মনোরম স্থানে সপরিবারে ভ্রমণ ও আনন্দ উপভোগ। সম্পত্তি সংরক্ষণে সচেষ্ট না হলে পরে ঝামেলায় পড়তে ... বিশদ
মহাভারত প্রসিদ্ধ স্থান গড়বেতা-১ ব্লকের গনগনি। পাণ্ডবদের বনবাস চলাকালীন এখানেও এসে কিছুকাল ছিলেন বলে কথিত। আশ্রয় নিয়েছিলেন এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। এখানেই বকাসুরকে বধ করেছিলেন ভীম। এমন কিংবদন্তীর সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে গনগনির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। চারিদিকে সুদীর্ঘ গভীর গিরিখাত। যাকে আমেরিকার অ্যারিজোনা প্রদেশের কলোরাডো নদীর ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-এর সঙ্গে তুলনা করেন পর্যটকরা। তাই হয়তো গনগনিকে বলা হয় ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’। তাকে ঘিরে শিলাই নদী। সবুজের সন্নিবেশ। এক, দু’দিনের জন্য অনাবিল আনন্দে মেতে থাকার অনবদ্য ডেস্টিনেশন এই গনগনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই সেখানে ভিড় বাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের। কিন্তু প্রশাসনিকস্তরে গনগনির সার্বিক উন্নয়ন বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। বেহাল রাস্তা। পানীয় জলের হাহাকার। স্ট্রিট লাইটের দেখা নেই। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে ডুব গনগনির। সমস্যায় পড়তেন পর্যটকর। সম্প্রতি সেই সমস্যার খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’ কাগজে। তা দেখেই টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। গনগনিকে ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিচ্ছে মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। তাদের সিদ্ধান্তে খুশি পর্যটকরা।
জানা গিয়েছে, গনগনি পর্যটনকেন্দ্রে ঢোকার আগে রাস্তার সংস্কার করা হবে। বসানো হবে স্ট্রিট লাইট। ধাপে ধাপে পানীয় জলের ব্যবস্থাও হবে। রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। এতদিন মোরামের রাস্তা ধরে যেতে হতো গনগনি। ধুলোয় ভরে যেত গোটা এলাকা। বর্ষায় লালমাটির কাদায় ভরপুর। বাইক স্কিট করে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। স্ট্রিট লাইটের অভাবে অসামাজিক কজকর্ম হতো বলে দাবি স্থানীয়দের। এবার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলে সব সমস্যা মিটে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা। পাশাপাশি, পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার প্রহরও গুনছেন সকলেই। সামনেই সাধারণতন্ত্র দিবস। গনগনিতে রেকর্ড পরিমাণে ভিড় হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসতে শুরু করেছেন তাঁরা।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, ‘জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নতি করা আমাদের মূল লক্ষ্য। গনগনির রাস্তার সমস্যা ও আলোর সমস্যা নজরে এসেছে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পানীয় জল সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানও করবে জেলা পরিষদ। এছাড়া গনগনিতে রোপওয়ে তৈরির চিন্তা ভাবনা রয়েছে।’এলাকার ব্যবসায়ী চঞ্চল মণ্ডল বলেন, ‘জেলা পরিষদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। ঝা চকচকে রাস্তা, জলের সমস্যার সমাধান, বেশি পরিমাণে শৌচাগার তৈরি হলেই আরও বেশি পর্যটক আসবেন।’
মহাভারতের কিংবদন্তী ছাড়াও গনগনির ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। চুয়াড়-লায়েক বিদ্রোহের ইতিহাসও জড়িয়ে এই এলাকার সঙ্গে। জানা গিয়েছে, রাজ্য সড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গনগনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নানা কাজ হলেও, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। গনগনি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা সেভাবে কোনও কাজ করেননি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়েও মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের বসার জায়গা নেই। বয়স্ক মানুষদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। হাওড়া জেলা থেকে আসা পর্যটক রবীন সেনগুপ্ত এদিন বলছিলেন, ‘এখনও অনেক কাজ করতে হবে। রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন।’