বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জেলা প্রশাসনকে একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের ভরতপুর-২ ব্লক ছাড়া বাকি সব এলাকায় আর্সেনিক কবলিত। ভূগর্ভস্থ জল দেদার তোলার খেসারত জেলার বাসিন্দাদের দিতে হচ্ছে।
আর্সেনিকের থাবা যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা জলঙ্গির এই প্রত্যন্ত গ্রামে এলে টের পাওয়া যায়। গ্রামের ফিরোজা বিবির পরিবারের চারজন সদস্য আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার পর মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে গত জুলাই মাসে মারা গিয়েছেন। ভেলোর এবং কলকাতায় ওর চিকিৎসা করিয়েছিলাম। চিকিৎসকরা নখ এবং চুল পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, আর্সেনিক থেকেই ক্যান্সার হয়েছে। আমাদের পরিবারের আরও তিনজন আর্সেনিকে আক্রান্ত হওয়ার পর মারা গিয়েছেন। বাড়ির ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি। কোন জলে আর্সেনিক আছে তা জানি না। অন্য কোনও উপায় নেই। তাই নলকূপের জল পান করছি।
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা জিয়াউদ্দিনের পুরো শরীরে কালো দাগ। ভালোভাবে হাঁটাচলার ক্ষমতাও নেই। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। আর্সেনিক শরীরে থাবা বসানোর পর তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর একটা হাত কেটে বাদ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, আর্সেনিকের চিহ্ন দেখা যাওয়ার পরেই শরীরে একের পর রোগ দানা বাঁধতে থাকে। আমার কিডনিরও সমস্যা রয়েছে। হাঁটাচলা করতে পারি না। আর কত দিন বাঁচব জানি না। তবে সরকার যদি গ্রামের নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে কোনও কিছু ব্যবস্থা করে তাহলে খুব ভালো হয়।
স্থানীয়রা বলেন, গ্রামে প্রায় ১৪০০বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের বহুজনই এই রোগে আক্রান্ত। আর্সেনিকের জন্য এই গ্রামে অনেকেই মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না। অনেকের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও তা ভেঙে গিয়েছে। বহুবছর আগেই নলকূপের জলে আর্সেনিকে সন্ধান পাওয়া যায়। প্রথমদিকে বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার জন্য গ্রামবাসীরা তা নিয়ে মাথা ঘামাননি। কিন্তু পরবর্তী কালে শরীরে কালো ছাপ ক্যান্সারে পরিণত হওয়ায় তাঁদের টনক নড়ে।
খয়রামারি পঞ্চায়েতে সদস্যা তানবেরা বিবি বলেন, আমাদের গ্রামের অনেকেরই আর্সেনিক থেকে ক্যান্সার হয়েছে। চোখের সামনে মৃত্যু দেখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। গ্রামের আটজন মারা গিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও কতজনকে এভাবে মরতে হবে তা জানি না। গ্রামের আরেক বাসিন্দা মান্নান মণ্ডল বলেন, শরীরে প্রথমে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। পরে তা গভীর ক্ষতে পরিণত হচ্ছে। কিছু দিন পরে সেটা ক্যান্সার হয়ে যাচ্ছে। জল খেতেই ভয় লাগে। বাইরের কেউ গ্রামে এলে জল খেতে চায় না। আমরাও কাউকে জল খাওয়ার জন্য অনুরোধ করি না। কারণ আমাদের মতো পরিণতি অন্য কারও হোক তা কখনই চাই না।
জলঙ্গির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুক্লা সরকার বলেন, আমাদের এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে আর্সেনিকে প্রকোপ রয়েছে। তবে ওই গ্রামটি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। এরকম হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জলঙ্গির বিডিও কৌস্তুভকান্তি দাস বলেন, ওই গ্রামে সজলধারা প্রকল্পে আর্সেনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করা হবে। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।