যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
প্রকৃতির সঙ্গে রং মিলিয়ে সেজেছেন কখনও? জানেন কি প্রতি মরশুমেই প্রকৃতি যেমনভাবে রং বদল করে তেমনই পাল্টায় আমাদের সাজগোজের ধরন? প্রকৃতির সঙ্গে এই রংমিলান্তি বা কনট্রাস্ট সাজ আমরা সচেতন বা অবচেতন মনে করেই থাকি, জানালেন জুয়েলারি ডিজাইনার রীতা সেন। তাঁর কথায়, বাঙালি কন্যাদের সাজে গয়না এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেই গয়নাই আজকের আলোচ্য।
এখন প্রশ্ন হল শীতপোশাকের সঙ্গে কেমন গয়না মানানসই? হাতের তৈরি কাশ্মীরি গয়নার কারিগর জাসমিন লমহা জানালেন, এখনকার তরুণীরা হ্যান্ডমেড গয়না খুবই পছন্দ করেন। রোজকার গয়না বলতে তাদের কাছে কাঠ, চামড়া, শাঁখ, ঝিনুক ইত্যাদি। এছাড়াও কাশ্মীরি সিল্কের উপর কাশ্মীরি স্টিচ করা গয়নাও আধুনিকারা পড়ছেন সেগুলো খুব উজ্জ্বল রঙে তৈরি করা হয়, যেমন তুঁতের সঙ্গে গোলাপির কম্বিনেশন, হলুদের সঙ্গে সবুজের কম্বিনেশন ইত্যাদি। এই ধরনের গয়না সাধারণত স্টেটমেন্ট পিস হিসেবেই কেনেন নব্য যুগের তরুণীরা। পেনডেন্ট, স্টেটমেন্ট রিং, বড় দুল ইত্যাদি। পেনডেন্টগুলো বড় লম্বা সুতো বা লেদার কারের সঙ্গে ঝোলানো থাকে। অনেকে আবার উলের সঙ্গেও পরতে চান এই ধরনের পেনডেন্ট। আজকাল শীতের ফ্যাশনে লং কোট খুবই ট্রেন্ডি, জানালেন রীতা। আর সেই ধরনের কোটের সঙ্গে আধুনিকারা বেছে নিচ্ছেন বড় স্টোন পেনডেন্ট। কানে ছোট্ট টপ আর আঙুলে পেনডেন্টের সঙ্গে ম্যাচ করা ককটেল রিং। শীতের মরশুমে যে স্টোনগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকছে তার মধ্যে রয়েছে রুবি, স্যাফায়ার, এমারেল্ড ইত্যাদি। এই স্টোনগুলো শীতের সাজকে রঙিন ও উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করছে।
কানে গোল্ডেন হুপ আধুনিকাদের খাসপসন্দ। সেক্ষেত্রে কলার দেওয়া শীতপোশাক বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। গলায় কিচ্ছুটি না পরে বরং কানেই একখানা জব্বর গোল্ডেন হুপ বা সোনালি রিং ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এগুলো পোশাক অনুযায়ী কখনও প্লেন ডিজাইনের হচ্ছে কখনও বা ট্যুইস্টেড প্যাটার্নেরও হচ্ছে। অনেকে আবার সোনালির সঙ্গে রুপোলি রঙের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচও করছেন।
