গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে। ... বিশদ
সবে হাঁটতে শিখেছে ঋজুল। মা, বাবা অফিসে বেরিয়ে গেলে ঠাকুরমার কাছে থাকে। সঙ্গে সাহায্যকারী পেশাদার আয়াও রয়েছেন। কোনও কিছু অপছন্দ হলেই হাতের জিনিস ছুড়ে ফেলার অভ্যেস তৈরি হয়েছে ঋজুলের। সে কোনও খেলনা হোক অথবা টিভির রিমোট। এই অভ্যেস দেখে ঠাকুরমা বলেন, ঋজুলের নাকি তার দাদুর মতো মেজাজ হয়েছে। বেশ গর্ব করে বলেন, এ বংশের সকলেই মেজাজি।
পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া রাইয়ের নাকি খুব রাগ। তা রেগে গেলে মেয়ে করে কী? রাইয়ের মা এক নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়ে গল্প করছিলেন, রেগে গেলে মেয়ে নাকি প্রথমে চিৎকার করে। তারপর কেঁদে ফেলে। তাকে তখন শান্ত করে কার সাধ্য!
রাই বা ঋজুলের মতো মেজাজি, রাগী বাচ্চাদের পেশাসূত্রে প্রায়শই সামলান মনোবিদ ডাঃ রীমা মুখোপাধ্যায়। সামলান এই ধরনের সন্তানের বাবা, মায়েদেরও। কিন্তু এত ছোট বয়সে রাগ, মেজাজ হয় কীভাবে? এসব থেকে বাচ্চাদেরও কি টেনশন হয়? বাবা, মা সন্তানের রাগের কারণ অনুসন্ধান কীভাবে করবেন? কীভাবেই বা সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব?
বড়রা রোল মডেল
যে কোনও সমস্যার সমাধানে প্রথম কাজ হল কারণ অনুসন্ধান। এক্ষেত্রেও বাচ্চার মেজাজের কারণ অনুসন্ধান করার কথা আমি প্রথম বলব। নানা কারণে বাচ্চার মেজাজ হতে পারে। প্রথম হল বাড়ির পরিবেশ। বাড়ির সদস্যরা যদি নানা কারণে টেনশন করেন, মেজাজ দেখান, চিৎকার করেন, তাহলে বাচ্চা সেটাই শেখে। ধীরে ধীরে সেটাই রপ্ত করে। বাচ্চা কেন মেজাজ দেখাচ্ছে, জিনিস ছুড়ে ফেলছে, মারধর করছে জানতে হলে তার মূল কারণটা বুঝতে হবে। জানতে হবে বাড়ির কেউ যখন টেনশন করেন, তখন এমন আচরণ করেন কি না। এসব ক্ষেত্রে আমরা বলি, বাড়ির সেই মানুষটিরও সাহায্য দরকার। তাঁর টেনশন বাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে কি না, সেটা মাথায় রাখা দরকার। বড়রাই তো রোল মডেল।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ
একটা বাচ্চা যদি ছোট থেকে দেখা যায়, মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পেয়ে বড় হচ্ছে, তার কিন্তু মেজাজ কম হবে। তারপরও কোনও কারণে সে রেগে যেতে পারে অথবা কাঁদতে পারে। কান্নারও অনেক রকমফের আছে। অনেক সময় বাচ্চা এমনভাবে কাঁদে, তাতে অন্যরাও বিরক্ত হন। এই কান্নারও কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এখানে মায়েদের ভূমিকাই বেশি। বাচ্চার কোন কান্নার কী কারণ, তা তাঁরা বলতে পারেন। ছোট ছোট জিনিস পর্যবেক্ষণ করে মায়েদের এই বোঝার ক্ষমতাটা তৈরি হয়। কোন কান্নাটা রাগের, কোনটা খিদের সেটা মায়েরা বুঝতে পারেন। হয়তো অন্য কারও কোনও আচরণ বাচ্চার পছন্দ হয়নি, সেজন্য কাঁদছে। হয়তো কেউ জোর গলায় কিছু বলছেন। অথবা সেদিন হয়তো দেখা গেল বাইরে খুব আওয়াজ হচ্ছে। ফলে বাড়ির পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও বাইরের কোনও কারণে বাচ্চার মেজাজ তৈরি হতে পারে।
