যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
আজ মহালয়া। মহালয়া নিয়ে কোনও বিশেষ অনুভূতি বা ভাবনা? শৈশব স্মৃতি?
মহালয়া এমন একটা মুহূর্ত যখন রেডিও শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি, আবার জেগেও যাই। ছোটবেলায় মা ঘুম থেকে জোর করে তুলে দিত। আগের রাত থেকে একরকম ভয় দেখিয়ে রাখত যে ভোররাতে উঠে মহালয়া শুনতে হবে। আগের দিন থেকে ব্যাটারি চেক করে রাখা। ঠিকঠাক রেডিও যাতে চলে আর কি। আর এই দিনটা আরও একটা কারণে স্পেশাল। আমি যে বছর জন্মেছিলাম, সেবার ওই দিনটায় মহালয়া পড়েছিল। সেটা অবশ্যই বিশেষ ব্যাপার। ছোটবেলা থেকে বেশ একটা গর্ব ছিল এই নিয়ে। আমিই যেন দেবী হয়ে পৃথিবীতে এসেছি! এই ভালোলাগাটা তখন ছিল সঙ্গে। আর এখন মহালয়া মানে ভোরবেলা বাইরে বেরনো। একটু কাশফুলের ছোঁয়া। আসলে কী জানেন, জীবনে যখন যার সঙ্গে থাকা হয়, তখন সেই মানুষটার সঙ্গে নিজের জীবনযাত্রাটাও বদলে বদলে যায়। আমার নিজের মহালয়া নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা ছিল না। সকালে উঠে মহালয়া শুনে হয়তো ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু যার (রণজয় বিষ্ণু) সঙ্গে গত তিন-চার বছর ছিলাম, তার মহালয়া নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা ছিল। মহালয়ার সকালে উঠব। বেরব, কাশফুল দেখব, ছবি তুলব। পুঁটিরামের কচুরি খাব... ইত্যাদি। এবছর মহালয়ায় নাটকের শো আছে। আমার এক বান্ধবী মৌমিতা যার সঙ্গে বেশ কিছু স্মৃতি রয়েছে, ও ঠিক মহালয়ার আগের রাতে আসত। আমি আর ও সারারাত সুখদুঃখের কথা বলতাম। ভোরবেলা একটু হাঁটতে বেরতাম। ওর সঙ্গে দু’তিন বছর মহালয়া কেটেছে এইভাবে। সে এখন দুবাইতে থাকে।
মহালয়া মানে দেবীপক্ষ। শক্তির আরাধনা প্রতি বছর। নারী কি শক্তির মুখ আদৌ দেখতে পায়?
প্রশ্ন করলে চলবে না। উত্তর খুঁজে নিতে হবে। আপনি বা আমি নিজেদের শর্তে বাঁচতে শিখেছি। নিজের পছন্দমতো কাজ করছি। একটা সময় মেয়েরা এটা কল্পনাই করতে পারত না। এখানে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগেছে। দু’-পাঁচ বছরে তো সব হয়ে যাবে না। কয়েকশো বছর পেরিয়ে এখনকার বাস্তবটা আমরা দেখছি। কয়েকশো বছর আগে শুধু নারী কেন, সার্বিকভাবে সভ্যতার দিক থেকে অনেক কিছুই পিছিয়ে ছিল। ফলে যা-ই ঘটুক, তার জন্য সময় দিতে হবে। আমরা সেই প্রথম প্রজন্ম যারা একা থাকার কথা ভাবতে পারছি, নিজের সব কিছু নিজে সামলাচ্ছি। সেটা অনেক দিনের লড়াইয়ের ফল। তাই সেই বেঁচে থাকাটার সবটাই তো প্রথমেই ‘ঠিক’ হবে না। সেখানে আমূল পরিবর্তন আসতে আরও তিন-চার প্রজন্ম লেগেই যাবে।
কতটা বদলেছে পুজোর আমেজ?
