প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রী সন্ধ্যায় সময় দিয়েছিলেন ৪৫ মিনিট। লাইভ স্ট্রিমিং মোডে সেই বৈঠক চলল টানা প্রায় সওয়া দু’ঘণ্টা! বাংলার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের একজন প্রশাসনিক প্রধানের সারাদিনে কত কাজ ও ব্যস্ততা থাকে তা সকলেই জানেন। বস্তুত এই ধরনের এক ব্যক্তিত্বকে নাওয়া-খাওয়া সংক্ষেপ করেই তাঁর গুরুদায়িত্ব পালন করে যেতে হয়। মানুষের জন্য জীবনভর কাজ করে যাওয়াই যাঁর ব্রত, বাংলার সেই জননেত্রীর ক্ষেত্রে তার অন্যথা হয় না কোনোদিন। স্বভাবতই এদিনের বৈঠকের জন্য তাঁর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। কেননা, এ ছিল এমন একটি বৈঠক যা একই সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষের ভালো থাকা, না-থাকার সম্পর্ক। উল্লেখ্য, আর জি কর ইস্যুতে ৯ আগস্ট থেকে রাজ্যের সমস্ত বড় সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারদের একাংশের কর্মবিরতি চলছিল। তাঁরা মূলত জুনিয়র ডাক্তার। ওই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ছিল সিনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশের। তারই ফলে সরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রে টানা অচলাবস্থা কায়েম হয়। কিন্তু ‘জাস্টিস’-এর দাবিতে দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া এই ডাক্তাররাই কিন্তু প্র্যাকটিস চালিয়ে গিয়েছেন বেসরকারি ক্ষেত্রে। বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম এবং প্রাইভেট চেম্বারে দিব্যি রোগী দেখেছেন তাঁরা। দরদামে পোষালে অপারেশনও করেছেন এন্তার। কিন্তু এই বিকল্প সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গরিব মানুষগুলি। কারণ তাঁদের নুন আনতে পানতা ফুরোয়—তাঁরা ডাক্তারবাবুদের খুশি করবেন কোন কুবেরের ভাণ্ডার থেকে? বহু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারও সরকারি হাসপাতালের ভরসায় বেঁচে আছে। জীবনদায়ী প্রয়োজনে, এইসময় তারা বাধ্য হয়েছে ঘটিবাটি বেচেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা পরিষেবা কিনতে।
এই জিনিস একটি জনদরদি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই অভয়ার ধর্ষণ ও মৃত্যুর পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বার বারই চেষ্টা করেছেন ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে। জুনিয়র ও সিনিয়র সকল ডাক্তার এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা একত্রে কাঁধ না লাগালে দশ কোটি মানুষের রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্র সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। এই ব্যবস্থায় কোনোরকম গলদ থাকলে তা দূর করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক উদ্যোগ জরুরি। কিন্তু বাংলার দুর্ভাগ্য যে, মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক আহ্বান ও উদ্যোগ বারবার বানচাল করে দিয়েছে একটি অতৃপ্ত রাজনৈতিক শক্তি। সর্বোচ্চ আদালতকেও সমানে বিভ্রান্ত করে গিয়েছে তারা। তবু হাল ছেড়ে দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাঁর দূত হয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে গিয়েছিলেন রাজ্যের দুই শীর্ষ আমলা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন এবং টেলিফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও। একজন সত্যিকার অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই মমতা ফের তাঁদের অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন এবং নবান্নের বৈঠকে খোলা মনে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সবার সমস্ত বক্তব্য ও দাবি তিনি শুনেছেন মন দিয়ে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হয়েছে একাধিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত। আর তাতেই উঠেছে অনশন এবং ধর্মঘটের ডাক। তাঁদের এই জোড়া ঘোষণা স্বাগত। ডাক্তারদের উচিত, অবিলম্বে কাজে যোগ দিয়ে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করে তোলা। সেক্ষেত্রে অনশন তুলেও আন্দোলন জারি রাখার হুঁশিয়ারি মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। এই গোঁ ছেড়ে নিঃশর্তে রোগীর সেবাতেই মনোনিবেশ করতে হবে তাঁদের। তাহলে মানুষের অনেক সমর্থন ও আশীর্বাদ তাঁদের সঙ্গে সর্বক্ষণ থাকবে। মানুষকে আবার বিপাকে ফেলা হলে শুধু সরকারি প্রশাসন বিব্রত হবে না, আতান্তরে বেশি পড়বেন ডাক্তাররাই। কেননা, সরকারি চিকিৎসা ক্ষেত্রের অব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। তার জন্য আন্দোলনের বিভ্রান্তিও যে বহুলাংশে দায়ী, তা অস্বীকার করা সত্যের অপলাপ মাত্র।