ভুল অনুমান
আমরা অনুমান করি, বাচ্চারা কিছু বোঝে না। ‘ওইটুকু বাচ্চা কী বুঝবে’, এটা আমরা প্রায়শই বলি। এটা ভুল ধারণা। আজকাল নিউক্লিয়ার পরিবারে বাচ্চার সঙ্গে শুধুমাত্র বাবা, মা থাকেন। তাঁদের মধ্যে যখন অশান্তি হয় তার প্রভাব বাচ্চার উপর পরে। রাগের মুহূর্তে বাবা, মা খেয়াল করছেন না তাঁদের চিৎকার বাচ্চার অসুবিধের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনকী গলার স্বর শুনেও বাচ্চার মেজাজ তৈরি হতে পারে। হয়তো বাচ্চাটাকে নিয়েই কিছু বলা হচ্ছে। যে স্বরে ওর সামনে আলোচনা হচ্ছে, তাতে বাচ্চার কোথাও একটা অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেটাই রাগের, মেজাজ হারিয়ে ফেলার কারণ হতে পারে। আগে যৌথ পরিবারেও অনেক চিৎকার হতো। আবার কিছু লোক থাকত, যারা বাচ্চাটাকে ওই অশান্তির জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেত। বাচ্চাটা হয়তো ঠাকুরমার ঘরে গিয়ে বসে থাকত। অথবা কাকা বাচ্চাটিকে নিয়ে পাড়ায় বেড়াতে চলে যেতেন। এভাবে মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো যেত। এখন বাচ্চার পালিয়ে যাওয়ার জায়গা নেই। সেটা ওকে টেনশনে ফেলছে। বাবা, মায়ের চিৎকার দেখে ছোট থেকেই বাচ্চাটি নিজেও চিৎকার করতে শিখছে। ফলে পরিবেশ, চারপাশের মানুষ কী বলছেন, বাচ্চার জন্য সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
দেখার বিপদ
অনেক সময় বড়দের সুবিধের জন্য বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগে টিভি চালিয়ে দেওয়া হতো। সন্তান মোবাইলে কী দেখছে, সেটাও সবসময় ভালো করে খেয়াল করা হয় না। সে হয়তো হিংসাত্মক কিছু দেখছে। এমন কোনও অনুষ্ঠান দেখছে যেখানে চিৎকার আছে, কোনও ভয়ের জিনিস আছে, যেটা দেখে বাচ্চাটি উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। বাবা, মা সেটা শনাক্ত করতে পারছেন না। কোন জিনিসটা বাচ্চাকে ট্রিগার করছে, সেটা বুঝতে না পারার কারণে সমস্যাটিকে সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আপনার সন্তান কী দেখছে, তা নজরে না রাখলে বিপদ বাড়বে।
ধৈর্যের অভাব
বাবা, মাকে অসীম ধৈর্যশীল হতে হবে। বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সেটা সম্ভব হয় না। হয়তো আপনার বাচ্চা কোনও দোষ করেছে। তাকে নিয়মানুবর্তী করা দরকার। কিন্তু কীভাবে তাকে আমরা নিয়মানুবর্তী করছি? