নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্তে আজ, শনিবার সকাল থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ল সিবিআই। এদিন সকাল থেকে রাজ্যের একাধিক জেলায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, আসানসোল–সহ রাজ্যের মোট ৩০টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপশি রাজ্যের বাইরে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডের আরও ১৫ জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে। কয়লা পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সল্টলেকের দুটি বাড়ি সহ অনান্য বাড়ি এবং অফিসেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এমনকী লালা ঘনিষ্ঠদের বাড়িতেও চলছে সিবিআইয়ের ম্যারাথন তল্লাশি। জানা গিয়েছে, এদিন সকালে নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই আধিকারিকদের কয়েকটি টিম বের হয়। সেই টিমের পক্ষ থেকেই এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কয়লা পাচার কাণ্ডে প্রথমে তদন্তে নামে আয়কর দপ্তর। তদন্তে কী তথ্য উঠে এসেছে এবং কী প্রামান্য নথি প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে, তা বিশদে জানতে চেয়ে পরে সিবিআই চিঠি দেয় আয়কর দপ্তরকে। তদন্ত সংক্রান্ত ফাইলও চেয়ে পাঠানো হয়। সেই ফাইল হাতে আসার পরই জোরকদমে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। এরই মাঝে তল্লাশি অভিযান চলাকালীন এক ইসিএল আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জানা গিয়েছে, আজ তল্লাশি অভিযান চালান হয় রানীগঞ্জ জামুরিয়া অন্ডাল থানার বিভিন্ন ইসিএলের এরিয়া অফিসে ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বাড়িতেও। কুনুসতোরিয়া এরিয়া সিকিউরিটি ইন্সিপেক্টর ধনঞ্জয় রাই শ্রীপুরে কোয়র্টারেই থাকতেন। তাঁর কোয়ার্টারেও হানা দেয় সিবিআই-এর আধিকারিকরা। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জানা যাচ্ছে, জেরার সময়ই অসুস্থতা বোধ করেন। তাঁকে কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পাশাপাশি শ্রীপুর এরিয়ার জিএম বাংলাতেও সিবিআই অভিযান চালাচ্ছে। এমনকী কাজোরা এরিয়া জিএম বাংলাতেও সিবিআই হানা দিয়েছে। ইসিএলের এক জিএমকে আটকও করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়লা পাচার কাণ্ডের মূল চক্রী লালার কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত এনামুলও। লালার কয়লা যাতে মুর্শিদাবাদ দিয়ে উত্তরবঙ্গে সহজেই পাচার হয় সেটা নিশ্চিত করত এনামুলের লোকজনেরাই। তদন্ত শুরু হলে উঠে আসে গরু পাচার কাণ্ডে ধৃত এনামুলের সঙ্গে লালার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা। কলকাতায় শেক্সপিয়র সরণি–সহ একাধিক এলাকায় তার বাড়ি ও অফিসে হানা দেয় আয়কর দপ্তর। সেখান থেকে উদ্ধার হয় বহু নথিপত্র। মূলত সেখান থেকেই অনুপ ও এনামুলের সম্পর্কের সুস্পষ্ট হদিশ মেলে। সেই সূত্র ধরেই ছ’জন ব্যবসায়ীকে নোটিসও পাঠায় আয়কর দপ্তর। গত ১৭ নভেম্বর গরু পাচার কাণ্ডে বিএসএফ কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমারকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। জেরায় জানা যায়, ট্রাকে করে কয়লা পাচারে লালাকে সাহায্য করত এনামুল। এরপরই আজ পশ্চিমবঙ্গের ৩০টি জায়গা সহ দেশের মোট ৪৫টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই।