অংশীদারি ব্যবসায় পারস্পরিক বিরোধ ও ব্যবসায় মন্দা ভাব। বিপণন কর্মীদের লক্ষ্য পূরণে বাধার যোগ। মনে ... বিশদ
অনেক সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি ও দুর্বলতা, এমনকী ব্যর্থতা সত্ত্বেও স্বাধীন ভারতের যে অগ্রগতি হয়েছে তা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। এই অগ্রগতির মধ্যে আমাদের সব আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় না। প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির ব্যবধান যথেষ্ট চওড়া হলেও তা অতিক্রম করা সম্ভব, সেই যোগ্যতা ভারতসন্তানদের অবশ্যই রয়েছে। দীর্ঘ দুর্বলতা, ব্যর্থতা কীভাবে কাটিয়ে উঠে ভারত আগামী দিনে একটি শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রে উন্নীত হবে, সেটাই আজকের ভাবনা, পর্যালোচনার বিষয়। এই গঠনমূলক চিন্তা সাতচল্লিশে অর্জিত স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে সম্ভব নয়। গগনচুম্বী ইমারত নির্মাণের জন্য নীচে মজবুত ভিত তৈরি করে নেওয়া জরুরি। আমাদের মনস্বী বিপ্লবীরা সেই সর্ববৃহৎ কাজটাই করে দিয়ে গিয়েছেন তাঁদের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে। অর্জিত স্বাধীনতার ভিত্তিভূমির উপরেই আগামীর ‘উন্নত ভারত’ নির্মাণের দায়িত্ব এখন আমাদের হাতে ন্যস্ত। ‘উন্নত বিশ্বের’ পংক্তিতে বসার যোগ্যতা অর্জন করতে ভারতকে প্রথমেই সবধরনের বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে। রাজনীতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে করে তুলতে হবে স্বচ্ছ ও নিষ্কলুষ। প্রশাসনিক দুর্নীতি দূর করার জন্য নিরপেক্ষ এবং কঠোর হতে হবে নির্বাচিত সরকারকে। সংবিধান নির্দিষ্ট ফেডারেলিজম বা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অনুশীলনে আগ্রহ বাড়াতে হবে দ্রুত। তবেই ক্ষুধা ও সুখের সূচকে ভারত উন্নতি করবে; ভারতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে। আকারে প্রকারে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’ হলেও পশ্চিমি দুনিয়া আমাদেরকে ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’র অধিক মূল্য দেয় না। এই লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসাই আমাদের সকলের ব্রত হওয়া দরকার।
আমাদের স্বাধীনতার মূল্য যদি ১ শতাংশও খোয়া গিয়ে থাকে তা গিয়েছে আমাদেরই হাতে। এর পিছনে যাদের ‘কালো হাত’ সক্রিয়, শাসনব্যবস্থা থেকে সাংবিধানিক পথেই তাদের দূর করে দেওয়া জরুরি। স্বাধীন ভারতে পরাধীনতার এই গ্লানি আমাদের প্রাপ্য নয়। এর দায় ‘১৫ আগস্ট’-এর নয়, দিনটি আজও ‘পবিত্র’, এর পবিত্রতা প্রশ্নাতীত রয়ে যাবে সুদূর ভবিষ্যতেও। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত তা মনে করেন না। তিনি নতুন এক স্পর্শকাতর তত্ত্ব আমদানি করেছেন, ১৫ আগস্ট নাকি ভারতের স্বাধীনতা দিবস নয়! তাঁর মতে, অন্তত ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ ওইদিন মেলেনি। ভারত প্রকৃত স্বাধীন হয়েছে ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে, অর্থাৎ যেদিন অযোধ্যায় রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’-সহরামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছিল! তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ১৫ আগস্ট ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা’ পেয়েছিল দেশ আর ভারতের ‘প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস’ ২২ জানুয়ারি। এই তত্ত্ব উদ্ভট হলেও কোনোভাবেই উপেক্ষা করার নয়। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে সঙ্ঘের নিজস্ব হিন্দুত্ব এজেন্ডা রূপায়ণের মারাত্মক কৌশলই এর নেপথ্যে। এই ভয়াবহ মতলব বানচাল করার জন্য দেশের সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির এখনই সতর্ক হওয়া উচিত, নয়তো অদূর ভবিষ্যতে দেশবাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে। মোহন ভাগবতরা ‘স্বাধীনতা’ বলতে যা বোঝেন বাকি দেশ তাকেই চেনে ‘কারাবাস’ রূপে।