পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
কিন্তু বিশেষ কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্রই আবার এ-যুগেও বড়ই প্রাসঙ্গিক, বড়ই গুরুত্বপূরণ হয়ে উঠতে পারে। এই তালিকায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাম সম্ভবত সবার উপরে। রাজীব গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক যোগদানের খবর বহু পুরনো ওই প্রসঙ্গটিকে ফের উস্কে দিচ্ছে। বুধবারই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু সাধারণ সম্পাদকই নয়, তাঁকে দলের তরফে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাংগঠনিক দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। লোকসভা ভোটের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। কোনও ভয়ঙ্কর ঘটনা না ঘটলে আগামী মাস তিনেকের মধ্যে ভোটপর্ব শুরু হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়াঙ্কাকে সরাসরি রাজনীতিতে যোগদান করানো কংগ্রেসে পরিবারতন্ত্র আরও দৃঢ়ভাবে কায়েম করার একটি পদক্ষেপ বলে অভিযোগ উঠতেই পারে। যদিও কংগ্রেসের সুদীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে এই পরিবারটির সম্পর্ক সুনিবিড়। তৎকালীন নামী ব্যারিস্টার মতিলাল নেহরুর যোগদানের মাধ্যমে পরিবারটির সঙ্গে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সম্পর্কের সূচনা হয়। মতিলাল একাধিকবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেই ধারা বহন করে কংগ্রসকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রথম সারিতে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে নেহরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধী, ইন্দিরাপুত্র রাজীব গান্ধী, রাজীবপত্নী সোনিয়া গান্ধী এবং অধুনা সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধী। বলা বাহুল্য, এই দলটির নেতৃত্বে এমন পরিবারতন্ত্রের ধারা বজায় থাকার দ্বিতীয় উদাহরণ ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল। একইসঙ্গে দেশের জন্য ত্যাগস্বীকার ও বলিদানের ক্ষেত্রেও এই উপমহাদেশে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সঙ্গে তুলনীয় অন্যকোনও পরিবারকে খুঁজে পাওয়াও অসম্ভবেরই নামান্তর। এই বিষয়টিকেও ভুললে সুবিচার করা হবে না। শুধু তাই নয়, একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে, এই পরিবারটিকে বাদ দিয়ে কংগ্রেস দলের পক্ষে সাবলীলভাবে পথ চলাও খুব কঠিন।
রাহুল গান্ধী এখন কংগ্রেসের সভাপতি। মা সোনিয়া ছেলের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেও বাস্তব কারণেই দলের রাশ এখনও কিছুটা নিজের হাতেই রেখেছেন। কিন্তু শারীরিক কারণেই তা আরও বেশিদিন চালিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় বলেই জনমানসে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন লোকসভা ভোটেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলেই খবর। এই পরিস্থিতিতে কন্যা প্রিয়াঙ্কা মায়ের সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্রিয় হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনৈতিক অভিষেক অবশ্যই কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার করবে তার আভাস মিলতে শুরু করেছে বুধবার থেকেই। রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস দপ্তরে মিষ্টি বিলি থেকে উচ্ছ্বাসপ্রকাশ সবই চলেছে। এমনকী উত্তরপ্রদেশের লখনউতে প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে দেবী দুর্গা ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবির কাছাকাছি ঠাঁই দেওয়া হয়েছে প্রিয়াঙ্কার ছবিকে। সঙ্গে লেখা—ইন্দিরা ইজ ব্যাক। ইন্দিরার প্রত্যাবর্তন। প্রিয়াঙ্কার মধ্যেই ইন্দিরার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন ওখানকার কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।
তবে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাস্তবে ঠাকুমা ইন্দিরার কতটা উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারবেন তা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু আপাতত তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে যে যথেষ্ট চাপের মুখে ফেলে দেবেন তা সহজেই অনুমেয়। মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী আর যোগীর গড় গোরক্ষপুর- দুটোই পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মধ্যে পড়ে। একসময় রাহুলকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, তাঁকে হাসি-মস্করার পাত্রে পরিণত করার সবরকম চেষ্টা চালিয়েও গেরুয়া শিবিরকে ২০১৮ সালে কোন পরিণতির মুখে পড়তে হয়েছে তা সম্ভবত ওই দুই ব্যক্তিও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। এবার ২০১৯-এ প্রিয়াঙ্কা তাঁদের জন্য কী ‘উপহার’ নিয়ে আসছেন কে জানে!