একটা সময় পুজো ছিল শুধু আনন্দের। ছুটি কাটানোর দিন। পড়াশোনা নেই। স্কুল খুললেই পরীক্ষা, কিছু সময় ছাড় পাওয়া। নতুন জামাকাপড়। এখন বয়স বাড়ছে। অনেক কিছু অন্যরকম। আমার সঙ্গে যারা কাজ করে, তাদের বেতন বা বোনাস সব খেয়াল রাখতে হয়। অনেক দায়িত্ব। সারা বছর কত মানুষের সঙ্গে কাজ করি, তাদের জন্য একটু উপহার। তারা যেন ভালো থাকে। আগে ছিল শুধু নিজের ভালো থাকা। এখন মনে হয় সকলের ভালো থাকাটা জরুরি। বয়স বাড়লে আর্থিক সঙ্গতি হলে ক্রমশ দায়িত্ব বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক। তাই পুজো মানে এখন আরও অনেকের দায়িত্ব মাথায় রাখা। পুজোর আয়োজনের দিক থেকেও যে বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে, সেটা আমি বলব ইতিবাচক। কারণ তার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসা বেড়েছে। কত মানুষের রুজি রোজগার জড়িয়ে থাকে। আগে সাদামাঠা পুজোয় ব্যবসার এই আঙ্গিকটা ছিল না। এখন ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে ‘কালচারাল হেরিটেজ’-এর তকমা দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আমাদের দুর্গাপুজোকে যদি নিয়ে যেতে হয়, তাকে তো বড়সড় পরিসর দিতেই হবে। ইউনেস্কোর সম্মানের পরে দুর্গাপুজো নিয়ে বিদেশিরাও আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। পুজো যদি ট্যুরিজমকে উন্নত করে, তাহলে সেটা তো ভালোই। অসংখ্য ব্র্যান্ড আসছে। সবাই কাজ করছে। সাদামাঠা পুজোও উপভোগ করা যায় নানা বাড়ির পুজোয়। তবে ব্যবসাটাও জরুরি।
পুজো মানে সাজগোজ মাস্ট। আপনার কী প্ল্যান?
শাড়ি আমি এমনিই ভালোবাসি। সুতির শাড়ি, রুপোর গয়না পেলেই হল। এই সময় বেশি মেকআপ করতে ভালো লাগে না। সারা বছর মেকআপ চলে। এই ক’টা দিন একটু পাউডার লাগিয়ে লিপস্টিক আর কাজল দিয়েই যেখানে খুশি চলে যেতে পারি। পুজোর জন্য কিনেছি শাড়ি। অনলাইনেও অর্ডার করেছি। এবার জন্মদিনে এত সাদা শাড়ি পেয়েছি, তাই একটা টুকটুকে লাল শাড়ি কিনেছি (হাসি)।
বাঙালি কন্যেদের সাজগোজ নিয়ে কোনও পরামর্শ?
বাঙালি মেয়েদের মধ্যে এমনিই একটা ঢলো-ঢলো ভাব থাকে। বেশি মেকআপ দরকার নেই। আমাদের এখানে গরম। মেকআপ গলে যায়। গলাটা কালচে, মুখটা সাদা, একদম ভালো লাগে না। তার চেয়ে ‘নো মেকআপ লুক’ সুন্দর। একদম ন্যাচারাল থাকা দরকার। তাতেই নিজস্বতা থাকে। শাড়ি, টিপ, একটু কাজলে সেজে নিন। নিজেকে আপনার কেমন লাগছে, সেটাই শেষ কথা। আমি যেমন এখন শাড়ি পরে অনেকটা হাঁটা থাকলে নির্দ্বিধায় স্নিকার্স পরে নিই। খুব সুবিধা হয়। লম্বা হিল পরে অনেকক্ষণ হেঁটে ঠাকুর দেখে পা ব্যথা করার কোনও মানে আছে? নিজে যাতে আরাম পাবেন, সেটাই করবেন।
পুজোয় প্রেম। এটাও তো একটা অন্যতম অঙ্গ এই উৎসবের। কী বলবেন?
ষোড়শীর মতো পুজোর প্রেম তো আর নেই। প্রেম তার মতো আসবে, যাবে। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভালো করে সময় কাটান। সারাক্ষণ প্রেম প্রেম ভাবলে প্রেম এমনিই থাকবে না!