উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড – ১ (সুহের)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ম্যাচের শেষলগ্নে নর্থ ইস্টের আক্রমণের চাপে তখন কাঁপছেন সন্দেশ-তিরিরা। তাঁদেরই করা একটি ক্লিয়ারেন্স উড়ে এল সাইড বেঞ্চের দিকে। সবুজ-মেরুন কোচ হাবাস তা সঙ্গেসঙ্গে আরও দূরে ঠেলে দেন। স্বাভাবিকভাবেই হলুদ কার্ড দেখতে হয় তাঁকে। ঠিক তারপরেই রেফারির ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই স্বস্তির হাওয়া বয় এটিকে-মোহন বাগান শিবিরে। প্রীতম-অরিন্দমদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যেন বলতে চাইছিল, যাক! জিতে মাঠ ছাড়া গেল। মঙ্গলবার আইএসএলের দ্বিতীয় পর্বের সেমি-ফাইনালে নর্থ ইস্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। প্রথম পর্বের সেমি-ফাইনালে দু’দলের ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ গোলে। শনিবার মুম্বই সিটি এফসি’র বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নামার আগে হাবাসকে চিন্তায় রাখবে তাঁর দলের মাঝমাঠ ও রক্ষণ।
প্রথম দফার সেমি-ফাইনালের মতো এদিনও একই ভুল করল এটিকে মোহন বাগান। প্রথমার্ধে লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে দুম করে রক্ষণাত্মক খেলা অর্থহীন। তার উপর দলের দুই ডিপ ডিফেন্ডার একেবারেই ছন্দে নেই। টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি দু’জনের শরীরেই। এছাড়া হাবাসের মাঝমাঠে দক্ষ স্কিমারের অভাব। কেউই বল হোল্ড করে ম্যাচের গতি মন্থর করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও মোহন বাগান জিতল কেন? উত্তর একটাই, নর্থ ইস্টের বদান্যতায়। অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাচাডো বড়লোকের বেপরোয়া ছেলের মতো পেনাল্টি উড়িয়ে না দিলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত।
এদিন নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের জমাট রক্ষণ ভাঙতে উইলিয়ামস-জাভিরা ম্যাচের শুরু থেকেই গোল লক্ষ্য করে শট নিতে থাকেন। তৃতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জাভির শট পোস্টে ধাক্কা খায়। ম্যাচের প্রারম্ভিক পর্বে সবুজ-মেরুনের আক্রমণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে প্রতি-আক্রমণে সেইভাবে ফায়দা তুলতে পারেনি খালিদ জামিলের দল। ২৩ মিনিটে মাচাডোর শট ফিস্ট করেন সবুজ-মেরুন গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য। এটাই প্রথমার্ধে একমাত্র আক্রমণ ‘হাইল্যান্ডার’দের। হাবাসের দল আক্রমণের ধারা বজায় রাখার সুফল পায়। ৩৮ মিনিটেই রয় কৃষ্ণার থ্রু ধরে গতি বাড়িয়ে বক্সে ঢোকেন ডেভিড উইলিয়ামস। আশুতোষ মেহতার বাধা এড়িয়ে নেওয়া তাঁর শট জালে জড়ায় (১-০)। গোল হওয়ার পর রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে থেকে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে আনন্দে মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুঁড়ে দেন স্প্যানিশ কোচ।
এদিন প্রথম একাদশে অফ ফর্মে থাকা মিডফিল্ডার মার্সেলিনহোর বদলে জাভি হার্নান্ডেজকে রাখেন হাবাস। ৪১ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে ম্যাকহ্যাগের হেড ক্রসপিসের উপর দিয়ে বাইরে যায়। প্রথমার্ধের সংযোজিত সময়ে নর্থ ইস্ট সুযোগ নষ্ট করে। প্রীতম কোটালের ভুল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে লালেংমাওইয়ার ফ্লিক গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন শুভাশিস বসু।
বিরতির পর প্রতিপক্ষ রক্ষণে চাপ বাড়ান নর্থ ইস্ট অ্যাটাকাররা। ৪৮ মিনিটে সুহেরের বাঁপায়ের শট পোস্টে লাগে। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর এটিকে-মোহন বাগান রক্ষণ জমাট করার চেষ্টা করে। যার ফলে নর্থ ইস্টের আক্রমণে তীব্রতা বাড়ে। এই সময় দলের প্রয়োজনে নেমে আসেন রয় কৃষ্ণা। ৬৭ মিনিটে তাঁর ফিড করা বল পেয়ে ম্যাকহ্যাগ সাইড নেটে মারেন। পরের মিনিটেই রয় কৃষ্ণার থ্রু ধরে বাঁদিক থেকে ইনসাইড কাট করে গুরজিন্দর ও শরিফকে টপকে বাঁপায়ের শটে লক্ষ্যভেদ মনবীর সিংয়ের (২-০)। এই অর্ধে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের মাঝমাঠকে অবিন্যস্ত মনে হয়েছে। লেনি রডরিগসকে চিনতে হচ্ছিল স্রেফ জার্সি নম্বর দেখে! কার্ল ম্যাকহ্যাগ, জাভিদের খেলায় ছিল না ছন্দ। প্রতিপক্ষ চাপ বাড়াতেই কিছুটা কেঁপে গেলেন আনফিট সন্দেশ ও তাঁর সতীর্থ তিরি। ৭৪ মিনিটে কর্নার থেকে ল্যাম্বটের হেড ক্রসপিসে লেগে ফিরে এলে সুহেরের লক্ষ্যভেদ (২-১)। ৮১ মিনিটে শুভাশিসের কভারিংয়ে সিলা শরীরের ভারসাম্য হারালে রেফারি আচমকা পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু মাচাডোর স্পট কিক পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে যায়। ৮৬ মিনিটে এটিকে মোহন বাগান ডিফেন্ডারদের বদান্যতায় নর্থ ইস্টের সাইডব্যাক আশুতোষ মেহতা সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। সংযোজিত সময়ে কৃষ্ণার সাজিয়ে দেওয়া বল অবলীলায় বাইরে মারেন পরিবর্ত জয়েশ রানে।
এটিকে মোহন বাগান: অরিন্দম, প্রীতম, সন্দেশ, তিরি, শুভাশিস, মনবীর, লেনি (মাইকেল), ম্যাকহ্যাগ, জাভি (প্রবীর), রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামস (জয়েশ রানে)।