মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
সভ্যতার উদ্ধত আস্ফালনে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সচেতনতার বার্তাকে আমরা প্রতি মুহূর্তে অগ্রাহ্য করে চলেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, আমাদের সভ্যতা সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষ করে অবাধে গাছ কাটার ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা প্রচণ্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ পৃথিবীতে এখনও একটা দেশ আছে, যে দেশটি সম্পূর্ণ কার্বনমুক্ত। দেশটি শুধু কার্বন নিরপেক্ষ দেশই নয়, কার্বনমুক্ত দেশ। আজ জানব সেই দেশেরই কথা। যে দেশের অধিবাসীরা আজও বুক ভরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করেন।
চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী অংশে প্রায় ১৪ হাজার ৮০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত ছোট্ট এই দেশটি প্রাচ্যের নিউজিল্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। দেশটির মোট আয়তনের ৭২ শতাংশ বনাঞ্চল। জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো একমত হয়েছিল যে, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় তারা কাজ করবে। সেই কাজের ধারা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছে যে দেশটি, তার নাম ভুটান। হ্যাঁ, ভুটানই একমাত্র কার্বনমুক্ত দেশ। প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের বাস এই দেশটিতে ।
এদেশের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি বা বনায়ন। ২০১৫ সালে ভুটানবাসীরা ঘণ্টায় প্রায় ৪৯ হাজার ৬৭২টি গাছ লাগিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। আগামী প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে ভুটান প্রশাসনের বিশেষ নজর রয়েছে। তাই এখানকার পাঠ্যক্রমে পরিবেশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড ৭২ শতাংশ বনাঞ্চল দ্বারা শোষিত হয়। এদেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের বার্ষিক পরিমাণ ১৫ লক্ষ টন। আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণের পরিমাণ ৬০ লক্ষ টন। ভুটানের কিছু নীতি দেশটিকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যেমন— এখানে কাঠ রপ্তানি নিষিদ্ধ। বনাঞ্চল কখনওই ৬০ শতাংশের নীচে নামতে পারবে না। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ মূলত এখানকার বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। রি-সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে আবর্জনার পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভুটান। একই সঙ্গে চলছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির কাজ।
ভুটানের নাগরিকরা রাজতন্ত্রকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। তাঁরা মনে করেন, ক্ষমতার লড়াই না থাকলে দেশের শান্তি ও সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা সফলতায় পর্যবসিত হয়। হয়তো সেই কারণেই ভুটান আজ বিশ্বের দরবারে নিজের পরিচয়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে । এই দেশের মানুষ এবং সরকার সকলেই পরিবেশ সচেতন। তাঁরা জানেন যে, নিজের থেকেও যদি বেশি প্রকৃতির যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে প্রকৃতিও পাল্টা তাঁদের যত্ন নেবে। তাই প্রকৃতিদেবীও এখানে সবসময় আনন্দের হাসি হাসেন। রাজধানী থিম্পু শহরটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও সবুজ প্রকৃতির আশীর্বাদ ঝরে পড়ছে। চারদিকে চাষের জমি, ঘাসের জমি, নদী, হ্রদের সমারোহ। প্রকৃতির এই সভা ভুটানবাসীকে যেমন সুখী রেখেছে, তেমনই সুস্থও রেখেছে। এখানকার ট্রাফিক নিয়ম যেমন কঠোর দেশবাসীরাও তেমনই সচেতন। রাষ্ট্রপুঞ্জের দাবি, ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকের ছোট্ট এই দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ। যে দেশটি একসময় ছিল অনুন্নত, আজ সেই দেশটিই আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত। পরিবেশ সচেতনতায়, পরিবেশরক্ষায়, বৃক্ষরোপণে, গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে তাদের গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর কাছে শিক্ষণীয়।