প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
অফিসে ঢোকার আগেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সুতনুর। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে কাল বিকেলে একটা পোস্ট করেছিল ফেসবুকে। আজ সকালের মধ্যে মুহুর্মুহু আক্রমণ আর নানা কুকথা।
বরের জন্মদিনে অনেক কিছু রান্না করে শর্মিলা ছবি দিয়েছিল ফেসবুকে। এই আকালে এত খাবার প্রদর্শন করে পোস্ট, অর্থের অপচয় সংক্রান্ত বিভিন্ন মতামত আসতে শুরু করল কমেন্ট বক্সে।
ইউটিউবার সুহানা নতুন ভিডিও আপলোড করেছিল ওর পেজ-এ। হঠাত্ শুরু হল কুকথার বন্যা। ভিডিওর স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে অভিনয় সব নিয়েই কিছু নেটিজেনের বিরূপ মতবাদে ভরে উঠল কমেন্ট বক্স।
একসময় এই কুকথা বা বিরূপ মতবাদ টুকটাক চালু ছিল রাস্তাঘাটে, আত্মীয়স্বজনের মহলে। কিন্তু বর্তমানে তো উঠে এসেছে ব্যক্তিগত পরিসর ছাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে একেবারে চিনি না জানি না এমন নানা ব্যক্তি এসেও খারাপ মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আর তো চলছে নিরন্তর। তাদের উত্তর দিতে গিয়ে কথার পিঠে কথা বাড়ছে। ফলে কাজ শিকেয়। মনের অবস্থার দফারফা। এমনকী আত্মহত্যাপ্রবণ হ্যাঁ উঠছেন কেউ কেউ।
কারা ট্রোলার
ট্রোল কারা করে, কেন করে? এ নিয়ে গবেষণাও চলছে। আজকাল। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ট্রোলারদের মধ্যে সাইকোপ্যাথ বা স্যাডিস্ট (অন্যকে দুঃখ পেতে দেখে আনন্দ পান) মানসিকতার মানুষ বেশি। নারী-পুরুষ যে সমান তালে ট্রোল করেন। এমনকী, গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু যে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর লোকজনই বাইরের আর পাঁচজনকে হেয় করার মানসিকতা ঠেকে বেশি ট্রোল করেন। মনে করা হয়, যাঁরা ট্রোল করেন তাদের মনে সহমর্মিতা ও অন্যকে বোঝার ক্ষমতা কম। ইমোশনাল কোশেন্ট বা ইকিউ-এর পরিমাণ কম।
ট্রোল বেশি প্রভাবিত করে কাদের?
দুর্বল মানসিকতা, নিজেকে নিয়ে মেতে থাকা মানসিকতা, প্রবল আত্মসম্মানবোধ, ইগোইস্ট মানুষ ট্রোলের শিকার হলে বেশি সমস্যাগ্রস্ত হন।
ট্রোল কী কী ক্ষতি করে
মনোযোগ কমে: ট্রোলের অন্যতম বড় প্রভাব পড়ে একাগ্রতা ও মনঃসংযোগে। অচেনা ব্যক্তির রুচিহীন আক্রমণ পরপর ধেয়ে এলে এমন বিক্ষিপ্ত হয়। যতক্ষণ না সেই পাল্টা উত্তর দেওয়া যাচ্ছে, তার জের চলতেই থাকে। আর সোশ্যাল সাইটে যেহেতু মন্তব্যের কোনও সময়সীমা থাকে না, তাই দেখা যায় একই পোস্টের মন্তব্য চলতেই থাকে অবিরাম। কাজের ফাঁকে মন ছুটে যায় সেই মন্তব্যগুলোর দিকে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবার সোশ্যাল সাইট খুলে সেসব মন্তব্য দেখতে থাকে মানুষ। এগুলোতে মনের ক্ষতি যেমন হয়, মনোযোগেও সমস্যা হয়।
মানসিক কুণ্ঠা বাড়ে: নিজের ইমেজ নিয়ে অত্যধিক সচেতন মানুষদের বেলায় ট্রোলের থাবা মারাত্মক। নিজের অভিব্যক্তির সহজ প্রকাশ আর করতে পারেন না। ফলে খুব হইচই করা একজন মানুষ হয়তো ট্রোলের প্রভাবে ব্যক্তিত্ব বদলে একজন কুণ্ঠিত, গুটিয়ে যাওয়া মানুষে পরিণত হন কেউ কেউ। এমনও দেখা গিয়েছে নিজের ইমেজ সোশ্যাল সাইটে নষ্ট হয়েছে বলে অনেকে আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিয়েছেন।
