জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা ১৫ মিনিট। অ্যাম্বুলেন্সে সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহ ঢোকে গ্রামে। ৭৫ বছরের বৃদ্ধা ছিলেন কুন্তী মাহাত। জাগরী মাহাতর বয়স হয়েছিল ৪৮। আর আলপনা ছিলেন চুয়াল্লিশ বছরের। আচার-ব্যবহারে তিনজনকেই খুব পছন্দ করতেন গ্রামের মানুষ। ভক্তি ও কর্ম নিয়ে স্বচ্ছন্দে থাকতেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন গোটা গ্রাম। সবার বাড়িতে অরন্ধন। কেউ কাঁদছেন। কেউ বুক চাপড়াচ্ছেন। ঘনিষ্ঠ স্বজনরা আর্তনাদ করছেন। মাটিতে
গড়াগড়ি খাচ্ছেন। সব মিলিয়ে শোকে পাথর গ্রামবাসীরা।
গত রবিবার চাকলতোড় মোড় থেকে একটি রিজার্ভ বাস ও দু’টি গাড়িতে আলপনারা রওনা দিয়েছিলেন প্রয়াগরাজের উদ্দেশে। সঙ্গী ছিলেন আশেপাশের গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন তীর্থযাত্রী। বাসে ছিলেন গোপলাডি গ্রামেরই প্রায় ১৩ জন বাসিন্দা। মঙ্গলবার ভোরে তাঁরা প্রয়াগরাজের কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন। বাকি ছিল মাত্র ৩০ কিলোমিটার পথ। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নাগনাথপুর এলাকার একটি পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল বাসটি। কথা ছিল, সেখানেই সবাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবেন। চা-জলখাবার খেয়ে ফের রওনা দেবেন। সেই মতো পাম্পের অদূরে রাস্তার ধারে একটি ফাঁকা জায়গায় প্রাতঃকর্ম সারতে গিয়েছিলেন আলপনারা। জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে ফেরার সময় একটি ট্রাক পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে তাঁদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ময়নাতদন্তের পর বিকেল চারটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনজনের দেহ নিয়ে রওনা দেন কুন্তীদেবীর ছেলে বাবুলাল, জাগরীর স্বামী কৃষ্ণকিশোররা। তাঁরাও কুম্ভে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে কেউই আর কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। একসঙ্গে মা ও স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবুলাল। মায়ের দেহে আছাড় খেয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছেন আরও দুই ছেলে, পুত্রবধূরা।
এদিন গ্রামে আসেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাত, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাত, পুরুলিয়া-১ ব্লকের বিডিও মনোজ কুমার মাইতি প্রমুখ। সভাধিপতি বলেন, ‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। মৃতদের পরিবারের পাশে আমাদের সরকার ও প্রশাসন রয়েছে। সবরকম সাহায্য করা হবে।’ উত্তরপ্রদেশ সরকারের অব্যবস্থার জন্যই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ক্ষোভ উগরে দেন শান্তিরামবাবু। তিনি বলেন, ‘কুম্ভে কখনও আগুন লেগে যাচ্ছে, কখনও দুর্ঘটনা ঘটছে, কখনও পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হচ্ছ।’ বিডিও বলেন, ‘দেহ ফিরিয়ে আনতে সবরকম উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। দেহ আনতে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।’