সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
মুখের ত্বকের যত্নে আমরা সবাই খুব সচেতন। সামগ্রিকভাবে সেই যত্নের সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে খেয়াল রাখতে হয় মুখেরই কিছু বিশেষ অঙ্গের দিকে। যেমন ধরা যাক ঠোঁট। আলাদা করে যার দিকে নজর না দিলে গোটা মুখমণ্ডলেরই ক্ষতি। কারণ ফাটা ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালে তা ঠিকই ধরা পড়বে। তাই লিপ কালার যত সুন্দরই বাছুন না কেন, ক্র্যাকড লিপস-এ সাজ কিন্তু পুরো মাটি। অথচ আমরা স্বভাবত ঠোঁট নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না।
ঠোঁট ফুটিফাটা কেন
ঠোঁট এত ফাটে কেন? তার কিছু কারণ অবশ্যই আছে। সূর্যরশ্মি থেকে ঠোঁট নিজেকে একদম বাঁচাতে পারে না। ঠোঁটে নামমাত্র অয়েল গ্ল্যান্ড থাকে, আর মেলানিন তৈরি করতে পারার কোনও ক্ষমতাই নেই ঠোঁটের। তাই শীত তো বটেই, গরমেও যখন তখন আর্দ্রতা হারায় ঠোঁট। এব্যাপারে কথা হচ্ছিল বিউটিশিয়ান সঞ্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা অনেকেই হয়তো জানি শরীরের মধ্যে মুখের ত্বক সবচেয়ে নরম। মুখের মধ্যে ঠোঁটের ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। শরীরের চামড়া অনেক কিছু সহ্য করতে পারলেও মুখের ত্বক এবং ঠোঁটে অবহেলা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে অনেক সময়ই ঠোঁটের চারপাশে ফুসকুড়ি বা ফোঁড়া হয়। অতিরিক্ত ধূমপান আবার ঠোঁটের রং পাল্টানোর মতো কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও খুব কম দামি বাজারচলতি লিপস্টিক যেগুলোতে লেডের পরিমাণ বেশি থাকে, তা-ও ঠোঁটের স্বাভাবিক আভাকে নষ্ট করে।’
হাতের কাছে সমাধান
ঠোঁটের যত্নে বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন সঞ্চিতা। এগুলো মেনে চললে সব মরশুমেই ঠোঁট পেলব এবং স্বাস্থ্যকর রাখা সম্ভব। তার মধ্যে সবার আগে দরকার যেটা, সেটা হল রোজ সঠিক পরিমাণে ফল এবং জল খাওয়া। এছাড়া ঘরোয়া কিছু উপায়ও বাতলে দিলেন তিনি। যেমন শিশুবয়স থেকেই নাভিতে খাঁটি সর্ষের তেল দিলে ঠোঁট সহজে ফাটে না। এছাড়া সামগ্রিকভাবে দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখাটাও খুব জরুরি। তার জন্যই যথেষ্ট জল খাওয়া দরকার। ঠোঁট হোক বা সারা শরীরের ত্বক, সব কিছুই ভালো থাকে এতে। তবে নিজের পরিমাণ বা চাহিদা বুঝে তবেই জল খাবেন, অতিরিক্ত জল খেয়ে কিডনির সমস্যা বাঁধাবেন না যেন।
এর পাশাপাশি ঠোঁটের স্বাভাবিক যত্ন করতে বছরভর কতগুলো নিয়ম মেনে চলা দরকার। ঠোঁটের চামড়া পাতলা এবং সংবেদনশীল হওয়ায় খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। ঠান্ডায় তা আরও বেড়ে যায়। ঠোঁটে লাগানোর মতো হাতের কাছে কিছু না পেলে বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যাস থাকে অনেকের। এতে কিন্তু ঠোঁট আরও শুকিয়ে যায়, এমনকী ফাটতেও শুরু করে, জানালেন সঞ্চিতা। তাঁর মতে, ঠোঁট ফাটা শুরু হলে কিন্তু সেটা মাঝে মাঝেই হতে থাকবে এবং তা থেকে রক্ত পর্যন্ত বেরতে পারে। অতএব ঠোঁটের ফেটে যাওয়া অংশ জিভ দিয়ে বারবার ভেজানোর অভ্যাসটা প্রথমেই ছাড়তে হবে। এর সঙ্গে ছোটবেলার কুঅভ্যাস, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ানোও বন্ধ করতে হবে। নোংরা হাত ঠোঁটে দেওয়ার বদঅভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে। ভিটামিনের অভাব ঠোঁটফাটা আরও বাড়ায়। প্রচণ্ড ঠান্ডা কিংবা সূর্যের প্রখর তাপে দীর্ঘক্ষণ থাকলেও ঠোঁটে তার প্রভাব পড়ে। এসবের জন্য ভার্জিন কোকোনাট অয়েল খুব উপকারী। অর্থাৎ যে নারকেল তেলে কোনও গন্ধ নেই, সেটার কথা বলা হচ্ছে। এই তেল ঠোঁটে রোজ লাগানো যেতে পারে। এই তেল এমনিতেই চামড়াকে নরম রাখে। আর ঠোঁটের ক্ষেত্রে তা আরও কার্যকর।
