প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
আর মোদি সরকার কোপ দিয়েছে সেখানেই। ফলে এই উলটপুরাণের দায় যে মোদি সরকারের নয়া অর্থনীতির, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কমই। এই নীতির সবচেয়ে বড় বলির নাম নিঃসন্দেহে বাংলা, মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য। যেহেতু মোদি সরকারের ভ্রান্ত গেরুয়া নীতির সামনে সবচেয়ে বড় বাধা এখনও পর্যন্ত তাঁরাই, তাই তাঁদের সবক শেখাবার নামে বাংলার গরিব মানুষকে চরম বঞ্চনার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বাংলায় মনরেগার টাকা বন্ধ ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে। ফলে পরবর্তী দু’বছরেও (২০২২-২৩, ২০২৩-২৪) বাংলার গরিব মানুষকে এই প্রকল্পে কোনও কাজ দেওয়া যায়নি। তার ফলে গ্রামবাংলার জন্য পরিকল্পিত ৬২ কোটি শ্রমদিবস নষ্ট হয় সেইসময়। এজন্য গরিব মানুষগুলোর সঙ্গে বঞ্চনার আর্থিক পরিমাণটাও ছিল বিশাল—২২ হাজার কোটি টাকা! তার সঙ্গে চলতি অর্থবর্ষে বঞ্চনার হিসেব যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণটা আরও মস্ত। সম্পদ অনর্থক জমিয়ে রাখার বিরুদ্ধে সওয়াল করতে গিয়ে মনস্বী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পদকে তুলনা করেছিলেন দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার সঙ্গে। তুলনাটা টাকার সঙ্গেও লাগসই। বস্তু হিসেবে টাকারও কোনও ক্ষমতা নেই, খামোকা জমিয়ে রাখলে তারা কিছু জায়গা দখল করে মাত্র। টাকার আসল শক্তি তার গতিশীলতায়—একটা টাকা যত বেশি হাত বদল করবে, তত বেশি লোকের প্রয়োজন মেটাবে, সৃষ্টি হবে তত বেশি উপযোগ। এটাই হল টাকার বৃদ্ধি। টাকার এই ‘ধর্মাচরণ’ থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে আগেই, এবার কি সারা ভারতের কপালেও এই দুর্ভোগ চাপিয়ে দেওয়ার মতলব জারি রয়েছে?
গভীর আশঙ্কা তৈরি করে দিয়েছে খোদ নীতি আয়োগ। দেশে মনরেগার প্রভাব নিয়ে তারা একটি স্বতঃপ্রণোদিত সমীক্ষা করছে। আশঙ্কাটি সেখান থেকেই। মনরেগা প্রকল্পটি মানুষের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করছে, সেটাই খতিয়ে দেখা হবে এই সমীক্ষায়। সমীক্ষা রিপোর্ট নেতিবাচক হলে নীতি আয়োগের সুপারিশ কী হবে? সেটিকে ঢাল করে মনরেগা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে না তো? এই সরকারের গরিব-মধ্যবিত্ত বিরোধী ভয়াবহ অর্থনীতির রেকর্ডই সংশ্লিষ্ট মহলকে তেমনটাই ভাবাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতির দুর্দশা কমাতে ২০০৬ সালে মনমোহন সিং সরকার চালু করেছিল মনরেগা। তার ইতিবাচক ফল মিলেছিল বেশ দ্রুত—কমতে শুরু করেছিল বেকারত্ব ও দারিদ্র্য এবং বেড়ে চলেছিল জাতীয় গড় আয়। তবুও জনসংখ্যার নীচের দিকের ২০ শতাংশের দুর্দশা আজও বর্তমান। তাই মনরেগার পরিধি বৃদ্ধির উপরেই গুরুত্ব আরোপ করার সুপারিশ করেন অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর ঠিক সেইসময়ই উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে মোদি সরকার। ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে এই খাতের মোট খরচ কমতে শুরু করেছে। ২০২২-২৩ সালে এই খাতে খরচ করা হয়েছিল মোট বাজেটের মাত্র ১.৭৮ শতাংশ। অঙ্কটি বিগত এক দশকের ভিতরে সর্বনিম্ন! সেইসময় থেকেই এই প্রকল্প চালু রাখার ব্যাপারে মোদি সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়। অথচ আমরা জানি, মনরেগার মাধ্যমে শুধু স্থায়ী সম্পদই সৃষ্টি হয় না, দেশজুড়ে প্রান্তিক গরিব পরিবারগুলির জন্য সৃষ্টি হয় বিপুল কর্মসংস্থানেরও সুযোগ। এবার প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে বঞ্চনার শিকার হবেন জনসাধারণ। এতদিন শুধু বাংলার মানুষকে ভাতে মেরেছে গেরুয়া প্রশাসন। এবার কি সারা ভারতের গরিব মানুষকেই ভাতে মারতে চাইছেন মোদিবাবুরা? এই আশঙ্কা সত্যি হলে বহুচর্চিত অমৃতকালই চিহ্নিত হয়ে থাকবে বিষদংশনের মোদিযুগ হিসেবে।