প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
অনশন কখন উদ্বেগের?
মোটামুটি তিনদিন অনশন করে অনেকে থাকতে পারেন। তবে এই সময়ের পরেই শরীরে নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।প্রথম ২-৩ দিনে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। পেশির জোর কমতে থাকে। শরীরে কোনও ক্ষত তৈরি হলে সারতে চায় না। ধীরে ধরে শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়। ডায়ারিয়া দেখা দেয়। মাথা ঘোরে, হার্ট রেট কমে যায়। শরীর তার কাজ চালানোর জন্য শরীরের পেশি ও লিভারে জমে থাকা শর্করার উত্সগুলিকে ভাঙতে থাকে। ধীরে ধীরে জমে থাকা শর্করা শেষ হয়ে গেলে তখন শরীর কাজ চালানোর জন্য ফ্যাটি অ্যাসিডে হাত দেয়। ফ্যাটি অ্যাসিড ভাঙলে শরীরে তৈরি হয় কিটোন বডি। অল্প মাত্রায় কিটোনবডি শরীরের পক্ষে সহনীয়। তবে মাত্রা বেশি হয়ে গেলেই অ্যাসিডোসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। ওদিকে ব্রেন তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র গ্লুকোজই ব্যবহার করতে সক্ষম। বড়জোর খুব বিপদের সময় সামান্য মাত্রায় কিটোন ব্যবহার করতে পারে। ফলে অনশন বেশিদিন চালিয়ে গেলে গ্লুকোজের অভাবে ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। এছাড়া শরীরে নানা খনিজ ও ভিটামিন বি১-এর ঘাটতির ফলে স্নায়ুজনিত জটিলতা তৈরি হতে থাকে।
একসময় অন্যান্য ফ্যাটের উত্সও যখন শেষ হয়ে যায় তখন শরীরের পেশিগুলি থেকে প্রোটিন ভাঙতে থাকে। এভাবে সারা শরীরের কাঠামোটাই ভয়ঙ্কররকমভাবে নড়বড়ে হয়ে যায়। এই ধরনের উপাদানের বিপাকক্রিয়ায় শরীরে ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বাড়ে বিপজ্জনকভাবে। কিডনি এবং লিভারের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ধীরে ধীরে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি অকেজো হতে থাকে। একসময় অর্গ্যান ফেলিওরের কারণে প্রাণহানিও ঘটে।
উপোস কখন চিন্তার
বিএমআই ঠিকঠাক এবং অন্য কোনও অসুস্থতা না থাকলে নিয়ম মেনে উপোস করতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা, হার্টের অসুখ নিয়ে উপোস করতে শুরু করলে যে কোনও সময় বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। অনেক সময় শরীরে কিছু কিছু অসুখ লুকিয়ে থাকে। উপোস শুরু করলেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। সুগার ফল করতে পারে যে কোনও সময়। অন্যান্য রোগগুলি মাথাচাড়া দিতে পারে। হঠাত্ করে প্রাণহানির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উপোসের সুফলও আছে
ওজন হ্রাস: ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ওজন কমায়। আবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও কমায়। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। হার্টের স্বাস্থ্য: ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কমাতে পারে ব্লাড প্রেশার, হার্ট রেট, রক্তে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস-এর মাত্রা। ফলে হার্টের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
ব্রেন পাওয়ার: অন্য প্রাণীর উপর করা কিছু সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং স্নায়ুকোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কমায় অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসনস, স্ট্রোকের আশঙ্কাও।
অটোফেজি প্রক্রিয়া: শরীরের কোষে অবিরাম কাজ চালিয়ে যায়। এর ফলে নানা ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ জমা হয় কোষে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে কোষ এই ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থকে শরীর থেকে বের করার সময় পায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটোফেজি।
কীভাবে করবেন
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং—এর নীতি দাঁড়িয়ে আছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নিয়মের উপর। এই হিসেবে খাদ্যগ্রহণের প্রকৃত সময় হল সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যের সময়টুকু। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সময়টা বিশ্রামের। তখন খাদ্যগ্রহণ উচিত নয়। এই প্রক্রিয়ায় সারাদিন অভুক্ত থাকতে হয় না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ বা ১৬ ঘণ্টা উপোস চলে। ১৬ ঘণ্টার হিসেব ধরা ১৬: ৮ এই অনুপাতে। অর্থাত্ সকাল ৯টা সময় একজন ব্যক্তি খাদ্যগ্রহণ করলে তিনি পরবর্তী খাবার খাবেন বিকেল ৫টায়। এক্ষেত্রে দু’টি খাদ্যগ্রহণের রুটিনের মধ্যে মোট ৮ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে। এরপর তিনি আর খাবার খাবেন না। খাদ্যগ্রহণ করবেন পরদিন সকাল ৯টায়।
উল্লেখ্য, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এ ১৬:৮ নীতি অনেকে মেনে চলতে পারেন না। ১৪:১০ নীতিতেও ফাস্টিং করা যায়। এক্ষেত্রে ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে খাবার খেয়ে বাকি ১৪ ঘণ্টা উপোস করতে হয়। ৭:১ অনুপাতে এক সপ্তাহের হিসেবেও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা যায়। এক্ষেত্রে সারা সপ্তাহের মধ্যে একদিন পুরোপুরি উপোস করা যায়। আবার পাঁচদিন স্বাভাবিক খাবার খেয়ে দু’দিন সম্পূর্ণ উপোস করেও থাকা যায়। আমাদের মা-ঠাকুমারা এভাবেই উপোস করতেন। তবে হ্যাঁ, নিয়ম মেনে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং না করলে বিপদ আছে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক বা পুষ্টিবিদ অথবা ডায়েটিশিয়ানের তত্ত্বাবধানেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং চালাতে হবে। এছাড়া খাদ্যগ্রহণের সময় ক্যালোরির প্রতিও রাখতে হবে খেয়াল। অর্থাত্ সারাদিনে দু’বার খাবার খাওয়া হচ্ছে বলে একসঙ্গে অনেকখানি তেল মশলা দেওয়া খাবার খেয়ে ফেললে চলবে না। তাতে লাভ হবে না। পাশাপাশি করতে হবে এক্সারসাইজ।