নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ৪ নভেম্বর: শেষ মুহূর্তে পিছু হটলেন নরেন্দ্র মোদি। আগামী বছর ১৬ দেশের মধ্যে যে মুক্ত বাণিজ্য সমঝোতা হতে চলেছে, সেই ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তিকে দেশের স্বার্থ-পরিপন্থী হিসেবে সংশয় প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী। এবং নাটকীয়ভাবে জানিয়ে দিলেন, ভারত চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না। মোদি বলেছেন, ভারতের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিবেকই আমাকে বাধা দিয়েছে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে। এই প্রস্তাবিত সমঝোতার অন্যতম প্রধান দুই শক্তিশালী রাষ্ট্র এতদিন ধরে ছিল ভারত ও চীন। কিন্তু তার জেরে ভারতের অর্থনীতি সংক্রান্ত কিছু উদ্বেগের সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে বলে মনে করে ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল মোদি সরকার। আজ বাকি ১৫টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত ছাড়া বাকি সকলেই এই চুক্তির পথে অগ্রসর হওয়াই সঙ্গত মনে করেছে এবং সেই রূপরেখাই নির্মাণ করা হবে এবার। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ভারত কী নেয় সেটা স্বাক্ষরের প্রাক্কালেই জানা যাবে। অর্থাৎ ওই ১৫ দেশ এখনও আশা করছে ভারতকে তারা বোঝাতে সক্ষম হবে যে পরিবর্তিত অর্থনীতির যুগে কেন এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। উল্লেখ্য, এতদিন ভারত এই চুক্তির পক্ষেই ছিল। স্বদেশেও মোদি সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তির ফলে ভারত উপকৃতই হবে বলে প্রচার করেছে। কিন্তু বিরোধী দল, অর্থনৈতিক মহলের একাংশ ও সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকে চুক্তির বিপক্ষে মত ছিল প্রবল। চুক্তি-বিরোধীদের যুক্তি ছিল, এই আন্তর্জাতিক সমঝোতায় দেশীয় বাণিজ্য ও ক্ষুদ্রও মাঝারি শিল্প কাঠামোর স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে না। অর্থনীতির মন্দা চলছেই। সেই মন্দার প্রবণতা আরও দ্রুত হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল সরকারকে। প্রধানত চীনের সামগ্রী আরও বেশি করে ভারতের বাজারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কৃষিক্ষেত্রের। ভারতীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যকে টপকে বিদেশি শস্য দখল করবে অভ্যন্তরীণ বাজার।
নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকে দুগ্ধজাত দ্রব্য ভারতের ডেয়ারি শিল্পকে প্রায় কোণঠাসাই করে দেবে। এছাড়া পণ্যহার নিয়েও চরম বৈষম্য রয়ে যাচ্ছে এই চুক্তিতে। বস্তুত এই আশঙ্কাগুলি সত্যি হলে অর্থনীতি আরও বেহাল হবে। আর তাই সেই ঝুঁকি নিতে রাজি নয় মোদি সরকার। অতএব নিরাপদ অবস্থান নিয়েই সরকার চুক্তি থেকে সরিয়ে নিল নিজেকে। আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে এই মুক্ত বাণিজ্য নীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই সময়সীমায় বিশ্বের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও আমদানি রপ্তানি নীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ভারতের স্বার্থকে সুরক্ষিত করবে যে আশ্বাসগুলি, সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হওয়ার সম্পূর্ণ লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি। ভারত মূল্যহার ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে উদ্বেগগুলি প্রকাশ করেছিল, তারও সমাধানের আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তাই প্রধানমন্ত্রীর অন্তরাত্মা বলছে ভারতের এই চুক্তিতে প্রবেশ না করাই যুক্তিযুক্ত। বস্তুত আজ ব্যাঙ্ককের ওই বৈঠকে চরম টানাপোড়েন চলেছে ভারতের অবস্থান নিয়ে। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির পাশাপাশি চীন, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপের অঙ্গ। চীনের নীতিকে অনুসরণ করে তাদেরই চালিকাশক্তি করার জন্য আসিয়ানভুক্ত বেশ কিছু দেশ ভারতকে অগ্রাহ্য করেই এই চুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। এই অংশের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া। কিন্তু গোষ্ঠীর বাকি অংশ ভারতকে সম্পূর্ণ একঘরে করতে রাজি নয়। তারা এখনও চায় ভারতের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে। তাই যৌথ বিবৃতিতেও আশা করা হয়েছে, আগামীদিনে ভারতকে পাশে পাওয়া যাবে।