ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
‘তখন ১৯৭৯ সাল। সবে ডাক্তারি পাশ করেছি। বীরভূমে সিউড়ির কাছে একটা গ্রামের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে পোস্টিং হল। একাই থাকতাম একাই দু’মুঠো ফুটিয়ে খেতাম। একদিন দুপুরে খেতে বসেছি। হঠাত্ একটা গোলমালের আওয়াজ কানে এল। আমি কৌতূহলী হয়ে হইচইয়ের উৎসের সন্ধানে এগিয়ে যেতেই দেখলাম আমাদের সাফাইকর্মী মহাদেব খালি গায়ে, লুঙ্গি পরে একটা শিশুকে পা ধরে উল্টে তাকে ঘোরাতে ঘোরাতে নিয়ে আসছে! দেখলাম বাচ্চাটা মৃতপ্রায়! একরত্তিকে বারান্দাতেই শোওয়ানো হল। পরীক্ষা করে বুঝতে পারলাম এখনই কিছু করা দরকার। এদিকে হাতের কাছে এমার্জেন্সি চিকিত্সা চালু করার কোনও ব্যবস্থা নেই। মহাদেব বলল, ‘পুকুরের জলে ডুবে গেছল। দ্যাখেন ক্যানে, লতার মতো হয়্যে গ্যেছে!’ আমি সিপিআর শুরু করলাম। আশ্চর্যজনকভাবে, বাচ্চাটা খুব ভালোভাবে সাড়া দিল। বাচ্চাটার জ্ঞান ফিরে এল! পাশের বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে একটা চিঠি লিখে দিলাম। কী কী করা হয়েছে তাও লিখে দিয়ে দিলাম একটা কাগজে!
গ্রামের লোক বড় হাসপাতালে গিয়ে বলেছিল, গ্রামের ডাক্তারবাবু বাচ্চাটার মুখে মুখ দিয়ে জল টেনে নিয়েছে! তাতেই খুদেটা বেঁচে গিয়েছে! আসলে দিয়েছিলাম মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং। সেটাকেই ওরা ওভাবে ব্যাখ্যা করেছিল! ঘটনাটি যে মিরাকল এমন নয়। তবে ঘটনাটি হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। আন্তরিক প্রচেষ্টার ফল! তাই এখনও তাই ঘটনাটি শিকড় গেড়ে রয়ে গিয়েছে মনের অন্তঃস্থলে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র জানালেন তাঁর অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা। তখন সবে তিনি এমডি পাশ করেছেন। ‘১৭-১৮ বছর আগের কথা হবে। গ্রাম থেকে একটি ছেলে এল। একটানা জ্বরের সমস্যায় ভুগছে। টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, অন্যান্য সংক্রমণ...সব টেস্ট হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট নর্মাল! ছেলেটির শারীরিক পরিস্থিতিও ঠিকঠাক। অথচ রোজ জ্বর আসছে! আগেও কয়েকজন চিকিত্সকের পরামর্শ ওরা নিয়েছেন। তা সত্ত্বেও জ্বর নামতে চাইছে না। প্রাণঘাতী জটিল রোগ নয়তো? নানারকম অ্যান্টিবায়োটিক চলছে একটানা... ভাবতে ভাবতে হঠাত্ মনে এল, চিকিত্সাবিজ্ঞানে ড্রাগ ফিভার বলে একটা বিষয় আছে। বললাম সব ওষুধ বন্ধ করে দিতে। শুধু খান মাল্টিভিটামিন। দেখা গেল অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করতেই জ্বর আর এল না!
আরও একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। একটি বাচ্চা গ্রাম থেকে এসেছে। একটানা পেটে ব্যথা। এন্ডোস্কোপি, কোলনোস্কোপি হয়েছে। কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। স্টুল টেস্ট হয়েছে। রিপোর্ট নর্মাল। তবে স্টুল টেস্টের নিয়ম হল, একটানা তিনদিন করাতে হয়। তাই রোগীর অভিভাবকে বললাম একটানা তিনদিন স্টুল টেস্ট করাতে। ওঁরা ভাবলেন বাড়তি টেস্ট করাতে চাইছি...টেস্ট করাতে দোনামনা করছেন দেখে আমি বললাম ঠিক আছে। বরং ওকে কৃমির ওষুধ খাওয়ান। তাতেও না কমলে তখন স্টুল টেস্ট করিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। কারণ প্রান্তিক এলাকা থেকে কোনও বাচ্চা পেটের সমস্যা নিয়ে এলে প্রথমে কৃমির ওষুধ দেওয়াটাই রীতি। আশ্চর্যভাবে শুধু কৃমির ওষুধ খেয়েই শিশুটি সেরে গেল! সেও এক শিক্ষা হল যে, রোগ সারাতে সবসময় দামি পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনই নেই। শুধু নিয়ম মেনে ওষুধ দিলেই কাজ হয়ে যায় অনেকক্ষেত্রেই!
আরও একটা ঘটনার কথা বলি। তখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেজিস্ট্রার আমি। ডাঃ সুব্রত মৈত্রের অধীনে এক চিকিত্সক ভরতি ছিলেন। একটানা চেস্ট-এ নিউমোনিয়ার সমস্যা! এত ওষুধ চলছে, তাতেও সারছে না! একদিন কথায় কথায় রোগীর স্ত্রী জানালেন, ওঁদের বাড়িতে প্রচুর পায়রা আছে! শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় এল, পায়রার পালক থেকে একধরনের নিউমোনিয়া হয়। প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক যা সারার কথা নয়। ওষুধ চেঞ্জ করতেই মিলল সুফল! আমিও বুঝলাম রোগীর সঙ্গে কেন আরও বেশি করে কথা বলা দরকার!’