জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
নাগরপোঁতার শাল-পিয়ালের জঙ্গলে বসন্তের হাওয়া যখন বয়ে যায়, সেই হাওয়ায় ভেসে আসে এক মন কেমন করা প্রেমের কাহিনি। বহু প্রাচীন সেই গল্প। তখন আউশগ্রামের দেবশালা পরিচিত ছিল গোপভূম নামে। গোপভূমের এক রাজা ছিল। তার ছিল এক পরমা সুন্দরী কন্যা। বাংলা তখন বর্গি হামলায় জেরবার। গোপভূমের রাজা বর্গি হামলা থেকে বাঁচতে তার রাজবাড়ির চতুর্দিকে পরিখা খোঁড়ে। সেই পরিখার কিছু অংশ আজও বিদ্যমান। ওই পরিখা দিয়ে পানসি বেয়ে আসত এক গোপ কিশোর। সে রাজবাড়িতে দুধ দিত। ওই গোপ কিশোর যখন পানসি চালিয়ে দুধ দিতে আসত, তখন রাজবাড়ির অলিন্দে দাঁড়িয়ে থাকত রাজকন্যা। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকত কিশোর। কখন যে চোখে চোখেই মন দেওয়া হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি কেউই। তবে সেই অসম প্রেমের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। গেল রাজার কানেও। একজন রাজার মেয়ে, অন্যজন দুধওয়ালা— এই অসম প্রেম মেনে নেবে কেন রাজা। এদিকে রাজরোষে পড়ার ভয়ে দুজনেই ঘর ছাড়ল। পালিয়ে আশ্রয় নিল ঘন শাল-পলাশের জঙ্গলে। রাজা সেনাদের আদেশ দিলেন, যেখানেই দেখতে পাবে দুজনকে সেখানেই যেন মেরে ফেলবে। যেমন আজ্ঞা, তেমনি কাজ। নাগরপোঁতার জঙ্গলে কিশোর-কিশোরীকে হত্যা করল রাজার সেনারা। তারপর পুঁতে দিল সেখানেই। তৈরি হল ‘প্রেমের সমাধি’।
আজও ‘প্রেমের সমাধি’-তে গাছের ঝরাপাতা চাপিয়ে আসেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। আউশগ্রাম ২ ব্লকের দেবশালায় রয়েছে নাগরপোঁতা জঙ্গল। দেবশালা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁ দিকের জঙ্গলের রাস্তা ধরে দুর্গাপুরের দিকে গেলেই চোখে পড়বে সেই প্রেমের সমাধি। দেবশালার বাসিন্দা ক্ষেত্রনাথ মণ্ডল বলেন, তখনকার দিনে সমাজ অসম প্রেম মেনে নিত না। তাই দু’জনকে মেরে ফেলা হয়েছিল। জঙ্গলে আমরা গেলে প্রেমের সমাধিতে শুকনো ঝরাপাতা দিই। সম্মান জানাই ভালোবাসার শহিদদের। আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধক্ষ্য মানিক রুইদাস ওই প্রেমের সমাধি নতুন করে সংস্কার করেন। মূলত তাঁর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে সেখানে ভালেন্টাইনস ডে-তে সাংস্কৃতিক উৎসব হয়।
মানিকবাবু বলেন, এই ইতিহাসের কোনও প্রামান্য তথ্য আমাদের কাছে নেই। সবটাই লোকমুখে প্রচারিত। আমরা চাই ইতিহাস বাঁচুক। আমরা ছোট থেকে শুনে আসছি, রাজকন্যা ও গোপ কিশোরকে রাজার লেঠেল বাহিনী নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। স্থানীয় লেখক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, ইতিহাসটি অনেক পুরনো। এটা প্রামাণ্য না হলেও সামন্ত রাজাদের যে এলাকায় বাস ছিল তার প্রমাণ আছে। প্রেমের জন্য দু’টি তরুণ হৃদয়ের বলিদান মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
(প্রেমের সমাধি- নিজস্ব চিত্র)