সম্পর্ক নষ্ট: কখনও কখনও আত্মীয়, বন্ধু-সহকর্মীদের পক্ষ থেকেও সোশ্যাল সাইটে কুমন্তব্য ভেসে আসে। নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক মতভেদে আক্রমণাত্বক হয়ে উঠতে পারেন খুব কাছের পরিচিতরাও। সোশ্যাল সাইটে তাঁরা হয়তো তাঁদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে বসে ও আপনার ‘খুঁত’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর বাসনায় স্থান কাল পাত্র ভুলে সমালোচনা শুরু করলেন বা তির্যক মন্তব্য করে ট্রোল করলেন। একটি সাধারণ মতান্তর দীর্ঘ ভালো সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমেজ নষ্ট হয়েছে বা অকারণে চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছেন এমন কারণে বহু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। একটা সময় ছিল যখন সামাজিক দিক থেকে মানুষকে একঘরে করে দেওয়ার প্রবণতা ছিল সমাজের দণ্ডমুণ্ডের ধারকবাহকদের। এখন সেই অভ্যেসের প্রচলন ঘটেছে সামাজিক মাধ্যমে। একজনকে ক্রমাগত আক্রমণ করতে করতে তার ধৈর্য ও সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করিয়ে দেওয়াই এক শ্রেণির ট্রোলারদের কাজ। মিম বানিয়ে, আপত্তিজনক ভিডিও ও মন্তব্য শেয়ার করে কোণঠাসা করাই তাঁদের কাজ। আর তাতে লজ্জা মানসিক বিক্ষেপ ভেঙে নিজেকে শেষ করার পথে হাঁটেন কেউ কেউ।
ট্রোল সামলানোর উপায়
নিজেকে সকলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে জাহির করার প্রয়োজন নেই। লোকের কথা গায়ে না মাখাই এর সর্বোত্তম উপায়। নিজের সম্মান, নিজের ইমেজ নিজের কাছে ভালো রাখুন। খুব নিজের মানুষদের কাছে সেই ইমেজ আজীবনের হয়ে থাক। বাইরের মানুষ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা নেই।
উপেক্ষা করুন কিছু বিষয়। বিতর্কিত বিষয় নিয়ে পোস্ট করলে বা মন্তব্য করলে ট্রোল হতে পারে, এই প্রস্তুতি রাখুন। এতে ট্রোলের উত্তর দেওয়া সহজ হবে ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা যাবে।
হাল্কা চালে নিন ট্রোলারদের। নিজের সেন্স অব হিউমার বেশি থাকলে রসিকতা করুন তাদের মন্তব্য নিয়েই। তবে সেটা যেন শালীন হয়। নইলে পাল্টা বিতর্ক ডেকে আনবেন। হাল্কা মেজাজে রসিকতা করলে একটা সময় ট্রোল করছেন যাঁরা, তাঁরাও ক্লান্ত বোধ করবেন ও স্নায়ু যুদ্ধে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে ও নিজে ট্রোলারের রুচিতে নামতে পারবেন না বা অকারণে অসম্মান করছেন মনে হলে নিজের যুক্তি জানিয়ে তাঁদের ব্লক করতে পারেন। আজকাল মেটা (ফেসবুক) এমন অনেক সুযোগ দেয় যেখানে ‘কমেন্ট রেস্ট্রিক্ট’ করে রাখা যায়। অর্থাৎ কেউ চাইলেই ওই পোস্টে কমেন্ট করতে পারবেন না। কমেন্ট সেকশন বন্ধ করেও রাখা যায়। সেগুলো অবলম্বন করতে পারেন।
পরিস্থিতি খুব খারাপ দিকে গেলে সাইবার ক্রাইম দপ্তরের সাহায্য নিতে পারেন।