প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
মাছ একটি প্রোটিন প্রধান খাদ্য, কিন্তু মাংসের থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর। এতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রোটিন ছাড়াও পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, লোহা, ফ্লোরাইড ইত্যাদি নানা ধরনের খনিজ লবণ থাকে। কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব সামান্য পরিমাণে, দুই থেকে আট গ্রামের মতো। ইলিশ মাছ(১৯ শতাংশ) বাদে সব মাছে ফ্যাট থাকে সামান্যই। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিনও থাকে। ১০০ গ্রাম মাছ থেকে শক্তি পাওয়া যায় ৭৫ থেকে ২৭৫ কিলো ক্যালরি। ছোট মাছে কম ক্যালরি মেলে। সবথেকে বেশি ক্যালরি পাওয়া যায় ইলিশ মাছ থেকে,প্রতি ১০০ গ্রামে ২৭৩ কিলো ক্যালরি।
শুঁটকি মাছ মানে কিন্তু নষ্ট হয়ে যাওয়া মাছ নয়। এ হল তাজা মাছে নুন মাখিয়ে কড়া রোদে শুকনো মাছ। কাজেই এতে মাছের সব পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন থাকারই কথা এবং ভালো করে শুকোনো হলে খুব বেশি গন্ধ থাকারও কথা নয়। তবে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এতে নানা বিপত্তি দেখা দেয়। মাছ গেঁজিয়ে উঠে জীবাণু সংক্রমণও হয়। তাছাড়া শুঁটকি মাছকে মুখরোচক করতে যে পরিমাণ তেল ঝাল মশলা এতে দেওয়া হয়, তাতে রসনা পরিতৃপ্ত হলেও, শরীরের পক্ষে সেগুলো ভালো নয়।
তবে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে শুঁটকির মত পুষ্টিকর খাদ্য খুব কমই আছে। এর থেকে আশি শতাংশ প্রোটিন পাওয়া যায়, অর্থাৎ সাধারণ মাছের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি। থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,যা দেহকোষের ক্ষয়রোধ করে এবং আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাওয়া যায় প্রচুর সোডিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নার্ভ ও পেশির স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য দরকার। ফসফরাসের পরিমাণও শুঁটকিতে অনেক বেশি থাকে। আমাদের হাড় এবং দাঁতের গঠনের জন্য ফসফরাস অবশ্যই দরকার, দরকার মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্যও। সেলিনিয়াম নামক আরেকটি জৈব উপাদান শুঁটকিতে প্রচুর পাওয়া যায়। দেহ কোষের ক্ষয় আটকাতে এবং প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম তৈরি করতে এরা সাহায্য করে। বিশেষ ধরনের ভিটামিন নিয়াসিন শুঁটকিতে পাওয়া যায়,যা আমাদের নার্ভ এবং হজমের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, ত্বকেও পুষ্টি যোগায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ শুঁটকিতে কম থাকে। এক কথায় সাধারণ মাছের তুলনায় শুঁটকিতে প্রোটিন, বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ভিটামিন খুব বেশি পরিমাণে থাকে।
নানা ধরনের মাছের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি লইট্যা, টেংরা, ভোলা ,খয়রা,নোনা ইলিশ শুঁটকিতে বেশি ব্যবহার হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ তো আছেই। এই রাজ্যের মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় বহু জায়গায় শুঁটকি মাছের বহু উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি শুধু এই রাজ্যে নয়,প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশও চালান হয়।
১০০ গ্রাম লইট্যা মাছের শুঁটকিতে প্রোটিন থাকে ৬১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ১৭৮১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৪০ মিলিগ্রাম, লোহা ২০ মিলিগ্রাম এবং শক্তি মেলে ২৯৫ কিলো ক্যালোরি। ১০০ গ্রাম কুচো চিংড়ি থেকে প্রোটিন মেলে ৬২.৫ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৩৫৩৯ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৫৪ মিলিগ্রাম, লোহা ২৮ গ্রাম এবং শক্তি মেলে ২৯২ কিলো ক্যালোরি। কাজেই শুঁটকি মোটেও ফেলনা খাবার নয়। সপ্তাহে একদিন আপনার খাবার পাতে শুঁটকি মাছ রাখতেই পারেন। একবার ভালোবেসে ফেললে সারা বছর ধরেই খেতে ইচ্ছে করবে। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ বা কোনও জটিল অসুখে ভুগছেন, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শুঁটকি মাছ খাবেন।