গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে। ... বিশদ
শরীর থাকলেই অসুখ হবে। আর কিছু কিছু সময় আপত্কালীন পরিস্থিতিও তৈরি হবে। এমনকী কোনও কোনও সময় প্রাণ নিয়েও পড়ে যায় টানাটানি। এমনই একটি অবস্থা হল হার্ট অ্যাটাক। ভারতে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন হার্ট অ্যাটাকের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। হার্ট অ্যাটাক যে কোনও সময়, যে কোনও পরিস্থিতিতে হতে পারে। ঘরের অন্দরে হোক বা রাস্তাঘাটে, একজন ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। অথচ জানলে অবাক হবেন, প্রাথমিকভাবে কতকগুলি কাজ করলেই রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তবে তার আগে জানতে হবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সম্পর্কে।
* বুকে ব্যথা। • বুকে ব্যথার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক উপসর্গ থাকে যেমন ব্যথা ক্রমশ কাঁধের দিকে যেতে থাকে। • ব্যথার অনুভূতি চোয়ালের দিকেও উঠতে থাকে।
• পেটের দিকেও যেতে থাকে।
ব্যথার ধরন
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথায় মনে হয় বুকের উপরে কেউ যেন অনেক ওজনের বস্তু রেখেছে।
এর সঙ্গে হঠাত্ করে ঘেমে যাওয়া উপসর্গ থাকে। অল্প অল্প শ্বাসকষ্টের অনুভূতিও তৈরি হয়।
ইমার্জেন্সি
হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ব্যথা ছাড়াও উপরিউক্ত একটি-দুটি উপসর্গ নিয়ে রোগী উপস্থিত হলে প্রথমেই দেখতে হয় রোগীর হার্টে কোনও সমস্যা আছে কি না। কারণ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে কোনও ব্যথার উপসর্গ ছাড়াও। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে বা রক্তে সুগারের পরিমাণ মাত্রাছাড়া, তাঁদের চেস্ট পেন ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হয়। কারণ দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের আছে এমন ব্যক্তির নার্ভের ড্যামেজ হতে থাকে। তাই ব্যথার অনুভূতি সবসময় পান না রোগী।
আবার সবসময় বুকে ব্যথা হচ্ছে মানেই নিশ্চিতভাবে তা হার্ট অ্যাটাক- এমন ভাবারও কোনও দরকার নেই।
কারণ অনেক ক্ষেত্রেই খাবার খাওয়ার অনিয়ম ও তার কারণে গ্যাস-অম্বলের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় ঠিক কোন কারণে বুকে এমন সমস্যা হচ্ছে।
তাই বুকে ব্যথা হলে গ্যাস অম্বলের ওষুধ খেলেন আর একটু উপসর্গ কমল মানেই চুপচাপ বসে থাকবেন না।
এরপর যত দ্রুত সম্ভব একজন চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এমনকী চিকিত্সকের দেখা না পেলে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে রোগীকে নিয়ে যান।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
অনেক সময়েই আমরা দেখি রাস্তাঘাটে বা বাড়ির মধ্যেই হঠাত্ করে একজন জ্ঞানহারা হয়ে গেলেন। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে যেতে কেটে গেল আধঘণ্টা বা তারও বেশি! হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে চিকিত্সক তাঁকে দেখে জানালেন তিনি পরলোকগত হয়েছেন। সম্ভবত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
প্রশ্ন হল কী এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট? এককথায় হার্ট স্তব্ধ হয়ে যাওয়া। রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, শপিং মলে কেউ হঠাত্ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে কি না কীভাবে বুঝবেন? সেগুলি বোঝার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। তবে তার আগে তাঁকে কোনও নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসুন। অর্থাত্ সম্ভব হলে একটু ছায়াপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসুন যেখানে বাতাস চলাচল করছে।
এরপর তাঁকে ডেকে দেখুন তিনি সাড়া দিচ্ছেন কি না।
চেনা লোক হলে নাম ধরে ডাকুন। অচেনা লোক হলে দাদা-দিদি-কাকু এভাবে বয়স অনুসারে সম্বোধন করুন।
সাড়া না দিলে আশপাশের লোককে বলুন অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বা পুলিসকে খবর দিতে।
রোগী কোনও সাড়া না দিলে এবার বোঝার চেষ্টা করুন রোগী শ্বাস নিচ্ছেন কি?
নাকের সামনে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করা যায়। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে বা হতে চলেছে এমন অবস্থায় রোগী অত্যন্ত ধীরে ধীরে শ্বাস নেন। সেক্ষেত্রে রোগীর শ্বাস চলছে কি না তা বোঝা বেশ শক্ত। তাই বুক ওঠা-নামা করছে কি না তা লক্ষ করুন।
তার সঙ্গে হাতের কব্জি ধরে খেয়াল করুন রোগীর পালস আছে কি না। তবে সকলে পালস বুঝতে পারেন না।
সেক্ষেত্রে গলার মাঝ অংশ বা অ্যাডামস অ্যাপেল থেকে দুই থেকে তিন আঙুল পাশে একটু চাপ দিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করুন পালস আছে কি না।
কতক্ষণ দেখবেন?
পালস বড়জোর ১০ সেকেন্ড দেখাই যথেষ্ট।
অতএব রোগীকে ডাকাডাকি করে সাড়া মিলছে না, বুকের ওঠানামা বোঝা যাচ্ছে না, পালস বোঝা যাচ্ছে না— এমন হলে ধরতে হবে রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে।
এমন ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে?
এমতাবস্থায় রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য দেওয়া যেতে পারে সিপিআর। সিপিআর হল একটি নির্দিষ্ট ছন্দে বুকে চাপ দিয়ে হার্টের গতি ফিরিয়ে আনা। কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর জানলেই বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। তবে সিপিআর কীভাবে দেওয়া উচিত তা বইয়ে পড়ে বোঝা সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের।
তাই সাধারণ মানুষের কাছে আমার আবেদন— জীবনের ব্যস্ত সময় থেকে একটু সময় বের করে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগে কাজ করেন এমন চিকিত্সকদের কাছে সিপিআর দেওয়া শিখে নিন।
তাতে বহু মানুষের অকাল প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে। চাইলে মেডিকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে কেউ এই ট্রেনিং নিতে পারেন। এছাড়া নিজে শিখলে বাড়ির লোককেও শেখাতে পারবেন। তাতে পরিবারের সকলেই অন্তত একটু হলেও নিরাপদ বোধ করবেন।