সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
দমকলের অনুমতি নেই, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এডিডিএ’র শংসাপত্রে কারচুপি করতে হবে, সেটাও জলভাত! এইরকম প্রতিটি অনৈতিক কাজ পিছু বাঁধা রেট। মুখিয়ে রয়েছেন অসাধু কিছু কর্মী। তাঁদের হাতে কড়ে কড়ে টাকা গুঁজে দিলেই নিমেষে কাজ। সম্প্রতি বেশকিছু ঘটনা নজরে আসতে কপালে ভাঁজ পড়েছে পুরসভা ও এডিডিএ কর্তৃপক্ষের। যেমন ঘটনা এক, বেশ কয়েক বছর আগে এডিডিএ’র দেওয়া একটি শংসাপত্র দেখিয়ে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করাতে চেয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। তাঁকে দু’জন মালিকের নামে শংসাপত্র আনতে বলা হয়েছিল। ব্যবসায়ী আগের শংসাপত্র নকল করে বর্তমান এডিডিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারের সই নকল করে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করাতে দেন। পুরসভার সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেটি পাঠানো হয় এডিডিএ’র কাছে। তারাও নিশ্চিত হয় সইটি নকল। ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে এডিডিএ।
ঘটনা দুই, আসানসোল পুরসভার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে পুনর্বাসন দেওয়া জমির ডেভেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে এক প্রমোটার। তিনি এডিডিএ’র শংসাপত্র পেয়েই জমির পরিমাণ নিয়েই কারচুপি করেছেন। এক্ষেত্রেও ভুয়ো নথি জমা করে পুরসভার থেকে প্ল্যান পাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়টিও এডিডিএ’র নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কী পদক্ষেপ করে, সেদিকে তাকিয়ে তারা।
ঘটনা তিন, শহরে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে দমকলের ছাড়পত্র পাওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে বিল্ডিং প্ল্যান পাস করাতে দমকলের যে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে তা নকল। সাম্প্রতি এরকমই একটি নকল দমকলের শংসাপত্র নিয়ে প্ল্যান পাশ করাতে চেয়েছিলেন পুরসভার অনুমোদিত এক সার্ভেয়ার। বিষয়টি নজরে আসতেই এক বছরের জন্য তাঁর অনুমোদন সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
কী বলছে এডিডিএ ও পুরকর্তৃপক্ষ? এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগ আসছে। আমাদের শংসাপত্রে নকল সই করে বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানোর চেষ্টা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জমির পরিমাপেরও কারচুপি করা হচ্ছে। আমাদের নজরে এলেই সরাসরি থানায় অভিযোগ দায়ের করছি। আমরা চাই পুরসভাও এই পথে হাঁটুক। যে কোনও মূল্যে স্বচ্ছ পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’ আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা কোনও বেনিয়মই বরদাস্ত করব না। আগে বহু বিল্ডিংকে অনুমোদন ছাড়াই বর্দ্ধিত করা হয়েছে। আমরা সেগুলি ভেঙে ফেলছি। বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানোর জন্য ভুয়ো নথি জমা করার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ পুর এলাকা আসানসোল। শিল্পাঞ্চল ও খনিঅঞ্চল হওয়ায় আর্থিক প্রাচুর্য রয়েছে। ১৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই শহরের বাসিন্দা। পুরসভা সূত্রে দাবি, প্রতি মাসেই দেড়শো থেকে দু’শো বিল্ডিং প্ল্যান পাশের আবেদন আসে। যার মধ্যে বেশিরভাগই বহুতল। যার ভ্যালুয়েশন কোটি কোটি টাকা। সেই কারণেই ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তার জেরেই পুরসভায় অনৈতিক কাজকর্ম বেড়েছে। এই অসাধু চক্রকে এবার কীভবে প্রতিরোধ করে পুর ও এডিডিএ কর্তৃপক্ষ সেটাই এখন দেখার। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন শিল্পাঞ্চলের একটা বড় অংশের মানুষও।