মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, আটের দশকে বড় হতে থাকা ছেলেমেয়েরা তাদের কিশোরবেলায় নলিনী দাশের ‘গোয়েন্দা গণ্ডালু’ আর ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ গোগ্রাসে গিলত। দুটোই ছিল গোয়েন্দা গল্প। পার্থক্য বলতে গণ্ডালুর দল ছিল মেয়েদের। আর পাণ্ডব গোয়েন্দার দল খুদে পাঁচ দামাল কিশোর-কিশোরী বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু আর তাদের সঙ্গী কুকুর পঞ্চুর। ষষ্ঠীপদবাবু নিজে বলতেন, ‘বাবলু চরিত্রটার মধ্যে লুকিয়ে আছে আমার শৈশব-কৈশোর। আর সেই সময়ে বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছুর মতো আমার অনেক সঙ্গীসাথিই ছিল, যাদের নিয়ে হাওড়ার শিবপুর, দাশনগর, টিকিয়াপাড়া, রামরাজাতলা চত্বরে ঘুরে বেড়াতাম।’
এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, গোয়েন্দা দলের সঙ্গী সারমেয়—পঞ্চু। যার এক চোখ কানা। সেও কিন্তু কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়। ষষ্ঠীপদ একসময় বলেছিলেন, ‘আমাদের আদি বাড়ি ছিল বর্ধমানের রায়নার নাড়ু গ্রামে। পঞ্চু সেখানকারই নেড়িকুকুর। কেউ ইট মেরে ওর চোখ কানা করে দিয়েছিল। আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম, আমার পায়ে মুখ ঘষে ওর সে কী কান্না! ফেরার সময় ওকে লুকিয়ে ট্রেনে-বাসে করে হাওড়ায় চলে আসি।’ তাঁর স্মৃতিকথায় আরও উঠে আসে, ‘পঞ্চুকে নিয়ে নানা গল্প করতাম। যা শুনে ক্ষীরোদচন্দ্র মজুমদার ওকে ফোকাস করেই আমাকে গল্প লেখার পরামর্শ দেন। প্রথমে আপত্তি করলেও পরে আমার শৈশব, কৈশোরের বন্ধুদের নিয়ে নানা রোমাঞ্চকর মুহূর্ত মিলিয়ে লিখে ফেলি পাণ্ডব গোয়েন্দা। আমি নিজেকে বাবলু বলেই কল্পনা করতাম। কারণ কৈশোরে পনেরো-ষোলোজনের দলে আমিই ছিলাম লিডার।’
১৯৭৮ সালে ধাড়সায় বাড়ি করে চলে আসার আগে ষষ্ঠীপদবাবু থাকতেন হাওড়া জেলারই শিবপুরের রামকৃষ্ণপুরে। সেখানকার তুলসী মিত্র গার্ডেন্স অর্থাৎ মিত্তিরদের বাগানই ছিল পাণ্ডব গোয়েন্দার লোকেশন। কোনও পাণ্ডিত্যপূর্ণ, গুরুগম্ভীর ভাষা নয়, নিছক সহজ-সরল ভাষা আর অ্যাডভেঞ্চারের টানেই কিশোর থেকে বয়স্ক সকলেই পাণ্ডব গোয়েন্দার গল্পের রসাস্বাদন করতে চেয়েছিলেন সেইসময়। লেখকের সৃজনীশক্তির মুন্সিয়ানাই এক নিমেষে গ্রন্থিত করেছিল কিশোর থেকে যুবকদের। পাণ্ডব গোয়েন্দার অভিযানই তাঁদের মগজে যেন মহামন্ত্র সঞ্চারিত করেছিল , ‘আমরাও পারব।’
অবশ্য, ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় নিজে মনে করতেন এনিড ব্লাইটনের ‘ফেমাস ফাইভ’-এর অনুপ্রেরণায় লেখা কিশোর পাঠ্য সিরিজ ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছাতে সহায়তা করলেও, এটি কখনওই তাঁর সেরা সৃষ্টি নয়। স্রষ্টা নিজে মনে করতেন, তাঁর সেরা অ্যাডভেঞ্চার গল্প ‘সোনার গণপতি আর হীরের চোখ’। এগুলোর পাশাপাশি ‘প্রাইভেট ডিটেক্টিভ অম্বর চ্যাটার্জি’, কিশোর গোয়েন্দা তাতারের অভিযানও যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করেছে।
ষষ্ঠীপদবাবুর সৃজনের ভুবন কেবল গোয়েন্দা কাহিনি নয়, ভ্রমণ কাহিনি ও ভূতের গল্প প্রভৃতির মধ্যেও পরিব্যাপ্ত ছিল। গত ৩ মার্চ প্রয়াত হন ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়। সৃষ্টির মাধ্যমে যুগোত্তীর্ণ এই লেখক রয়ে গেলেন প্রত্যেক পাঠকের হৃদয়ের মণিকোঠায়।