স্ক্রাব-মাস্ক-এক্সফোলিয়েট
ঠোঁট ভালো রাখতে লিপ-স্ক্রাবিং সময় সময়ে দরকারি। তারও ঘরোয়া পথ রয়েছে। অল্প একটু দুধ আর সামান্য চিনি নিয়ে সেটা ঠোঁটে বারবার ঘষে দিলে তা স্ক্রাবিংয়ের জন্য খুব ভালো কাজ করে, বললেন সঞ্চিতা।
নিয়মিত লিপস্টিক ব্যবহার করেন যাঁরা, তাঁদেরও ঠোঁটের যত্ন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, জানালেন তিনি। তাঁর পরামর্শ, একটু দামি লিপস্টিক ব্যবহার করাই ভালো। কারণ যে ধরনের কেমিক্যাল সস্তার লিপস্টিকে থাকে, তা ফাটার চেয়েও বড় ক্ষতি করতে পারে ঠোঁটের। তাই এসবে আপস করা যায় না। কোনও লিপস্টিকই দু’তিন ঘণ্টার বেশি ঠোঁটে রাখা উচিত নয়। দু’তিন ঘণ্টা পর তুলোয় ক্লেনজার বা অয়েল দিয়ে সেটা তুলে ফেলা উচিত। আর যাঁদের দীর্ঘক্ষণ লিপস্টিক পরতে হয়, তাঁদের অনেকেই লং-স্টে লিপস্টিক বেছে নেন। এটিও রাতে শুতে যাওয়ার আগে অবশ্য ভালো করে তুলে দেওয়া উচিত। এই অভ্যাসটা না করলে স্কিন তো বটেই, সঙ্গে পেটেরও সমস্যা হতে পারে। অনেকে ঠোঁটে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করেন, তাতে অন্য কোনও অসুবিধা না হলে তা-ই ব্যবহার করতে পারেন।
সঞ্চিতা জানালেন, লিপ মাস্ক-এর কথা। বিশেষত যাঁদের ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা থাকে, তাঁদের জন্য বাড়িতেই মাস্ক তৈরি করে ব্যবহারের কথা জানালেন তিনি। প্রথমে গোলাপের কিছু শুকনো পাপড়ি নিয়ে ফুটিয়ে নিন। সেই জলটা বের করে নিয়ে তাতে যোগ করুন মুলতানি মাটি। ভালো করে মেশানো হয়ে গেলে তারপর আপার ও লোয়ার লিপ-এ এই মিশ্রণ লাগিয়ে রেখে দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা পনেরো দিনে একবার বা সপ্তাহে একবার করা যায়। এতে ঠোঁটের কালোভাব অনেকটাই চলে যায়।
আর একটি দিক হল মুখের মতোই ঠোঁটের জন্যও এক্সফোলিয়েট করানো। ঠোঁটের শুষ্ক চামড়া যেগুলো প্রায় উঠে যাওয়ার মতো অবস্থায়, সেগুলো দূর করে ঠোঁটের চামড়ার স্বাভাবিক জৌলুস ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েট করা উপযোগী। রাতে শুতে যাওয়ার আগে সপ্তাহে এক-দু’বার এটা করতে পারলে ঠোঁটের সাধারণ জেল্লা বজায় থাকবে, ফাটার সমস্যাও কমবে। কোনও একটি ভালো এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব সামান্য পরিমাণে আঙুলের ডগায় নিয়ে ঠোঁটে হালকাভাবে রাব করুন। অন্তত তিরিশ সেকেন্ড ধরে আপার ও লোয়ার লিপ-এ আঙুল দিয়ে সার্কুলার মোশনে ঠোঁটে মিশিয়ে দিন এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব। ভালোভাবে লাগানো হয়ে গেল অন্তত দশ মিনিট ওভাবেই রেখে দিন। ঠোঁট যতটা পরিমাণে তেলটা শুষে নিতে পারে, ততই মঙ্গল। দশ মিনিট পর উষ্ণ জল দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। এরপর শুকনো তোয়ালে দিয়ে আলগাভাবে সবটা মুছে ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে নিন ভালো কোনও লিপ বাম। যেভাবেই হোক, ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করুন, ভালো থাকবে ঠোঁট। তা না হলেই ফেটে গিয়ে রক্তারক্তি! ফলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই সতর্ক হোন।
এছাড়া যাঁরা রোজ বাইরে বেরন, তাঁদের ক্ষেত্রে মাথায় রাখা জরুরি যে ঠোঁটেও সানস্ক্রিন লাগানোর প্রয়োজন আছে। অন্তত এসপিএফ-৩০ সম্পন্ন লিপ বাম কিংবা ওই ধরনের কোনও লোশন লাগাতে হবে। স্কিনের মতো ঠোঁটেও সময় মেনে ঘণ্টা তিন-চার পরপর রিপিট করতে হবে সানস্ক্রিনসমৃদ্ধ লিপ বাম।
সামান্য ঠোঁটের জন্য এতকিছু? পারা যায় নাকি! এমনধারা ভাবলে ঠোঁটফাটা থেকে একদম রেহাই নেই। তাই ভাবনা বদলান, ভালো রাখুন ঠোঁট।