কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল। ... বিশদ
‘ক্যালেন্ড’ শব্দ থেকে ‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটি এসেছে। এই শব্দটি প্রাচীন ফরাসি ভাষায় ‘ক্যালেন্ডিয়ার’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইংরেজিতে ‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটি গৃহীত হয়। আবার লাতিনে ‘ক্যালেন্ডারিয়াম’ শব্দের অর্থ হিসাবের খাতা। প্রতিমাসের ক্যালেন্ডারে হিসেবনিকেশ, ঋণ সংক্রান্ত বিষয় সব কিছুই লিখে রাখা হতো। ভারতবর্ষে ক্যালেন্ডার কথাটির অর্থ ‘কালগণক’। পূর্ণিমা, অমাবস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন তিথি-নক্ষত্র, গণিত-জ্যোতিষের নানা বিষয়ের আভাস পাওয়া যায় ‘কালগণক’ থেকে।
আধুনিক যুগে কত রকমের ক্যালেন্ডার আমরা ব্যবহার করি। অথচ সভ্যতার আদি লগ্নে কেমন ছিল এই ক্যালেন্ডারের রূপ? জেনে নেওয়া যাক সেইসব খুঁটিনাটি।
বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার হল সময় গণনার মাধ্যম। দিন ও সময়ের বিশাল ব্যাপ্তির প্রতি নজর রাখতেই মানুষ বর্ষপঞ্জি সৃষ্টি করেছিল। দক্ষিণ তুরস্কের গোবেকলি টেপেতে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বের প্রাচীনতম ক্যালেন্ডার। প্রায় ১৩ হাজার বছরের প্রাচীন এই বর্ষপঞ্জিটি সূর্য, চাঁদ ও বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের তথ্যসমৃদ্ধ। একটি স্তম্ভের উপর খোদাই করা রয়েছে এই ক্যালেন্ডারটি। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, প্রাচীনকালের মানুষজন ঋতু পরিবর্তনের জন্য তথাকথিত লুনিসোলার এই ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করেছিল। আধুনিক যুগের সূর্য ক্যালেন্ডারের সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় তখনকার মানুষজন অ্যাস্ট্রোনমি অর্থাৎ জ্যোতির্বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিলেন। এই ক্যালেন্ডারটির একটা অভিনব বিষয় হল গ্রীষ্মের অয়নকালের চিত্র। একটি পাখির মতো চিত্রের গলায় পরানো আছে একটি ‘ভি’ আকৃতির চিহ্ন। যার মাধ্যমে এই অয়নকালকে সুস্পষ্ট রূপে বোঝানো হয়েছে। সূর্য ক্যালেন্ডার ও চন্দ্র ক্যালেন্ডারেও এইসব চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হতো।
গবেষকরা মনে করেন, যিশুর জন্মের ১০ হাজার ৮৫০ বছর আগে পৃথিবীতে যে ধূমকেতুর আঘাত এসেছিল তাকে স্মরণ করার জন্যই এই ক্যালেন্ডারটি তৈরি করা হয়। গোবেকলি টেপে স্থানটির পত্তন করেছিল কিছু শিকারি সংগ্রাহক। সময়টা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৯৬০০-৮২০০ অব্দ। তখন চলছে নব্য প্রস্তর যুগ। ওই ধূমকেতুর আঘাতের ফলে আইস এজ মানে তুষার যুগের সূচনা হয়েছিল। চলেছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ বছর।
গোবেকলি টেপের পাথরের স্তম্ভটিতে আরও নানা রকমের ‘ভি’ আকৃতির চিহ্ন আছে। এক একটি চিহ্ন এক একটি দিনকে চিহ্নিত করে। এই বিশেষ চিহ্নগুলো দ্বারাই তৈরি হয়েছে ৩৬৫ দিনের ক্যালেন্ডারটি। ১২টি চান্দ্রমাস এবং এগারোটা অতিরিক্ত দিন রয়েছে এখানে।
এছাড়াও পৃথিবীর আরও বেশ কিছু প্রাচীন বর্ষপঞ্জি আছে— সুমেরীয় বর্ষপঞ্জি, মিশরীয় বর্ষপঞ্জি, অ্যাসিরীয় বর্ষপঞ্জি ও এলামাইট বর্ষপঞ্জি। ‘ক্যালেন্ডার’ শব্দটি প্রাক খ্রিস্ট যুগের উৎসব ‘স্লাভিকে কোলেদার’ সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। পরবর্তীকালে তা ক্রিসমাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বিশেষ অর্থকে বহন করে। ‘কোলে’ অর্থাৎ ‘বৃত্ত বা চক্র’ আর ‘দার’ কথাটির অর্থ ‘উপহার’। সতিই তো, এই বৃত্ত পথেই প্রকৃতি আমাদের সামনে একটি করে নতুন বছর উপহার নিয়ে আসে।