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা, মায়েরা বলেন সারা দিন কাজের শেষে বাড়ি ফিরে তাঁরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে বাচ্চার উপর চিৎকার করে ফেলছেন। খুব ছোট কারণে অনেক বেশি রাগ দেখিয়ে ফেলছেন। এতে বাচ্চার টেনশন বাড়ছে। বাচ্চা শিখছে, ছোট জিনিসে সেও চিৎকার করতে পারে। ধরুন, আপনার ছেলে বা মেয়ে স্কুলের পরীক্ষায় হয়তো কম নম্বর পেয়েছে। অথবা শিক্ষক বলেছেন, ক্লাসে সে বেশি কথা বলে। এগুলো সামান্য জিনিস। কিন্তু সেটা নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড করা হয়। হয়তো বাবা মাকে ফোন করে বললেন, অথবা উল্টোটা। আসলে এখন তো বাড়িতে একটা করেই বাচ্চা। সামান্য জিনিসে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শিক্ষকরাও খুব সহজে বাবা, মাকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। সহজে অভিযোগ জানাতে পারেন। অনেক বাবা, মা আবার প্রতিদিন স্কুলের রুটিন শুনতেও চান। ফলে অনেক সময় তুচ্ছ কারণে বাচ্চাকে অতিরিক্ত মাত্রায় বকুনি দেওয়া হয়। সেটাও বাচ্চাকে টেনশনে ফেলতে পারে।
গ্রহণযোগ্যতার অভাব
এবার আরও একটু খতিয়ে দেখা যাক। এই ঘটনা কারও বাড়িতে ঘটলে, সেটা কিন্তু বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। বর্তমানে সন্তান জন্মানোর পর থেকেই তার উপর প্রচুর চাহিদা তৈরি হয়। যে কোনও কারণেই সে চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে। বাচ্চার চেহারা, রং, ওজন, চোখ, নাকের গঠন, তার অর্জিত সাফল্য— যে কোনও দিক থেকে সেই চাহিদা তৈরি হতে পারে। সন্তানের কোনও কিছু যদি আমার মনের মতো না হয়, আমি যদি ভাবি, আমি তো এরকম চেয়েছিলাম, তা তো পেলাম না। এর থেকে বড় ক্ষতি আর কিছুতে নেই। বাবা, মায়ের এধরনের আচরণ বাচ্চাটাকে ছোট থেকে বুঝিয়ে দেয়, যেটা ওঁরা চেয়েছিলেন, সে সেটা নয়। এতে খুব ছোট থেকে ও ভাববে আমি তো গ্রহণযোগ্যই নই। অনেক বাচ্চা আমাকে বলে ‘বাবা, মা আমাকে ভালোবাসে না।’ কেন ভালোবাসে না? বাচ্চাদের বোঝানোর সেই ভাষাটা নেই। ওরা বলতে পারে না, আমি যেরকম, সেরকমটা নিয়ে আমার বাবা, মা খুশি নয়। আমাকে বাবা, মা অন্যদের সঙ্গে তুলনা করছে। এই দুঃখটাই ধীরে ধীরে রাগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে তা ব্যবহারিক সমস্যারও কারণ হতে পারে।
স্কুলের ভূমিকা
স্কুলেও আপনার সন্তানের একই সমস্যা হতে পারে। কেউ হয়তো তাকে ‘বুলি’ করছে। ‘টিজ’ করছে, খ্যাপাচ্ছে। কেউ মারধোর করেছে। সেটার উপর হয়তো যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এতে তো ওদের কষ্ট হয়। বাচ্চারা খুব অনুভূতিপ্রবণ। ওদের বোঝাতে হবে, এগুলো তো হবেই। প্রত্যেকটা বাচ্চার জীবনে এগুলো হয়। হওয়াটা অন্যায় নয়। আসলে বাচ্চাটা সহানুভূতি ছাড়া কিছুই চাইছে না। হয়তো মা বলল, ‘তোমাকে এমন করেছে, এমন হলে তো কষ্ট পাওয়ারই কথা। তোমাকে কেউ মারলে তোমার দুঃখ পাওয়ার কথা, রাগ তো হওয়ারই কথা।’ অর্থাৎ আমরা তার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করছি। গুরুত্ব দিচ্ছি। যদি আমরা বলি, ‘তুমি উল্টে একটা থাপ্পড় মারলে না কেন?’ এতে বাচ্চার মনে হবে, আমার সমস্যা নিয়ে যদি কথা বলি, তাহলে উল্টে আমাকে আরও কথা শুনতে হবে। আমার দুঃখটা তো কমল না। সেটা আরও বেড়ে গেল। অনেক বাবা, মা বলেন, বাচ্চা বাড়িতে কিছুই বলতে চায় না। কেন বলতে চায় না? কারণ সেটা বলতে গেলে যে প্রতিক্রিয়া হবে, ও সেটা চায় না। ও যে প্রতিক্রিয়া আশা করছে, সেটা ও পাচ্ছে না। ফলে ও তো বলবে না। এর ফলে ধীরে ধীরে বাচ্চারা মিথ্যে বলতে শুরু করে। সত্যি বললে তারা বকুনি খায়। ভাবে, মিথ্যে বললে ধরা পড়বে না। সেটা থেকে আবার একটা রাগ, টেনশনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মিথ্যে বলার অভ্যেস
বাচ্চাদের মধ্যে কখনও কখনও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বাবা, মা শেখান ‘বিয়েবাড়ি গিয়েছিলি বলে স্কুলে যেতে পারিসনি, সেটা স্কুলে গিয়ে বলিস না।’ এই বাবা, মা-ই আবার বলেন, বাচ্চা তো কথায় কথায় মিথ্যে কথা বলে। ও এসব স্কুলে গিয়ে শিখছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে বাচ্চা বিভ্রান্ত হতে পারে। আদতে ওর কী বলার, সেটা বুঝতে পারে না।
ভাষার ব্যবহার
বাড়িতে সারাক্ষণ ঝগড়া কিন্তু সন্তানের জন্য একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। বাবা, মায়ের বিচ্ছেদও ওদের খুব ভাবিয়ে তোলে। কথায় কথায় যদি বাবা বা মায়ের কাছ থেকে বাচ্চা শোনে, ‘আমি এবার ডিভোর্স করে বেরিয়ে চলে যাব। বাড়িতে আর থাকব না।’ অথবা আরও ভয়ংকর কথা, ‘আমি এবার গলায় দড়ি দেব। রেললাইনে ঝাঁপ দেব।’ এসব বাচ্চাকে সাংঘাতিক সমস্যায় ফেলে। বাচ্চারা এগুলো বোঝাতেই পারে না। একদল বাবা, মা ধৈর্য হারিয়ে বলে ফেলেন, ‘তুই মরিস না কেন?’ এটা কিন্তু নতুন নয়। যুগে যুগে হয়ে আসছে। বাচ্চা যদি সারাক্ষণ নেগেটিভ কথা শুনে বড় হয়, তার মধ্যে রাগ তৈরি হতে বাধ্য। রাগ আবেগের একটা বহিঃপ্রকাশ। অনেক সময় দুঃখে, অভিমানেও রেগে যায়। সেটা বুঝতে হবে।
শিশুর রাগ, মেজাজ বা টেনশনের কারণ বুঝতে পারলে তার সমাধান বের করা সহজ। প্রাথমিকভাবে বাবা, মা অথবা পরিবারের সদস্যদের কেমন আচরণ হবে, তা নিয়ে এবার আলোচনা করব।
প্রথমত বাচ্চারা কিছু বোঝে না, এটা ভাবা বন্ধ করতে হবে। আমার কাছে অনেক সময় বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে মায়েরা আসেন। সেখানে মা রোগী। মা এসে বলছেন, ও তো কিছু বোঝে না। আমি বলি, তাও আপনি ওকে বাইরে বসান। অথবা আপনার সঙ্গে বাড়ির আর কেউ এলে বাচ্চাকে তার কাছে রেখে আসুন। ফলে নিজেদের ব্যবহার, পরিবেশের দিকে নজর রাখা ভীষণ জরুরি। আমরা ধরে নিচ্ছি বাচ্চা কিছু বোঝে না। সেটা ভুল। ওরা অনেক কিছুই বুঝতে পারে। অনেক কিছু না বুঝলেও অজান্তেই অনুসরণ করতে শুরু করে। ফলে ওদের একটা শান্ত, সুস্থ পরিবেশ দেওয়াটা ভীষণ দরকার।
আমরা যে আচরণ করি, সেই ব্যবহার যখন বাচ্চা করছে, সেটা আমাদের পছন্দ হয় না। ফলে সমালোচনার চোখ দিয়ে নিজের দিকে তাকাতে হবে। বুঝতে হবে আমার থেকে বাচ্চা কোন খারাপ জিনিসটা শিখল। এমন কিছু খারাপ আচরণ কি আমি করছি, যেটা বাচ্চা পরোক্ষে আমার থেকেই রপ্ত করছে?
