প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
ওটিপি, পাসওয়ার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অন্য কিছু তথ্য হাতানো এবং ভুয়ো লিঙ্কে ক্লিকের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার কাহিনি অনেকের জানা। তারপর সামনে আসে আরও বিস্ময়কর কাণ্ড। একেবারে দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের (এসবিআই) ভুয়ো শাখা খুলেছে প্রতারক দল! কাণ্ডটি ঘটেছে ছত্তিশগড়ের শক্তি জেলায়। মূলত ‘সরকারি চাকরি’ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবদের কাছ থেকে মোটা টাকা আত্মসাৎ করার মতলবেই ওই ফাঁদ পাতা হয়। অফিসটি সম্পর্কে কানাঘুষো শুরু হতেই খোঁজ-খবর নেয় পুলিস। মারাত্মক প্রতারণার গন্ধ পেয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে ওই অফিসে হানা দেয় পুলিসের বিশেষ দল। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই চম্পট দেয় স্বঘোষিত ‘ব্যাঙ্ক ম্যানেজার’। ওই ‘ব্যাঙ্কে’ কর্মরত পাঁচ কর্মীকে জেরার পর চক্ষু চড়কগাছ পুলিসের। চাকরির আশ্বাসসহ সেখানে রীতিমতো প্রশিক্ষণেরও আয়োজন ছিল। এমনকী ‘প্রশিক্ষণ’ শেষে ‘সফল’ যুবদের চাকরির ‘নিয়োগপত্র’ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছিল! এজন্য নিয়োগ পিছু নেওয়া হতো ‘মাত্র’ ২ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। এই ‘স্বচ্ছ ভারত’ ভুয়ো টোলপ্লাজা, পুলিস, সিবিআই ও সিআইডি অফিসার, আমলা, এমনকী ভুয়ো আইনজীবী ও বিচারক পর্যন্তও বিস্তর দেখে নিয়েছে। তেমন কিছু দুষ্কৃতীকে ধরে আদালতের সামনে বার বার হাজিরও করেছে পুলিস। কিন্তু তাতে যে দুর্বৃত্তদের কিছুমাত্র যায় আসে না তার প্রমাণ এবার সামনে এসেছে আরও জোরালোভাবে। কেননা কেবল বিচারক সেজেই ক্ষান্ত হয়নি, একেবারে ভুয়ো আদালতও খুলে বসেছে প্রতারক চক্র। আর ওই সাজানো কোর্ট থেকেই চলেছে মারাত্মক প্রতারণা! সোজা কথায়, গুজরাতে গান্ধীনগরের এই ঘটনাটি অতীতের সমস্ত বিস্ময়কর দৃষ্টান্তকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে, এই চক্রের মাথার কাছে বাকি সবাই নিছক দুগ্ধপোষ্য শিশু।
প্রতারণা বিভিন্ন রাজ্যেই কমবেশি হয়ে থাকে। সম্প্রতি সামনে আসা দুটি মারাত্মক চক্রের একটি ছত্তিশগড়ে এবং অন্যটি গুজরাতে। কাকতালীয় কি? সে যাই হোক, দুটি রাজ্যই কিন্তু মোদিবাবুদের সাধের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ চালিত। ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি আলো করে আছেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বিষ্ণুদেও সাই। অন্যদিকে, প্রবীণ বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল গুজরাত সরকারের শীর্ষকর্তা। গুজরাতের আরও বড় পরিচয় দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই রাজ্যেরই ভূমিপুত্র। পুলিসি তদন্তে প্রকাশ, এক-আধদিন নয়, গান্ধীনগরে ওই ভুয়ো কোর্ট সক্রিয় ছিল টানা পাঁচবছর! সেখানকার এজলাসে রীতিমতো সওয়াল-জবাব শেষে ‘বিচারক’ সেজে বসা লোকটি ‘রায়’ও দিতেন। বহু কোটি টাকা প্রতারণার এই তাজ্জব ব্যাপার ফাঁস হতেই নড়েচড়ে বসেছে একযোগে প্রশাসন, আইন ও বিচারের আসন। ট্রাইবুনালের বিচারক সেজে মানুষকে প্রতারণা করার অভিযোগে মরিস স্যামুয়েল ক্রিশ্চিয়ান নামে এক গুণধরকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। ‘আইন আইনের পথে চলবে’—এবার এই সাতবাসি বুলিটাই আওড়াবেন সবাই নিশ্চয়। সকলে সঙ্গে এও যোগ করতে ভুলবেন না যে—‘অভিযুক্তরা আমাদের দলের লোক নয়। এই দুষ্কৃতীদের আমরা কোনোদিন দেখিনি। ওদের নামও শুনিনি এর আগে।’ এমনকী এই ‘ধোয়া তুলসীপাতাগণ’ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়বেন ‘দোষীদের বিচার এবং কঠোর শাস্তি’র দাবিতে। আশপাশে ছোটবড় নির্বাচন থাকলে তো কথাই নেই। আর এখানেই প্রশ্ন, এত বড় বড় কাণ্ড চলার সময় রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীরা কী খেয়ে কাটান? তাঁদের নজরে কিছুই পড়ে না কোন জাদুতে? জনগণের করের টাকায় পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ পোষা কী কারণে? এই যদি রাজ্যে রাজ্যে প্রশাসনিক সক্রিয়তার নমুনা হয়, তবে তেমন প্রশাসনকে দুয়ো দেওয়ার ভাষা সত্যিই কম পড়ে যায়। আরও পরিতাপের বিষয়, আর্থিক প্রতারণার মামলায় দোষী চিহ্নিতকরণ এবং কঠোর সাজা প্রদানের হার একেবারেই নগণ্য। এই ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতার ব্যাধিটিও ক্রনিক। এই রোগ সারাবার দাওয়াই আছে বটে কিন্তু তা প্রেসক্রাইব করার মতো ডাক্তারদের শীতঘুম ভাঙানোর আয়োজন এই পোড়ার দেশে সামান্যই। অতএব নাগরিককেই সচেতন থাকতে সবরকমে। কারণ ঠকে যাওয়ার পর প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার সামনে হাত কামড়ানো ছাড়া বস্তুত কিছুই করার থাকবে না সৎ নাগরিকের।