ব্যবসা ও পেশায় ধনাগম ভাগ্য আজ অতি উত্তম। বেকারদের কর্ম লাভ হতে পারে। শরীর স্বাস্থ্য ... বিশদ
“বিশ্বাসের আশ্চর্য্য ক্ষমতা! খাঁটী বিশ্বাসের সঙ্গে-সঙ্গে বুকের মাঝে অফুরন্ত বল সঞ্চয় হয়। তোমাদের কর্মে উদ্যম আসে না, তোমাদের মন খারাপ হয়ে যায় যখন, তখন মনের মাঝে তলিয়ে গিয়ে দে’খো, তোমরা আমাকে ভুল্তে আরম্ভ করেছিলে। আমাকে যে ভালবাসে, আমার আদেশ তার শিরোধার্য্য। এই বিবেকানন্দের কথা তোমরা এত বল, বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণকে ভালবাসা দ্বারাই মুগ্ধ করে ফেলেছিলেন। এ জায়গায় বিবেকানন্দের একটি উক্তি উদ্ধৃত না করে পারছি না। কি সুন্দর কথা! রামকৃষ্ণকে বিবেকানন্দ এক জায়গায় বল্ছেন ‘আমি তোমার কথা শুনে আকৃষ্ট হয়ে আসিনি; তোমাকে আমার ভাল লাগে, ভালবাস্তে ইচ্ছা হয়, তাই তোমাকে না দেখে থাক্তে পারি না।’
“এই ভালবাসা পেয়েই বিবেকানন্দের ভিতরে যোগ জ্ঞান ভক্তি ফুটে উঠল। কাজেই সবার মূল হল— ভালবাসা। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দকে কোন Philosophy পড়াননি, বা রামকৃষ্ণের ভিতর তেমন কোন পাণ্ডিত্য ছিল না, কিন্তু রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দকে যা দিয়েছিলেন, তার সাহায্যেই বিবেকানন্দের ভিতর এত পাণ্ডিত্য, এত আশ্চার্য্য শক্তির স্ফুরণ হল। আমার কারও উপর জোর-জুলুম নেই। তোমাদের সফলকে আমি স্বাধীনভাবে চল্বার অবকাশ এবং সুযোগ দিয়েছি। এমন কি সাধন-ভজন সম্বন্ধে তেমন কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই আমার। তোমাদের ভিতর আধ্যাত্মিক ভাব স্বতঃস্ফূর্ত হোক্, এই আমার অভিলাষ। তোমাদের ভিতর যেন অভিমান না আসে। এখানের একমাত্র শত্রুই হল তোমাদের অভিমান। কৃপালাভ করা সহজ, কিন্তু কৃপা হজম করা বড় শক্ত কথা। এইজন্যেই বলি, তোমরা দেহে-মনে-প্রাণে বীর্য্যবন্ত হও। কোন দিকে এতটুকু খুঁতও যেন তোমাদের না থাকে।
“আমি অনেকবারই তোমাদের একটি কথা বলেছি, বোধহয় কথাটির গুরুত্ব তেমন ভাবে তোমরা উপলব্ধি করনি। আজ তোমাদের ব্যবহার-আচরণের অসামঞ্জস্য দেখে আবার সেই কথাটি তোমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। ‘ এখানে বেশী জ্ঞানী হলেও চলবে না, বেশী ভক্ত হলেও চল্বে না।’ নিছক জ্ঞানের আলোচনায় তোমাদের হৃদয় শুষ্ক হয়ে উঠে, তোমরা অভিমানে উদ্ধত হয়ে ওঠ— অনেকবার আমি এর প্রমাণও পেয়েছি।
প্রকৃত জ্ঞানীই প্রকৃত ভক্ত। জগতের সৃষ্টিকর্তা যিনি, তিনি পরম জ্ঞানী। এইজন্যেই অবিরাম সানন্দচিত্তে তিনি জগতের সেবা করে যাচ্ছেন।
কিন্তু জ্ঞানী হয়ে তোমরা সেবাকে, ভক্তিকে অবজ্ঞা করে চল। কাজেই
ওরূপ জ্ঞানে হিত না হয়ে অহিতই হয় বেশী। এই তো গেল বেশী জ্ঞানের কথা; আর বেশী ভক্ত হয়ে তোমরা স্বার্থপর হয়ে ওঠ, সেবার সুযোগে নিজের স্বার্থসিদ্ধির পথই বেশী করে আবিষ্কার করবার চেষ্টায় নিরত হও। কাজেই ওরূপ ভক্তিরও কোন মূল্য নেই। সহজ কথায় বল্তে গেলে,
কোন-কিছুরই বাড়াবাড়ি ভাল নয়। মধ্য পন্থা ধরে চল, তাহলেই দেখবে পতনের কোনও আশঙ্কা আর থাক্বে না।
“তোমাদের এক-এক সময় এক-এক ঝোঁকে পেয়ে বসে। যখন জ্ঞানী হয়ে ওঠ, তখন ভক্তি হয়ে দাঁড়ায় অবজ্ঞার বস্তু, আর যখন ভক্ত হয়ে ওঠ, তখন জ্ঞান হয়ে যায় অবজ্ঞার বস্তু, এতেই প্রমাণিত হয়, তোমাদের দৃষ্টি সকল দিকে সমান ভাবে খেলে না। ‘শঙ্করের মত, আর গৌরাঙ্গের পথ’— এই হল আমাদের আদর্শ। তোমরা এ কথাটা বলেছি!
‘শ্রীশ্রীনিগমানন্দ উপদেশামৃত’ থেকে