ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
অ্যামেলিয়া দাস, ছাত্রী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
আলোরই উৎসব। দেওয়ালি, দীপাবলি কত কী নাম তার! দীপিত প্রদীপমালার আলোক বাহার। রঙ্গোলি আর আলোর সাজে উৎসবের দিনগুলো মেতে উঠুক। উৎসব হোক স্বাস্থ্যসম্মতভাবে। সর্বোপরি আমাদের সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে এর মধ্যেই। দীপাবলির শুভ দিনগুলো মন ভালো করে দিক, শান্তি বজায় থাকুক। সকলের জীবন এগিয়ে যাক নিয়ে আলোক সুর।
সৌপর্ণী দত্ত, ছাত্রী
দীপাবলি হল আলোর উৎসব। আমাদের ওই দিনটি ঐতিহ্যবাহী পথে উদযাপন করা উচিত। বাজি বিশেষভাবে বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য ক্ষতিকারক। এটি বায়ু এবং শব্দ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এবং দূষণ এড়াতে পরিবেশবান্ধব দীপাবলি বেছে নেওয়া দরকার। শুধু তাই নয় ঐতিহ্যবাহী মাটির প্রদীপ ব্যবহারের ফলে শিল্পীরা উপকৃত হন। তাছাড়া আনন্দের পাশাপাশি নিরীহ পশু পাখিদের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সব মিলিয়ে এবারের দীপাবলি হয়ে উঠুক পরিবেশবান্ধব। প্রদীপের আলো ঘরে ঘরে অন্ধকার দূর করে মানুষের জীবনকে করে তুলুক আনন্দময়।
অভিষিক্তা পাল, ছাত্রী
সামনেই দীপাবলি। আরও একবার নিষেধাজ্ঞা-নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই শব্দবাজির দাপটে কাঁপবে শহর থেকে গ্রাম। আতসবাজির তীব্র ধোঁয়া আর কটূ গন্ধে ওষ্ঠাগত হবে প্রাণ। সঙ্গে বাদ যাবে কি নিষ্পাপ পশুপাখিগুলোও! আমরা কেন বুঝি না, বাজির বারুদে থাকা সালফার, কার্বন, আর্সেনিক, সোডিয়াম অক্সালেট সহ বিভিন্ন রাসায়নিক অত্যন্ত ক্ষতিকর। শ্বাসের সঙ্গে ঢুকে ফুসফুসের সমস্যা তৈরি করে। বাতাসে দূষণের মাত্রা সাংঘাতিক। তবুও আমরা আতসবাজি বা শব্দবাজিতে মাতি। সবুজবাজিও কিন্তু বিপদের বাইরে নয়। ফলে এবার চোখ ঝলসানো নয়, স্নিগ্ধ আলোয় মুছে যাক অন্ধকার।
লালু নেয়ে, শিক্ষক
দীপাবলি তো আলোর উৎসব। আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠে শহর-গ্ৰাম-গঞ্জ। প্রধান রাস্তা থেকে পাড়ার গলি হয়ে সব গৃহস্থালি ভরে ওঠে আলোকমালায়। দীপাবলি অশুভ অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সাধনা। এ উৎসব প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। বাজি পোড়ানো বা আতসবাজি জ্বালানো সে তো অনেক পরে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়েছে। দীপাবলি মানে পটকা ফাটানো নয়। তাই এবার শব্দবাজি বন্ধ হোক, আতসবাজির পোড়া বারুদের গন্ধও আর নয়। দূষণের বালাই যেমন থাকবে না তেমনিই আলোর উৎসবে দীপাবলি পালনের চিরাচরিত ঐতিহ্য ফিরে আসবে। বংশের মুখে বাতি দেওয়ার বহুশ্রুত মিথটির সঙ্গে এই উৎসব সম্পর্কিত।
বিপক্ষে
চন্দ্রা শীল, শিক্ষিকা
আমাদের রাজ্যে বাজি শিল্প তথা ব্যবসা। হাজার হাজার পরিবার দীপাবলির মতো উৎসবের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকে। তাদের সেই রোজগারে সারা বছরের অন্ন জোগাড় হয়। একটি নির্দিষ্ট শব্দসীমার ভিতরে পরিবেশবান্ধব অল্প পরিমাণ বাজি কেনা যায়। আমরা কিন্তু এই কাজের মধ্যে দিয়ে সেই সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব যারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই শিল্প, ব্যবসাকে অবলম্বন করে বেঁচে আছে। অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর পথে ফেরার এই উৎসবে আমাদের আলো যেমন দরকার, তেমনই একটি ব্যবসাকে পরিবেশবান্ধব করে সেই ব্যবসার উন্নতিও দরকার। সে উদ্যোগ আমাদের তথা প্রশাসনের একটা অন্যতম দায়িত্ব।
সোহিনী রায়চৌধুরী, শিক্ষিকা
আলোর মালা দিয়ে ঘর সাজিয়ে যেমন সুন্দর ও স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, তেমনি বাজির শব্দ ও আলো ঐতিহ্যগতভাবে উৎসবের অংশ। তাই দীপাবলিতে বাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে বাজির পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। ক্ষতিকর বাজির বিক্রয় ও ব্যবহারের উপর নিয়মাবলি প্রয়োগ— পরিবেশ রক্ষার সহায়ক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহার করতে পারে। এতে কম ধোঁয়া ও কম শব্দ উৎপন্ন হবে। অন্যান্য প্রাণীর নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে। ঐতিহ্য এবং পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শুভদীপ সিংহ, ছাত্র
আলো ও আতসবাজি দুটোরই ব্যবহার দীপাবলি উদযাপনের আসল মেজাজ বজায় রাখে। আলো অন্ধকারের উপর আলোর জয়কে প্রতীকী করে, কিন্তু আতসবাজিরও দীপাবলিতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অনেকেরই ধারণা যে আতসবাজি পরিবেশের ক্ষতি করে। এই উদ্বেগ যথার্থ, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আতসবাজি বন্ধ করার পরিবর্তে আমরা পরিবেশবান্ধব বা গ্রিন আতসবাজি ব্যবহার করতে পারি। এগুলি কম ধোঁয়া ও শব্দ তৈরি করে এবং পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে। আতসবাজির ব্যবহারও সীমিত করতে পারি। আলো ও আতসবাজি দুটোই দীপাবলির আনন্দকে জীবন্ত রাখে। তাই দায়িত্ব নিয়ে ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে উদযাপন করতে পারি।
সুবর্ণা ব্যানার্জি, গৃহবধূ
দীপাবলিতে আলোর উৎসবের পাশাপাশি বাজি ব্যবহারেরও প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা হবে পরিবেশবান্ধব এবং মাত্রাতিরিক্ত কখনই নয়। বাজি থেকে স্ফূরিত আলোর রোশনাই একদিকে যেমন মানুষের নান্দনিক এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্য সাধন করে তেমনই বাজির আওয়াজ রাতের নিঃস্তব্ধতা হরণ করার একটি উপায়। হিমেল হাওয়ায় দীপাবলির ভাবাবেশে একটা উষ্ণ অন্তরঙ্গপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করে বাজি। আলো ও শব্দের সমন্বয়ে দীপাবলি যেন আরও তেজস্বী হয়ে ওঠে।