অংশীদারি ব্যবসায় পারস্পরিক বিরোধ ও ব্যবসায় মন্দা ভাব। বিপণন কর্মীদের লক্ষ্য পূরণে বাধার যোগ। মনে ... বিশদ
কে বলবে, আমাদের দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় যৎসামান্য? মাথাপিছু নমিনাল জিডিপির নিরিখে একজন ভারতবাসীর যা আয়, তাতে ২০২৪ সালে সারা পৃথিবীতে ভারতের র্যাঙ্ক ছিল ১৪৪তম। স্বাভাবিকভাবেই, গতবছর বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে (জিএইচআই) ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের র্যাঙ্ক ১০৫তম ছিল। আজ, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ দৈনিক ১৭৮ টাকা বা মাসে ৫,৩৪০ টাকা। ইপিএস ৯৫ স্কিমে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে একমাস সংসার চালানোর জন্য ‘পেনশন’-এর নামে সরকার ন্যূনতম ১০০০ টাকা দেয় বলে দাবি করে, কিন্তু বাস্তবে তার অর্ধেক টাকাও পান না একটি বড় অংশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, সারা দেশের মধ্যে কলকাতাতেই সবচেয়ে সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা সম্ভব। তবু, উপরে যে আয়চিত্র পাওয়া গেল, তাতে কোন সংসার ঠিকমতো চলা সম্ভব? তাও তো এর মধ্যে ঘরভাড়া, চিকিৎসা খরচ প্রভৃতি ধরা নেই। এই দুটিই বহুদিন যাবৎ নিম্নবিত্ত, এমনকী মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও নাগালের বাইরে। বলা বাহুল্য, ধনী বনাম গরিব-মধ্যবিত্ত নামক লড়াইটা আরও বেশি একপেশে হয়ে গিয়েছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এর যে বিরূপ ফল অনিবার্য, সেটাই আমাদের উপর দুর্বিষহ বোঝার আকার নিচ্ছে। জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে বিপজ্জনকভাবে। জিনিসপত্রের দাম এবং শিল্পোৎপাদনের হার বিপরীত মেরু ধরে দৌড়চ্ছে। একইভাবে উল্টো আচরণ করে চলেছে রপ্তানি এবং আমদানি। বেসরকারি ক্ষেত্রে গড় বেতন বৃদ্ধি থমকে রয়েছে দু’বছর যাবৎ। কর্পোরেটের হায়ারিং, অর্থাৎ নিয়োগ গত পাঁচবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে ২০২৪-এ। আয়ের সঙ্গে ব্যয় এবং ব্যক্তিগত ঋণ পাল্লা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে; পরিণামে নিম্নমুখী সঞ্চয়ের পরিমাণ; শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, সরকারি ক্ষেত্রের আচরণও এই প্রশ্নে অবিকল।
গরিব যখন আরও গরিব হচ্ছে, রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তরা, তখনই ভারতীয়দের মধ্যে বেড়ে চলেছে সেরা ধনীর সংখ্যা, যাঁরা আমাদের ‘পড়শির ঈর্ষা’! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য সমস্ত বিরূপ সমালোচনা নস্যাৎসহ দাবি করে চলেছেন, ‘সব ঠিক হ্যায়’! ভারত এগিয়ে চলেছে। গরিবি হটানোয় রেকর্ড গড়েছে তাঁদের গেরুয়া সরকার। এই চমৎকারী, ‘স্বাস্থ্যবান’ অর্থনীতি দেখে ধন্য ধন্য করছে দেশ-দুনিয়া! আমরা উপভোগ করছি ‘আচ্ছে দিন’-এর আনন্দ। মোদির ভারতের ‘অমৃতকাল’-এ প্রবেশ কেবল সময়ের অপেক্ষা। সত্যিই তো, মহারাজা মহান, তিনি ভুল বলবেন কোন মুখে! আমরাও বুঝে গিয়েছি—‘বিকাশ’-এর যে ‘ট্রেন্ড’ মোদিজির নেতৃত্ব ‘সেট’ করেছে, তাতে ধনাঢ্য ব্যক্তি ও পরিবারগুলির শ্রীবৃদ্ধির ঘটা এখানেই থমকে যাবে না নিশ্চয়, এগতেই থাকবে টগবগ করে। মাঝখান থেকে গোল্লায় যাবে শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রতিজ্ঞা এবং শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কিছুকাল বাদে ভারতের কপালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির তকমা জুটে গেলেও নীচের দিকের ৮০ কোটি মানুষ টেরই পাবেন না, তাতে কী এলে গেল তাঁদের!