সন্তানের স্বাস্থ্যহানির জন্য মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ। ক্রমোন্নতি ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি। বিদ্যায় ... বিশদ
পুরুলিয়ার বরাবাজারের রানসি গ্রামের দরিদ্র চাষি পরিবারে জন্ম বাসন্তীর। পরিবারে রয়েছেন মা লক্ষ্মীরানি, বাবা শান্তিরাম মাহাত ও ভাই। বড় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চাষ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলত সংসার। তবে, তা পুরোটাই নির্ভর করত আকাশের বৃষ্টির উপর। বৃষ্টি হলে ভালো। যে বছর খড়া, সে বছরই চরম অভাব অনটনে পড়তে হতো পরিবারকে। তাই ছোট থেকে খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া তার কাছে ছিল বিলাসিতা। ফলে নিজের সেই ইচ্ছাকে মনের মধ্যে দমিয়েই রেখে দিয়েছিলেন বাসন্তী। কিন্তু, হঠাৎ যে তার কাছে এমন সুবর্ণ সুযোগ এসে যাবে, তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি।
সালটা ২০১৮। বাসন্তী তখন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। সেই বছরই জেলা পুলিসের সহযোগিতায় বরাবাজার থানার উদ্যোগে ‘লক্ষ্য’ নামের তিরন্দাজি অ্যাকাডেমি খোলা হয়। স্থানীয় যুবকযুবতীদের বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। সেই খবর পেয়েই নিজের সুপ্ত ইচ্ছা চাগার দিয়ে ওঠে বাসন্তীর। প্রতিদিন সকালে পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে যেতে শুরু করে সে। নিজের একাগ্রতা, অধ্যাবসায়ের জেরে একের পর এক লক্ষ্য ভেদ করতে থাকে বাসন্তী। জেলা রাজ্য স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তার ঝুলিতে আসতে থাকে পদক। নজরে পড়ে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ায় কর্তাদের। ২০১৯ সালে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার(সাই) সল্টলেক ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পায় বাসন্তী। তারপর আর তাকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়নি। প্রশিক্ষণ চলাকালীন রাজ্য ও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বহু পদক এসেছে পুরুলিয়ার মেয়ের ঝুলিতে।
বর্তমানে বাসন্তীর বয়স ১৯। কলকাতারই একটি বেসরকারি কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছেন। সেইসঙ্গে চলছে প্রশিক্ষণ। গত বছর ১৮টি দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতা হয়। সেখানে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে দলগতভাবে তিরন্দাজিতে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন বাসন্তী। ওই বছরই চীনে আয়োজিত এশিয়ান ইউথ আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় দু’টি রুপোর পদকও তিনি জেতেন। এবার লক্ষ্য ব্যাঙ্ককে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় সোনা জয়। তবে, ব্যাঙ্ককে যাওয়ার আগে উত্তরাখণ্ডে আয়োজিত ৩৮তম ন্যাশনাল গেমসেও অংশগ্রহণ করছেন। বাসন্তী বলেন, ‘দু’টি প্রতিযোগিতাতেই পদক জিততে মুখিয়ে রয়েছি।’
বাসন্তীর সাফল্যে গর্বিত তার মা বাবা। গর্বিত বরাবাজার ও পুরুলিয়া জেলা পুলিসও। বাসন্তী অলিম্পিকে খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করুক, এটাই প্রত্যেকের প্রার্থনা।
(বাসন্তী মাহাত। -নিজস্ব চিত্র)