নিউ ইয়র্ক ও নয়াদিল্লি, ৭ মার্চ: রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় নাম রয়েছে জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাফিজ সইদের। নিজের নাম সেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল এই জঙ্গিনেতা। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার হাফিজের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই হাফিজের আইনজীবী হায়দর রসুল মির্জাকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, হাফিজের এই আর্জি খারিজ হওয়ার নেপথ্যে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। জানা গিয়েছে, জঙ্গি সংগঠন লস্করের সহ প্রতিষ্ঠাতা তথা ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার এই মূল চক্রীর গতিবিধি ও কার্যকলাপ নিয়ে একাধিক গোপন তথ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রসঙ্ঘে পেশ করেছিল নয়াদিল্লি। যার প্রেক্ষিতেই হাফিজের আর্জি খারিজ করে দেয় রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এদিকে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা দিল পাকিস্তানও। হাফিজের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে আসার ভিসা চেয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি প্রতিনিধি দল। পত্রপাঠ সেই আবেদন খারিজ করে দেয় নিউ ইয়র্কের পাক দূতাবাস। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে মুখোমুখি বসে সাক্ষাৎকার নিতে হয় প্রতিনিধিদের। কিন্তু, পাকিস্তান রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধিদের ভিসা দিতে অস্বীকার করায়, সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। তবে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই সাক্ষাৎকার নেবেন বলে খবর মিলেছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে দিলে হাফিজ বেফাঁস কিছু বলে বসতে পারে। যাতে বিপাকে পড়তে হতে পারে ইসলামাবাদকে। তাই আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
২০০৮ সালে মুম্বইয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে জামাতকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় যুক্ত করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তারপর থেকে পাকিস্তানেই গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে জামাত-প্রধানের। ২০১৭ সালে লাহোরের একটি আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা মির্জা অ্যান্ড মির্জা’র মাধ্যমে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে সেই নিষেধাজ্ঞা তোলার আর্জি জানায় হাফিজ। ভারতের পাশাপাশি ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মতো দেশও হাফিজের ওই আর্জির তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে হাফিজের আবেদন যে রাষ্ট্রসঙ্ঘ খারিজ করবেই, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে হাফিজের এই আর্জির বিরোধিতা করেনি পাকিস্তান। ইমরান খানের সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিদমনে কোমর বেঁধে নামার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু, আজও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবে প্রতিফলন ঘটেনি। হাফিজের মতোই অন্য একটি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের মাথা মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধেও এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পাকিস্তান।