলে নেই। থিয়েটারের দাদারা বলতেন আমাদের উচ্ছ্বিষ্ট নিয়ে কাজ করে। গানের মানুষরা বলতেন থিয়েটারের গান কোনওদিন সাবজেক্ট হবে না। কিন্তু এখন মঞ্চের গান, থিয়েটারের গান মঞ্চে, গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত তথ্য। থিয়েটারের গান করতে গেলে একটু জ্ঞানবুদ্ধি লাগে। প্রসেনিয়াম থিয়েটারের ২২৫ বছরের পরম্পরার পু্রোটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাঁর চলন দেখানোর চেষ্টা করেছি। গান শিখছি। আগেকার দিনের থেকে এখনকার দিনের গান গাওয়ার জন্য সাঙ্গীতিক অর্থে নিজেকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছি। শিক্ষিত হয়েছি বলব না। সুর জোগাড় করেছি, ছাপা স্বরলিপি জোগাড় করে পুরনো দিনের শিল্পীদের কাছ থেকে গান রেকর্ডিং করে রিভাইজ করতে গিয়ে ভাবতে হয়েছে কোন চরিত্রের গান এটা। কোন সংলাপের পরের গান। আমি তো হাসির গান কান্নায় আর কান্নার গান হাসির করতে পারব না। যারা এমনি গান করেন, তাদের এরকম কোনও দায়বদ্ধতা নেই।
গবেষণামূলক কাজ করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হননি?
ভারত তথা কলকাতায় বসবাস করি আর কাজ করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ব না, সেটা কি কখনও হয়? আমাকে যারা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আমি তাদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। বের করে দিয়েছিলেন বলেই না জেদ বেড়ে গিয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই আমি অসম্ভব দুষ্টু ও জেদি।
মঞ্চ গান নিয়ে দেশবিদেশে অনেক অনুষ্ঠান করেছেন,বক্তৃতা দিয়েছেন। এমন কোনও অভিজ্ঞতা যা পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান।
বহুদিন আগে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম বিবিসিতে গান গাইতে। শিল্পী উপস্থিত থাকার জন্য তৎকালীন বিবিসির ডিপার্টমেন্ট এক্সজিকিউটিভ ডিরেক্টর আমার কোট হাতে নিয়ে টানা আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছেন। শত অনুরোধ সত্ত্বেও বসেননি। আমরা সাহেবদের খারাপ বলি কিন্তু এটাও আমার শিক্ষণীয় মনে হয়েছে। এছাড়া আমেরিকায় যে মঞ্চে গান গাইতে গিয়েছি, সেখানে সম্মানিত হয়েছেন ওস্তাদ আলি আকবর খান সাহেব। আমি থিয়েটারের গান গাই শুনে আলিবাবা নাটকের গান শুনতে চেয়েছিলেন। উনিশ শতকে বাংলার মঞ্চে যখন আলিবাবা মঞ্চস্থ হয়, তখন সেই সব মিউজিশিয়ানের মধ্যে আলাউদ্দিন খান সাহেবও ছিলেন। তাঁর ডায়েরিতে আলিবাবার গানের নোটেশন ছিল বলেই শুনতে চান। আজও আমি কাজ করে চলেছি তাতে ইন্ধন দিয়েছে। বড় প্রাপ্তি বলতে পারেন।
আর্কাইভ গড়েছেন মূলত পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর লক্ষ্যে। সেক্ষেত্রে কতটা সফল?
কোনওরকম সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়া হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ধারার গান,পত্রপত্রিকা, লাইভ রেকর্ডিং আছে। যার কোনও অস্তিত্ব নেই। থিয়েটারের গানকে একটা ধারা হিসেবে মানুষ মেনে নিয়েছে। লেখালেখি হচ্ছে। আমি নিজেও লিখছি। শুধু গান-বাজনা করে, সংসার প্রতিপালন করে এমন একটি অমুল্য সম্পদ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি, এটাই অনেক। ভবিষ্যতে কী হবে সেটা দেখা যাবে।
ছাপা অক্ষরে অনেক বই ইতিমধ্যে লিখেছেন। নতুন কিছু...
৩৫-৩৬টা বই লিখে ফেলেছি। বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম গায়ক হবার জন্য। লেখক হব ভাবিনি। বাংলা থিয়েটারের গান নিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে একটা বই বেরচ্ছে। যার সম্পাদনা করেছেন প্রয়াত সব্যসাচী ভট্টাচার্য। পুরো বঙ্গদেশ নিয়ে তিন ভল্যুমের কাজ চলছে। এটা পরম প্রাপ্তি।
২৪ আগস্ট শহরে আপনার একক অনুষ্ঠান...
নাম দিয়েছি ‘আলোছায়া’। মঞ্চ মানেই তো আলো আর ছায়ার খেলা। মোমবাতির আলো হোক বা হ্যাজাক কিংবা বিদ্যুতের আলো। সেখানেই বিষয়ের পরিবর্তন হয়, চরিত্রের পরিবর্তন হয়। অনেকদিন পর একক অনুষ্ঠান করছি। আদি বিদ্যাসুন্দর থেকে বিশ শতক পর্যন্ত অর্থাৎ দুশো বছরের কোলাজ। উপস্থাপনায় ঋদ্ধি (স্ত্রী) থাকছে।
কেরিয়ারের এই ৪০ বছরে কী কী শিখলেন?
শিখলাম, সৎপথে থাকলে ভাত ডালের অভাব হয় না। শিখলাম, যদি সৎভাবে কোনও কাজকে ভালোবেসে থাকি, সে আমার কাঁধে হাত রাখবে। বিষয় হোক, ভাবনা হোক, ভালোবাসা আমি অনেক পেয়েছি। এমন অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, তাতে আমার প্রাপ্তির হার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। থিয়েটারের গানের প্রশ্ন উঠলে একবার আমার কথা ভাববে। এটা অনেক মূল্যবান। শুধু এপার বাংলা নয়, রয়েছে ওপার বাংলার মঞ্চ গান। ওরা আমাদের সাদরে নিয়ে যায়। গতবছর আমার কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে মোহিত চৌধুরী সম্মানে সম্মানিত হয়েছি। এদেশে স্কলারশিপ, ফেলোশিপ পেয়েছি কিন্তু কাজের জন্য কোনও সম্মান পাইনি।
তার জন্য ক্ষোভ
কিছু নেই। এখন এমনভাবে সম্মান দেওয়া হয়, যা দেখে মাঝেমাঝে মনে ক্ষোভ জাগে।
নাট্যগবেষক, সঙ্গীতশিল্পী না হলে কী হতেন?
কিছুই হতাম না। পথে পথে ঘুরে বেড়াতাম।
অপর্ণা তাঁতী