হাতের তৈরি গয়না নিয়ে কাজ করেন জুয়েলারি মেকার শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘শীতের জন্য একেবারে আলাদা লুকের গয়না বানাই। তাতে একটু ঝকমকে ভাব বেশি থাকে। যেমন গ্লিটার স্প্রে দিয়ে ফিনিশ করি। কাঠের উপর উজ্জ্বল রং লাগানো হয়। সিলভার এবং নীল এই দুটো রং বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাঠে একটা স্যান্ড পেপার ফিনিশও দেওয়া হয়। তাতে একটু রাফ লুক আসে যা স্কার্ফ, স্টোল, জ্যাকেট বা সোয়েট শার্টের সঙ্গে বিশেষভাবে মানানসই।’ কাঠের গয়নায় তারের নকশাও করেন শ্রাবণী। কপারওয়্যার লুক নাকি এখন খুবই ইন, জানালেন এই ডিজাইনার। একটু বড় কাঠের টুকরো পালিশ করে তার উপর তামার তার দিয়ে নকশা তৈরি করে লাগানো হয়। তাতে ফুল পাতার নকশা থাকে, জিওমেট্রিক শেপও থাকে। অথবা তামার তার কাঠের টুকরোর সঙ্গে জড়িয়ে একটা ভিন্ন লুক দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে পেনডেন্ট আকারে ছোট হয় এবং গলায় লাগানো কারের সঙ্গে ঝোলানো থাকে। এর সঙ্গে অনেকেই ম্যাচিং ড্যাংলার পরতে পছন্দ করেন। চামড়ার গয়নার উপর হ্যান্ড পেন্ট খুবই ইন। মধুবনী পেন্ট, ফ্লোরাল পেন্ট বা ফিগার ড্রয়িং সবই পছন্দ করেন আধুনিকারা। যাঁরা শাড়িতে স্বচ্ছন্দ তাঁরা একটু ফুলেল নকশা, মধুবনী ডিজাইন বেশি কেনেন। আবার অল্পবয়সিরা কুর্তি বা টপের সঙ্গে জিওমেট্রিক শেপ, ডিগার ড্রয়িং দেওয়া পেনডেন্ট বা দুল কিনতে চান। অনেক ক্ষেত্রে আবার লেদারের দুটো টুকরো মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করেও গয়না বানানো হয়।
ঝিনুক বা সি শেল-এর গয়নাও লং জ্যাকেট বা পুলওভারের সঙ্গে মানানসই। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই একটু রঙিন ঝিনুক পছন্দ করেন। ঝিনুকের মধ্যে কখনও আবার মেটাল কার্ভিংও থাকে। সাধারণত পুলওভারের সঙ্গে একটু বড় ঝিনুকের উপর ডান্সিং মেটাল ফিগার খুবই মানানসই, জানালেন শ্রাবণী। তার সঙ্গে সিলভার টপস পরলেই সাজ সম্পূর্ণ। তিনি আরও বলেন, কাচের পেনডেন্টও এখন খুবই জনপ্রিয়। যে কোনও বয়সের মহিলাই এই ধরনের পেনডেন্ট পছন্দ করছেন। দুটো কাচের টুকরো একইভাবে কেটে শেপ করে তার মাঝে ফুলের পাপড়ি দিয়ে নকশা করা জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্ট এই পেনডেন্ট কেউ লম্বা চেনের সঙ্গে পরছেন, কেউ আবার ছোট কারের সঙ্গে পরছেন। এই গয়নাটি সাধারণত ফ্রন্ট ওপেন সোয়েটার বা শালের সঙ্গে বেশি মানায়। গয়নার ধরনটা এত সূক্ষ্ম যে ভারী জ্যাকেটের সঙ্গে পড়লে তার সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় না।
শীতের সাজে মুক্তো আর রুপোর কদর চিরকালের। এখন অনেকেই স্টিফ চেনের মাঝে মুক্তোর বল লাগিয়ে লম্বা হার চাইছেন শীতপোশাকের সঙ্গে পরার জন্য। এক্ষেত্রে স্টিফ চেন-এ কপার বা সিলভার রঙের চাহিদাই বেশি। হাই নেক সোয়েটারের সঙ্গে এই ধরনের লম্বা হার এ যুগের মেয়েরা ভালোবাসেন। সঙ্গে একটু ঝোলানো মুক্তোর দুল। একাধিক ছরায় গাঁথা মুক্তোও অনেকেই চাইছেন এই সময়ের জন্য। রুপোর তারের কাজের সঙ্গে শাঁখের লকেটও শীত ফ্যাশনে খুবই জনপ্রিয়।