প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
গ্রামীণ অর্থনীতির দুর্দশা কমাতে ২০০৬ সালে মনমোহন সিং সরকার চালু করেছিল মনরেগা। তার ইতিবাচক ফল মিলেছিল বেশ দ্রুত—কমতে শুরু করেছিল বেকারত্ব ও দারিদ্র্য এবং বেড়ে চলেছিল জাতীয় গড় আয়। তবুও জনসংখ্যার নীচের দিকের ২০ শতাংশের দুর্দশা আজও বর্তমান। তাই মনরেগার পরিধি বৃদ্ধির উপরেই গুরুত্ব আরোপ করেন অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর ঠিক সেইসময়ই উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে মোদি সরকার। ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে এই খাতের মোট খরচ কমতে শুরু করেছে। ২০২২-২৩ সালে এই খাতে খরচ করা হয়েছিল মোট বাজেটের মাত্র ১.৭৮ শতাংশ। অঙ্কটি বিগত এক দশকের ভিতরে সর্বনিম্ন! সেইসময় থেকেই এই প্রকল্প চালু রাখার ব্যাপারে মোদি সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। সংশয়টি গভীর আকার নেয় যখন এই প্রকল্পের টার্গেট হয়ে পড়ে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকারগুলি। দুয়োরানির তালিকার শীর্ষে রাখা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। বোঝাই যাচ্ছিল, প্রকল্পটি বন্ধ করা, নিদেন পক্ষে এর গতি শ্লথ করে দেওয়ার জন্য মোদি সরকারের হাতে কোনও বাহানা থাকা জরুরি। যাই হোক, নানা ছলনার আশ্রয় নিয়ে বাংলায় মনরেগার টাকা বন্ধ করা হয়েছে ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে। পরবর্তী দু’বছরেও (২০২২-২৩, ২০২৩-২৪) বাংলার গরিব মানুষকে এই প্রকল্পে কোনও কাজ দেওয়া যায়নি। তার ফলে গ্রামবাংলার জন্য পরিকল্পিত ৬২ কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয় সেইসময়। এজন্য গরিব মানুষগুলোর সঙ্গে বঞ্চনার আর্থিক পরিমাণটাও ছিল বিশাল—২২ হাজার কোটি টাকা! তার সঙ্গে চলতি অর্থবর্ষে বঞ্চনার হিসেব যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণটা আরও মস্ত। অথচ মনরেগা রূপায়ণের মাধ্যমে দেশের মধ্যে শ্রমদিবস সৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। বিভিন্ন বছরে এই খাতে বাংলার সরকার সদ্ব্যবহার করেছে কয়েক হাজার কোটি টাকার। কাজ যে করে তারই কিছু ভুলচুক হয়। কাজের বহর বড় হলে আশঙ্কা থাকে ভুলত্রুটি বৃদ্ধিরও। কর্তৃপক্ষ হাজার সতর্ক থেকেও এই জিনিস পুরোপুরি এড়াতে পারেন না। এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন রাজ্য সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বার বার দেখা গিয়েছে।
এমনকী সূচের ছিদ্রান্বেষণে সদাসর্বদা ব্যস্ত খোদ মোদি সরকারকেই নানা ক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছে চালুনির ভূমিকায়। মোদি সরকারের একাধিক প্রকল্পে বেনিয়মের দিকে আঙুল তুলেছে দেশের শীর্ষ অডিট সংস্থা সিএজি (ক্যাগ)-ও। বিরোধী দলগুলির এই সংক্রান্ত অভিযোগের জবাবে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কখনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এমন গুরুতর ব্যাপারেও সংসদকে অন্ধকারে রাখার এক নয়া নষ্ট সংস্কৃতি আমদানি করেছেন মোদিবাবুরা। কেন্দ্রের কাজে ত্রুটি এবং রকমারি দুর্নীতি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির তরফে কিছু ক্ষেত্রে সাফাই দেওয়া হলেও তা বস্তুত অক্ষমের আস্ফালন হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে। আর এই কেন্দ্রীয় সরকারই দুর্নীতি, বেনিয়মের অজুহাত খাড়া করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য সরকারের পিছনে পড়ে রয়েছে লাগাতার। শুধু পড়ে থাকাই নয়, বন্ধ করে দিয়েছে মনরেগা এবং আবাস যোজনার টাকা। অগুনতি দিল্লিওয়ালা টিম ঘুরে গিয়ে সামান্য কিছু বেনিয়ম চিহ্নিত করেই ক্ষান্ত দিয়েছে অবশেষে। রাজ্য সরকারও পদক্ষেপ করেছে তাদের দাবিমতোই। এবার অবিলম্বে বাংলায় শুরু হোক মনরেগার কাজ এবং চালু হোক আবাস যোজনায় গরিবের জন্য পাকাবাড়ি নির্মাণ। কারণ এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু কিছু স্থায়ী সম্পদই সৃষ্টি হয় না, দেশজুড়ে প্রান্তিক গরিব পরিবারগুলির জন্য তৈরি হয় বিপুল কর্মসংস্থানেরও সুযোগ। বহুচর্চিত ‘অমৃতকাল’ একটি আন্তরিক ধারণা হলে তা কোনোভাবেই গরিব মানুষকে বন্ধনীর বাইরে রেখে বাস্তব রূপ পাবে না। বরং যে নীতি এখনও আঁকড়ে রয়েছেন মোদিবাবুরা তাতে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের হ্রাসই ত্বরান্বিত হবে।