নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ফুড সেফটি লাইসেন্স ছাড়াই বহাল তবিয়তে চলছে বেশকিছু মিষ্টি ও খাবারের দোকান। সেসব দোকানের অধিকাংশই শিল্পের জন্য তৈরি রং রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। বুধবার সিউড়িতে বেসরকারি বাসস্ট্যান্ড চত্বর এলাকায় অভিযানে নেমে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকেরা এমনই তথ্য পেলেন। ঘটনায় জেলা খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক প্রসেনজিৎ বটব্যাল ব্যবসায়ীদের কড়া ধমক দেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের ফুড সেফটি লাইসেন্স তৈরির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আগামীতে কড়া পদক্ষেপে নেওয়া হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ব্যবসায়ীরা সতর্ক না হলে আগামীতে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একাধিক দোকানের খাবারের গুনগত মান নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। কোথাও আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির অভিযোগও ওঠে। এই পরিস্থিতিতে এদিন জেলা খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের তরফে অভিযান চালানো হয়। একটি মিষ্টির দোকানে শিল্পের কাজে ব্যবহার করা রং খাবারে মেশানোর অভিযোগ ওঠে। তড়িঘড়ি সেই দোকানে মজুত চপ, সব্জি ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই ওই ব্যবসায়ী আধিকারিকদের সামনেই সেসব ডাস্টবিনে ফেলে দেন। সেই দোকানের ফুড সেফটি লাইসেন্সও নেই। পরবর্তীতে আধিকারিকেরা একটি ভাতের হোটেলে পৌঁছে যান। সেই হোটেলেরও ফুড সেফটি লাইসেন্স নেই। সেটি আগে মিষ্টির দোকান ছিল। বছর দশেক আগে সেটি হোটেলে বদল হয়েছে। সেখান থেকে একটু দূরেই আরও একটি হোটেল। সেই দোকান থেকে ওই একই রঙের প্যাকেটের হদিশ মেলে। এরপরই ব্যবসায়ীকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। তবে এখানেই শেষ নয়, আরও একাধিক দোকানে আধিকারিকেরা পৌঁছে যান। কোথাও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঠান্ডা পানীয়ের হদিশ মেলে। কোথাও আবার দেখেন খোলা অবস্থাতেই খাবার রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে এদিন খতিয়ে দেখা হয়, সঠিক কোন পরিবেশে রান্না হচ্ছে? রান্নার কাজে ব্যবহার করা জল আদৌ পানযোগ্য কি না, সেসবও নিশ্চিত করা হয়।
ব্যবসায়ী গণেশচন্দ্র দাস প্রায় ৩০ বছর ধরে মিষ্টির দোকান চালাচ্ছেন। তাঁর কাছে ফুড সেফটি লাইসেন্স নেই। সেই দোকানে রান্নার কাজে ওই রং ব্যবহার করা হতো। ব্যবসায়ী বলেন, ভুল হয়েছে। আর হবে না। দ্রুত ফুড সেফটি লাইসেন্সও তৈরি করে নেব। ভাতের হোটেলের মালিক দিলীপ সরকার বলেন, আগে মিষ্টির দোকান ছিল। এখন ভাতের হোটেল করা হয়েছে। আমি লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। তবে সেসময় পাইনি। এবার নিশ্চিত করে নেব।
খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের অভিযান চলাকালেই এক মিষ্টির দোকানে ইতু বাগদি তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে পুরি খাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, না জেনেই কত কী খেয়ে নিচ্ছি। এসব দেখেশুনে এখন ভয় হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুরজ শেখ বলেন, এবার মনে হচ্ছে আমরা ভালো খাবার পাব।
জেলা খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক বলেন, বেশকিছু দোকান থেকে পাওয়া খাবারে মেশানোর রং নষ্ট করা হয়েছে। যাঁরা সেসব ব্যবহার করেন, তাঁদের বোঝানো হয়েছে। প্রয়োজনে এফএসএসআই অনুমোদিত রং ব্যবহার হতে পারে। এছাড়া ফুড সেফটি লাইসেন্স কিছু দোকানে থাকলেও তা প্রকাশ্যে রাখা হচ্ছে না।