সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
দৃষ্টিহীন সমর্থককে দেখে মাঠে অনেকেই অবাক। কেউ আবার ভালোবাসা উজাড় করে দিতে ব্যস্ত। আর যুধা? তাঁর হাতে ধরা সবুজ-মেরুন পতাকা বাতাসে টানটান। এ যে শুধু আবেগ নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। মাঠের রূপ, স্পর্শের রামধনুর মাধ্যম শুধুই কান। দাদার পাশে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় ভাই। উত্তেজনায় চেঁচিয়ে ওঠে, ‘দাদা পেনাল্টিইইইই....’ সবুজ শব্দ ওড়ে মেরুন ক্যানভাসে। দল জিতলে সব পেয়েছির আনন্দ। হারের স্তব্ধতায় হৃৎপিন্ডে যেন হাতুড়ি পেটায় কেউ। উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে যুধা বলে ওঠেন, ‘গোল খেয়ে গেল না রে ভাই?’ দাদার কাঁধে হাত রাখে দীপ্ত। ২৯ জুলাই ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের দিন। সাজানো মোহন বাগান তাঁবুতে ঢুঁ মারা চাই। প্রিয় ক্লাবের স্পর্শ, সবুজ ঘাসের গন্ধ, গ্যালারির চা, ছোলা, প্যাটিস আর ক্যান্টিনের খাবারের সঙ্গে যেন কতকালের বন্ধুতা। যুধা বলে, ‘জীবনের সব আক্ষেপ মুছে দিয়েছে মোহন বাগান। দেখতে না পেলেও ক্ষতি নেই, মনে যে সবুজ-মেরুনের আলপনা।’
গঙ্গাপাড়ের বনেদি শহর উত্তরপাড়া। অলি-গলিতে মোহন বাগান। প্যারিমোহন কলেজের ঢিলছোড়া দূরত্বে দে বাড়ি। কর্তা অরূপ দে পেশায় ব্যবসায়ী। স্ত্রী রুমা গৃহবধূ। তাদের যমজ সন্তান যুধাজিৎ ও দীপ্তজিৎ। বয়সে ৫ মিনিটের বড় যুধা। বিধি বাম। জন্মান্ধ। ছোটভাই দীপ্তরও হাই পাওয়ারের চশমা। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। দাবা আর মোহন বাগান, ওদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বাবার মুখেই ব্যারেটো-সনি নর্ডিদের গল্প শুনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো। ম্যাচ থাকলে সকাল থেকে টেনশন। কাছেই থাকেন মোহন বাগান সাব কমিটির সদস্য সৌম্যক দাস। আগ্রহ দেখে উপহার দেন সবুজ-মেরুন জার্সি। তাঁর সঙ্গেই মাঠে ছুটে যায় দু’ভাই। যাবতীয় ব্যস্ততার মাঝেও টিকিট পাঠাতে ভোলেন না সচিব দেবাশিস দত্ত।
সবুজ-মেরুন গ্যালারি যুধাজিৎ, দীপ্তজিতের প্রিয় ঠিকানা। ‘জয় মোহন বাগান’ স্লোগানে প্রাণের আরাম, জীবনের স্পন্দন। ওদের হাসিমুখ দেখে রান্নাঘরের কোণে আঁচলে চোখ মোছেন মা। রুমা দেবী বললেন, ‘ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা। আজ ওড়িশাকে হারিয়ে মোহন বাগান ফাইনালে উঠুক। ছেলেদুটো হাসবে। মা হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী-ই বা আছে?’
দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেসন কামিংসরা কি শুনতে পাচ্ছেন স্নেহাতুর মায়ের প্রার্থনা?