ব্যবসা ও পেশায় ধনাগম ভাগ্য আজ অতি উত্তম। বেকারদের কর্ম লাভ হতে পারে। শরীর স্বাস্থ্য ... বিশদ
তিনি তাঁর আচার্য আরার কল্মোর সামনে ঘোষণা করেছিলেনঃ ‘যা শুনেছ তাতে বিশ্বাস কোরো না। পুরুষানুক্রমে প্রচলিত আছে, শুধু এই কারণেই ঐতিহ্য বিশ্বাসী হবে না। জনশ্রুতিতে বিশ্বাস কোরো না; আর প্রাচীন ঋষিদের লিখিত উক্তিসমূহ উপস্থাপিত করলেও তাতে বিশ্বাস কোরো না। অভ্যাসবশে অনুরক্ত কোন বিষকেও সত্য ব’লে বিশ্বাস কোরো না। বয়োজ্যেষ্ঠ ও আচার্যস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রামাণিক মতবাদেও বিশ্বাস কোরো না। অভিনিবেশ সহকারে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের দ্বারা যা যুক্তিসম্মত ব’লে মনে করবে এবং যা বহুজনের মঙ্গল ও হিতসাধনকারী তাই গ্রহণ করবে এবং তারই জন্য জীবন উৎসর্গ করবে।’
মনে রাখবেন, খ্রীষ্টীয় যুগ আরম্ভ হবার পাঁচশত বৎসর আগেই ভগবান বুদ্ধ দ্বারা এই বাণীসমুচ্চয় উচ্চারিত হয়েছিল। অনুরূপ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের প্রাচীন সত্যান্বেষীরা বিবর্তনবাদের নিয়ম এবং নৈতিক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক অনুশাসনগুলি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন,— যা সমগ্র জগদ্ব্যাপার পরিচালিত করছে বা এই জগৎপ্রপঞ্চ যার অধীন। ঐ একই অনুপ্রেরণার বশে বৈজ্ঞানিকরাও শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত, মতবাদ, বিধিনিষেধ প্রভৃতির ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি আবিষ্কার ক’রে অজ্ঞানতাপ্রসূত এই ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি পরিহার করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
দু’হাজার বৎসরযাবৎ এই ধারণা চলে আসছিল যে, ছ’হাজার বৎসর আগে মাত্র ছয়দিনে বিশ্ববহির্ভূত (Extra-cosmic Being) কোন সত্তা-কর্তৃক শূন্য থেকে এই বিশ্ব সৃষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্বাস কি কোন উপকারে এসেছে? পক্ষান্তরে ইতিহাসপাঠে আমরা জানতে পারি যে, এটি মঙ্গল অপেক্ষা ক্ষতিসাধন করেছে বেশী। এই ভাবধারায় বিশ্বাসী যাজকদের দ্বারা গিয়ার্দানো ব্রুনো, কোপার্নিকাস ও গ্যালিলিও কারারুদ্ধ, অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হয়েছিলেন,— যেহেতু তদানীন্তন গির্জা-দ্বারা সমর্থিত শাস্ত্রীয় মতবাদ তাঁরা অস্বীকার করেছিলেন। এজন্য ব্রুনোকে ষোড়শ শতাব্দীতে রোমের প্রকাশ্য রাজপথে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়েছিল। বিবর্তনবাদ-সম্বন্ধীয় আধুনিক সিদ্ধান্ত জেনেসিসের বিশেষ ‘সৃষ্টি’-র মতবাদে নিদারুণ আঘাত হেনেছে। আমরা জানি যে, এই ঘটনা একটি অলীক কাহিনী ব্যতীত আর-কিছুই নয়। এতে কোন সত্য নিহিত নেই। কোন বৈজ্ঞানিকই এটি সত্য ব’লে স্বীকার করবেন না এবং যাঁরা এই ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী নন তাঁরাই আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছেন, বহু নতুন অতিপ্রাকৃত জ্ঞান লাভ করেছেন এবং নব-নব সূত্রাদি আবিষ্কারেও সমর্থ হয়েছেন।
আমরা সত্যের অর্থ-সম্বন্ধে চিন্তা ক’রে জানতে পারি যে, যা শাশ্বত ও অপরিণামী তাই সত্য বা বিশ্বের মৌলিক সত্তা, সুতরাং পরিণামী কোন কিছুই আমরা চরমসত্য ব’লে গ্রহণ করতে পারি না। জেনেসিসের সৃষ্টিকার্য সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত তা সত্য হ’ত,— যদি বিজ্ঞান এটি সমর্থন করত এবং বিবর্তনবাদের সিদ্ধান্ত যদি একটি বিশেষ ঘটনার পর্যায়ে না পড়ত। বর্তমান যুগে বিবর্তনবাদের ধারা একটি বিশেষ ঘটনা। সুতরাং সূর্যের আগে পৃথিবী সৃষ্ট হয়েছিল, মানুষই পৃথিবীর অধিপতি এবং নিম্নতর প্রাণীরা মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যবিধানের জন্যই সৃষ্ট—একথা আজ আমাদের বিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হয় না। পারস্যবাসীদের মধ্যেও ঐরূপ একটি ধারণা ছিল,—যা সে-যুগে স্বীকৃত হয়েছিল, কিন্তু যুক্তি-বিচারের ভিত্তিতে সেগুলি মূল্যহীন, যেহেতু তাদের মূল কারণ অজ্ঞানতা,—অবিমিশ্র জ্ঞান নয়।