আপনার সন্তান যখন স্কুল থেকে ফিরছে সে কত নম্বর পেল, কেন আরও বেশি নম্বর পেল না, বাকিরা কেন বেশি পেয়েছে, ও কেন পায়নি, এসব আলোচনা করবেন না। জিজ্ঞেস করুন, ওর দিনটা কেমন কেটেছে। সেখানে যদি ও বলে, ওকে কেউ ধাক্কা মেরেছে, ওর পায়ে আঁচড় কেটেছে, সেদিকে নজর দিন। বিনা বিচারে ওর সঙ্গে কথা বলুন। আমরা বড়রাও যখন একটা সমস্যার কথা কাউকে বলি, আমরা সহানুভূতি চাই। বোঝাপড়া চাই। আমরা কিন্তু সব সময় সমস্যার সমাধান চাই না। ফলে ওর প্রতি ‘কনসার্ন’ দেখান। সারাক্ষণ তুমি অতি ক্যাবলা, কিছুই পারো না, সেসব বলবেন না। যেখানে মনে হচ্ছে, গুরুতর সমস্যা, বুলিং বা অন্য কিছু সেখানে বাবা, মায়ের দায়িত্ব স্কুলে গিয়ে জানানো।
আপনার বাচ্চার মধ্যে যদি হঠাৎ ব্যবহারিক পরিবর্তন আসে, তখন স্কুলে কী হচ্ছে খোঁজ নিন। নানারকম ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে পারে বাচ্চারা। যদি শোনেন কেউ এমন কিছু করেছে, যাতে বাচ্চার অস্বস্তি হতে পারে, সেখানে স্কুলে গিয়ে রিপোর্ট করা বাবা, মায়ের দায়িত্ব। প্রতিটা জিনিস বাচ্চার উপর ছেড়ে দেবেন না।
আপনার ব্যবহারে কিছু সামঞ্জস্য থাকা উচিত। শাসন করতে হবে। শাসন মানেই মারধোর নয়। স্থির, নম্রভাবেও শাসন করা যায়। বাচ্চা যদি রাগ দেখায়, অনেক সময় বায়না করে, তার জন্য রাগ দেখায়। আমাকে এটা না দিলে স্কুলে যাব না, খাব না, এগুলো এক ধরনের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। যা বাচ্চারা শিখে যায়। সেগুলোতে উৎসাহ দিলে হবে না। বলতে হবে, আমি এটা কিনে দেব না। তাতে যদি তুমি স্কুলে অনুপস্থিত থাকো, শিক্ষক জানতে চান কী হয়েছিল? আমি সত্যি কথাই বলব। আমি বলব, তোমার কিছুই হয়নি। যে বায়নাগুলো রেগে গিয়ে করে বাচ্চারা, সেই আবদার মেটানো হলে তার ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। বাচ্চা শিখে যায়, আমার কিছু চাইতে গেলে একটু রাগ দেখব, তাহলেই পেয়ে যাব। অপ্রাপ্তি, হতাশা, টেনশন, রাগ, ক্ষোভ সব কিছু থেকে যে ফ্রাস্ট্রেশন তৈরি হয়, ও সেটা সহ্য করতে শিখবে না। ওর ব্যক্তিত্ব গঠন হবে না।
আজকে আমার বাড়ির যে নিয়ম, আগামিকালও তা থাকা উচিত। যাতে বাচ্চার কাছে কথা, তখন যদি দেখি পড়তে বসছে না, তার জন্য একদিন হয়তো ভীষণ বকলাম। পরের দিন আমার মুড ভালো বলে পড়তে বসার সময়টা বাচ্চা টিভি দেখলে বা মোবাইল গেম খেললে আমি সেটা ওকে করতে দিলাম। এই আচরণ বদলাতে হবে।