শেয়ার ও বিমা সূত্রে অর্থাগম হতে পারে। কাজের প্রসার ও নতুন কর্মলাভের সম্ভাবনা। বিদ্যা হবে। ... বিশদ
কুতুবুদ্দিনের ছোটবেলা কেটেছে মুরারই দু’ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম মিত্রপুরে। বর্তমানে তিনি বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ডের বাসিন্দা। ছোট থেকেই প্রকৃতির কোলে গাছগাছালি, পাখপাখালির সঙ্গে তাঁরও বড় হয়ে ওঠা। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তাতে হারিয়েছেন ছোটবেলার সেই বন্ধুদের। ছোটবেলার সেই পরিচিত পাখিদের ডাক শুনতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। এই মন খারাপের বশেই পুরনো পরিবেশ ফেরাতে একপ্রকার জেদ ধরেন। ২০০০ সাল থেকে শুরু করেন বটগাছ লাগানো। ডাল কেটে নিজেই তৈরি করেন বটগাছ। এ বিষয়ে কুতুবউদ্দিন বলেন, বটগাছের চারা তৈরি করা খুব কঠিন নয়, ৬ ইঞ্চি লম্বা ও এক ইঞ্চি ডায়ামিটারের ডাল কেটে ওষুধ দিয়ে বালির মধ্যে বসিয়ে দিলে দু’ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় ও নতুন পাতা বেরতে শুরু করে। প্রথমদিকে নিজের চেষ্টায় শান্তিনিকেতনের আশেপাশের এলাকায় রোপন করতেন বটগাছ। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পেরে বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও সংগঠন তাঁর কাছ থেকে চারা নিতে শুরু করে। প্রথম থেকেই তিনি বিষয়টি নোটবন্দি করতেন। বর্তমানে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৯৮৫-তে।
কর্মসূত্রে সাতবছর ছিলেন দিল্লিতে। রেলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখানেও নিজের নেশা ও ইচ্ছার জোরে বটগাছের চারা তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের সহায়তায় বটগাছ লাগিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এভাবেই দিল্লি থেকে কর্ণাটকের উদীপি, রাজস্থানের পোখরান, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, আগ্রা, আলিগড় প্রভৃতি জায়গায় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের সাহায্য নিয়ে রোপন করেছেন বটের চারা। ছোট থেকে পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন বলে বর্তমানে তিনি বোলপুরে ফিরে শান্তিনিকেতনের গোয়ালপাড়া এলাকার একবিঘা জায়গার ওপর রাঙ্গামাটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি নাম দিয়ে একটি কোচিং সেন্টার শুরু করেছেন। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) অনুমোদিত তাঁর কোচিংয়ে অনূর্ধ্ব ১৩ ও ১৫ বছরের প্রায় ৭০ জন ছেলেমেয়েকে কোচিং দেন তিনি। এখান থেকে উপার্জিত অর্থ কাজে লাগান বটগাছের চারা তৈরিতে।
শুধুই বটগাছ কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কুতুবউদ্দিন বলেন, প্রথমত বটগাছ বহু বছর বাঁচে। শাখাপ্রশাখা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বটগাছ মূল ভূমিক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বটগাছের নিবিড় ছায়ায় আশ্রয় নিতে পছন্দ করে মানুষ ও পশুপাখি। বটগাছের ফল পাখিদের খুব প্রিয় বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া বটগাছ শক্তিশালী হয়, ঝড়ঝঞ্ঝা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে। তাই অধিকাংশ পাখিই বটগাছে তাদের বাসা বানাতে পছন্দ করে। জীব বৈচিত্রে পাখিদের ভূমিকাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তাই বটগাছ বেশি থাকলে পাখি ও অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। এছাড়া বটগাছের কাঠ থেকে যেহেতু কোনও আসবাবপত্র তৈরি হয় না, তাই মানুষের আক্রমণ বা মানুষের হাতে বটগাছ কাটা পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। পাশাপাশি হিন্দু ধর্মীয় ভাবাবেগও জড়িয়ে থাকে বটগাছকে ঘিরে। তাই বটগাছ লাগালে পরিবেশ আরও সবুজ হয়ে উঠবে এই ভাবনাতেই তাঁর এই বিশাল কর্মকাণ্ড।