প্রায় সম্পূর্ণ কাজে আকস্মিক বিঘ্ন আসতে পারে। কর্মে অধিক পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। ... বিশদ
এর আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ৯টি ফর্মুলার ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছিল। গত এপ্রিলে, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাস আগেও একসঙ্গে ৮০০টি ওষুধের দামবৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছিল মোদি সরকার। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে নাগরিকের ঘাড়ে এই বিপুল ব্যয়ভার চাপিয়ে দেওয়া কোনও কল্যাণকামী সরকারের কাজ হতে পারে না। সরকারের এই জনবিরোধী ভূমিকার জোরালো প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। একটি নির্বাচিত সরকার কি শুধু বণিক শ্রেণির স্বার্থই দেখবে? শুধু ওষুধ নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে এই সরকারকে যতটা একতরফা ও ধারাবাহিকভাবে পুঁজিপতিদের পাশে দেখা যাচ্ছে তা বেনজির। এর মধ্যে ক্রনি পুঁজিবাদের দীর্ঘতর ছায়াটিই প্রকট হচ্ছে। শাসক দলের এমপি, এমএলএ’রা এই অন্যায় কারবারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অনুমতি যে পাবেন না, তা এক সহজ অনুমান। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই ব্যাপারে প্রয়োজন মতো সোচ্চার হচ্ছে না কেন? এবার এই প্রশ্নটিও জোরালো হচ্ছে বইকি!
আমাদের দেশের নীচের দিকের অর্ধেক মানুষের যা আয়পত্তরের দশা তাতে তাঁদের নুন আনতে পানতা ফুরোয়। আবার সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগও সরকার দেয় না। সরকারি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা পরিষেবা মেলে বটে তবে তা পর্যাপ্ত নয় এবং বেশিরভাগ ওষুধ রোগীর পরিবারকে বাইরে থেকেই কিনতে হয়। বলা বাহুল্য, সেসব অবশ্যই আগুন দামে। ওষুধসহ চিকিৎসা পরিষেবা এমন একটি জিনিস, যা জন্ম থেকে মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত সব বয়সি, সব শ্রেণির মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক। তবে এগুলির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি বাড়ে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে—প্রবীণ নাগরিকদের তো প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। অথচ বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক সামর্থ্য সবচেয়ে কম। কেননা, ওই বয়সে তাঁদের রোজগারের ক্ষমতা চলে যায় এবং বেশিরভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পেনশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেমন ইপিএস-৯৫ স্কিমে পেনশনের নামে একটি পরিবারকে মাসান্তে যে টাকা দেওয়া হয়, তার চেয়ে নির্মম রসিকতা এই ভূভারতে নেই! বছরের পর বছর দাবি জানিয়েও এই ক্ষেত্রের লক্ষ লক্ষ পরিবার এই অনাচার দূর করতে পারেনি। সরকার যথারীতি বোবা-কালার মতোই আচরণ করে চলেছে। দারিদ্র্যসীমার নীচের পরিবারগুলির জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিও এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে প্রহসন মাত্র। এমনই করুণ যে ভারতের পরিস্থিতি সেই দেশের সরকারের তরফে ওষুধ কোম্পানিগুলির আজগুবি আবদার লাগাতার মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানানোর ভাষা সত্যিই কম পড়ে। সংস্থাগুলির খরচ কমানোর আরও হাজারো খাত রয়েছে। তারা যদি নিজের থেকেই সেসব দিকে নজর না দেয় সরকারের উচিত সেগুলি নির্দেশ করা। নানা অজুহাতে ওষুধের মতো জীবনদায়ী জিনিসের দামবৃদ্ধির দাবি কখনোই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সরকারও যদি ওষুধ কোম্পানিগুলির সঙ্গে অহরহ এমন সংগত করে চলে, তবে ধরে নিতে হবে যে গরিব-মধ্যবিত্তের জীবনের দাম এই সরকারের কাছে বণিকের তুলনায় তুচ্ছ! এই বেনিয়ার সরকার জনগণ চায় না।