সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
দোহা: দিনে দুপুরে না হলেও মঙ্গলবার গোল চুরির সাক্ষী রইলেন বিশ্ববাসী। গোললাইন অতিক্রম করা সত্ত্বেও সেই বল টেনে মাঠের মধ্যে এনে গোল করল কাতার। সহকারী রেফারি সবকিছু দেখা সত্ত্বেও যেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রজনী’ও হতে পারেন। ভারতীয় ফুটবলাররা বারবার প্রতিবাদ জানালেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত আর প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের অখেলোয়াড়সুলভ মানসিকতার খেসারত দিতে হল স্টিমাচ-ব্রিগেডকে। অন্যায় ভাবে করা প্রতিপক্ষের এই গোল ভারতীয় ফুটবলারদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করল। মাস্ট উইন ম্যাচে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-২ ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিল স্টিমাচ ব্রিগেড। ম্যাচে ভারতের হয়ে স্কোরশিটে নাম তোলেন লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে। কাতারের দুই গোলদাতা ইউসুফ আমেন ও আহমেদ আল-রায়ি। ভারতীয় দলের সঙ্গে এমন দ্বিচারিতা মেনে নিতে পারছেন না ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে। তিনি জানান, ‘এটা খুবই হতাশার। আমরা দ্রুত চিফ রেফারি অফিসার ট্রেভর ক্যাটেলকে ভিডিও ফুটেজ পাঠাচ্ছি। তাঁর পরামর্শ মতো কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে কখনও দ্বিতীয় রাউন্ডের গণ্ডি টপকতে পারেনি ভারত। তবে এবার স্টিমাচ-ব্রিগেডের কাছে ইতিহাস গড়ার সুর্বণ সুযোগ ছিল। ঘরের মাঠে কুয়েতের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ে অবশ্য আগেই সেই পথ কঠিন করেছিলেন গুরপ্রীতরা। ফলে মঙ্গলবার কাতারের বিরুদ্ধে জয় ছাড়া কোনও বিকল্প পথ ছিল না তাঁদের সামনে। এমনকী, ক্রোট কোচের কাছেও এই লড়াই ছিল অস্তিত্বের। তাই মরণ-বাঁচন ম্যাচে দলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের পথে হাঁটেন তিনি। বিশেষত মাঝমাঠ জমাট রাখতে ব্রেন্ডন ও সুরেশকে শুরু থেকে খেলান তিনি। এছাড়া কুয়েত ম্যাচের পরই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন সুনীল ছেত্রী। মঙ্গলবার কাতারের বিরুদ্ধে তাঁর অভাব ঢাকাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মনবীর-রহিম আলিদের সামনে। পক্ষান্তরে, আফগানিস্তান ম্যাচের পর ভারতের বিরুদ্ধেও তরুণ ফুটবলারদের রেখে দল সাজান কাতার কোচ। প্রথম একাদশে সাত জন ফুটবলার ছিলেন অনূর্ধ্ব-২৩।
পাঁচ বছর আগে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে পূর্ণশক্তির কাতারের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ে মাঠ ছেড়েছিল সুনীলহীন ভারত। সেই পারফরম্যান্স থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মঙ্গলবার জয়ের জন্য ঝাঁপান ছাংতেরা। প্রথম ১০ মিনিট ভারতীয় রক্ষণে চাপ বজায় রেখেছিলেন কাতার ফুটবলাররা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার থেকে ভাসানো বলে ফ্লিক করেন আল হাসমি। তবে দুরন্ত তৎপরতায় সেই বল বিপন্মুক্ত করেন গুরপ্রীত। এরপর ১২ মিনিটে আলরাহির শট গোললাইন সেভ করেন মেহতাব সিং।
প্রাথমিক চাপ সামলে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। ৩২ মিনিটে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচে লিড নিতে পারত স্টিমাচ-ব্রিগেড। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও তা জালে ঠেলকে ব্যর্থ মনবীর সিং। এমনকী ফিরতি বল পেয়েও তা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ছাংতে। তবে সেই ভুল শুধরে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত গোল তুলে নেয় ভারত। ব্রেন্ডনের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে যোগ্য সুযোগসন্ধানীর মতো বক্সে পৌঁছে গিয়েছিলেন ছাংতে। তারপর সেই বল প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করে জালে জড়াতে ভুল করেননি এই মিজো ফুটবলার (১-০)।
প্রথমার্ধে এই এক গোলের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে ভারত। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও একবার গোললাইন সেভে দলের দুর্গ অক্ষত রাখেন মেহতাব। এই পর্বে উইংয়ে গতি বাড়াতে রহিম আলির পরিবর্তে লিস্টনকে মাঠে নামান স্টিমাচ। একইসঙ্গে ব্রেন্ডনের জায়গায় আসেন সাহাল। তবে ৭৩ মিনিটে গোল চুরি ভারতের যাবতীয় লড়াই শেষ করে দেয়। হাতে তখনও ২৭ মিনিট সময় থাকলেও, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ছাংতেরা। একাধিক মিস পাস আর ছোটছোট ভুলে প্রতিপক্ষকে লড়াইয়ে জমি করে দেন তাঁরা। ৮৫ মিনিটে সাহালের ভুলে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় গোল তুলে নেয় কাতার।
ভারত: গুরপ্রীত, মেহতাব, রাহুল, আনোয়ার, জয় (এডমুন্ড), সুরেশ, ব্রেন্ডন (সাহাল), মনবীর (বিক্রমপ্রতাপ), জ্যাকসন, ছাংতে (নন্দ) ও রহিম (লিস্টন)।