সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
সিকিমের অর্থনীতির সিংহভাগই পর্যটন নির্ভর। আর পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় পুজোর সময়। ফলে ঠিক পুজোর মুখে রাজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ে সিকিমের অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে পর্যটকরা আসতে পারেন বলে ওই রাজ্যের সরকারের তরফে জানানো হলেও এতে কতটা সাড়া মিলবে তা নিয়ে সন্দিহান উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ধস সারিয়ে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক চালু না হলে ঘুরপথে মোটেই খুব বেশি পর্যটককে সিকিমে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন টুর অপারেটররা। সেক্ষেত্রে মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো অর্থাৎ পুজোর পর্যটনে সিকিম ও দার্জিলিং মিলিয়ে প্যাকেজ টুরে অন্তত ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, করোনার সময় আমরা হিসেব করেছিলাম সিকিম ও দার্জিলিংয়ের একটা অংশ মিলিয়ে পর্যটনের হাত ধরে দিনে আয় হয় গড়ে ২০ কোটি টাকা। সেইমতো ১৪-২৮ অক্টোবর পর্যন্ত যদি সিকিমে পর্যটন মার খায়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০০ কোটি। যেহেতু সিকিম যেতে না পারায় দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে পর্যটকের কিছুটা চাপ বাড়বে, ফলে ধরে নেওয়া যায় ৫০ কোটি টাকা আয় পুষিয়ে যাবে। তারপরও ২৫০ কোটি ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাঁর দাবি, ‘তিনমাসের আগে উত্তর সিকিম ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফলে পুজোর পর্যটনে সিকিম নিয়ে আশা করার মতো জায়গায় নেই আমরা।’
রাজ্যের ইকো টুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেছেন, সিকিম বিপর্যয়ে পুজোর পর্যটনে যে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সিকিম যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। উত্তর সিকিমে যেসব পর্যটকের বুকিং ছিল, তাঁদের আমরা তিনটে অপশন দিতে বলছি। সেইমতো বিকল্প ডেস্টিনেশনে ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাঁদের জন্য। পুজোর আগে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক খুলবে বলে আমাদের আশা।
এনবিএসটিসি’র তরফে ফি বছর পুজোয় ‘সবুজের পথে হাতছানি’ নামে প্যাকেজ টুরের আয়োজন করা হয়। এবারও সেই প্যাকেজে গ্যাংটক থেকে উত্তর সিকিম, দার্জিলিং-গ্যাংটক, গ্যাংটক-পেলিং, রাবাংলা-পেলিং, শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রাখা হয়েছিল। পর্যটকদের সাড়াও মিলেছিল বেশ ভালো। কিন্তু বিপর্যয়ের জেরে শেষমুহূর্তে প্যাকেজ থেকে সিকিম বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিগম। এনবিএসটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, ‘যাঁরা সিকিমে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বুকিং করেছিলেন, তাঁরা বলছেন অনিশ্চয়তা নিয়ে তাঁরা এখন সিকিমে ঘুরতে যেতে চান না। ডিসেম্বরে যদি প্যাকেজ বানানো হয়, তাহলে তাঁরা যেতে পারেন। সেকারণেই পুজোর প্যাকেজ থেকে সিকিম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, এখনও যেসব পর্যটক সিকিমে আটকে রয়েছেন, তাঁদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সেরাজ্যের প্রশাসনের পাশাপাশি ঝাঁপিয়েছেন উত্তরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের তরফে এদিন থেকে নিখরচায় শিলিগুড়ি-গ্যাংটক ক্যাব পরিষেবা চালু করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দু’টি ট্যাক্সি বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ছাড়ে। দু’টি রওনা দেয় শিলিগুড়িতে সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের অফিসের সামনে রেখে। মূলত আটকে পড়া পর্যটকদের জন্য এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে।