যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
ভবানীপুর বকুলবাগানের ঠাকুর দেখে মেট্রো ধরার জন্য টালিগঞ্জ স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন এক দম্পতি। এমন সময় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে মহিলা মৃদু ধমকের সুরে স্বামীকে বলে উঠলেন, ‘বলেছিলাম ছাতা নিয়ে বেরতে। তুমি তো আমার কথা শুনলে না!’ তবে শেষ পর্যন্ত ছাতা লাগেনি। তবে এদিন ভ্যাপসা গরমে ঘামে ভিজতে হয়েছে সবাইকে। বিকেলে ত্রিধারা সম্মিলনীতে গিয়ে দেখা গেল, সামনের রাস্তায় শুধুই কালো মাথার ভিড়। পরিস্থিতি এমন হয় যে রাসবিহারী মোড় থেকে গড়িয়াহাট পর্যন্ত ট্রাফিক সামলাতে হিমশিম খায় পুলিস। ত্রিধারা থেকে বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে যাওয়ার জন্য সিগন্যাল ভেঙে এগচ্ছেন অজস্র মানুষ। নতুন করে গার্ডরেল বসিয়ে যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিস।
এদিন ভোররাত থেকেই দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে মানুষ ভিড় জমায়। ভোর ৪টে নাগাদ গড়িয়াহাট মোড়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সোনারপুরের রুদ্রজিত্ ঘোষ বলছিলেন, ১০ বছর ধরে কলকাতার পুজো দেখছি। কোনওবার পঞ্চমীর ভোরে এমন ভিড় দেখিনি। সুভাষগ্রামের সৌষ্ঠব দত্ত ও তাঁর বান্ধবী বেরিয়েছিলেন ঠাকুর দেখতে। নাকতলা উদয়নের ঠাকুর দেখে বেরিয়ে ওষুধের দোকান খুঁজছিলেন। কারণ, নতুন জুতোয় তাঁর বান্ধবীর পায়ে ফোস্কা পড়েছে।
উত্তর ও মধ্য কলকাতার চিত্র একই। কলেজ স্কোয়ার থেকে টালা—ভোররাত থেকে ভিড় ছিল সর্বত্র। জগৎ মুখার্জি পার্ক, কুমোরটুলি পার্ক, কুমোরটুলি সর্বজনীন, হাতিবাগান, আহিরীটোলা, তেলেঙ্গাবাগান থেকে শুরু করে টালা প্রত্যয়, ভিড়ে ছয়লাপ সব জায়গা। গরমের জেরে দুপুরে ভিড়ে কিছুটা ভাটা পড়লেও বিকেল থেকে ফের শুরু হয় জনস্রোত। কলকাতার পাশাপাশি সল্টলেক, বাগুইআটি, দমদমের পুজোগুলিও ভিড় টানার লড়াইয়ে পিছিয়ে ছিল না। শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। ফলে শহরতলির বহু মানুষ ট্রেনে শিয়ালদহ এসে মেট্রো ধরে সল্টলেক এলাকার পুজো দেখতে আসছেন। বিশেষ করে এফডি ব্লক ও এ ই পার্ট ওয়ানের পুজোয় ভিড় বেশি।
এদিকে, এবার পুজোয় কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে সরকারি উদ্যোগে চলা দোতলা বাস। প্রতিদিন বেলা ১১টায় রবীন্দ্রসদন থেকে প্রথম দোতলা বাস ছাড়ছে। দীর্ঘ ২০ বছর সিঙ্গাপুরে কর্মরত স্বপ্নিল মিশ্রা। এই প্রথম কলকাতায় পুজো দেখতে এসেছেন। হুডখোলা দোতলা বাসে উঠে উৎসবমুখর মহানগর দেখে তিনি রীতিমতো পুলকিত। বলছিলেন, এরকম দোতলা বাস সিঙ্গাপুরে রয়েছে। এখানেও চালু হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। নিজের তরুণ বয়সে দোতলা বাসে চেপেছিলেন দমদমের বাসিন্দা শঙ্খশুভ্র মুখোপাধ্যায়। ছাতা মাথায় বাসের ছাদে বসে তিনি যেন ফিরে পেলেন আগের দিনগুলি!