সন্তানের স্বাস্থ্যহানির জন্য মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ। ক্রমোন্নতি ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি। বিদ্যায় ... বিশদ
‘নবাব’ রয়েছেন। কিন্তু সেই নবাবি শাসন নেই। নেই নবাবিয়ানাও। পরণে কচি কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা। তার উপর চড়ানো কালো নেহরু কোট। মাথায় নবাবি টুপি। চোখে কালো সানগ্লাস। দাঁড়িয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সভার ঠিক পিছনের ভিভিআইপি গেটে। ঢোকার চেষ্টা করতেই নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা—কে আপনি? কোথায় যাবেন? থ মেরে থমকে থামলেন শীর্ণকায় এক প্রবীণ। মুখে কোনও কথা নেই। ঘটনাটি চোখ এড়িয়ে যায়নি মঞ্চে থাকা এক প্রশাসনিক কর্তার। ছুটে এসে সরিয়ে দিলেন রক্ষীদের। বললেন, ‘কী করছেন আপনারা! উনি আজকের অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি। আমাদের ছোটে নবাব।’
মুঘল ভারতে বাংলা বিহার ও ওড়িশার স্বাধীন শাসক ছিলেন সুজাউদ্দিন খান। মূলত তাঁর আমল থেকেই বাংলায় নবাবি যুগের পত্তন। রাজধানী ছিল আজকের মুর্শিদাবাদ। দেশ-বিদেশের কাছে এখানকার লালবাগ শহরের পরিচিতি ছিল ‘নবাবি মুলুক’ বলে। আজও মানুষের মুখে মুখে সেই কথা ঘোরে। কিন্তু আজকের মুর্শিদাবাদ কিংবা লালবাগ তো আর সেই ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে পড়ে নেই। ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দোলার পরাজয়ের পর বাংলা ক্রমেই ভুলতে থাকে তার নবাবি শাসনকে। তবে, সেই ইতিহাসের স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন নবাব পরিবারের সদস্যরা। উপাধিতেও তাঁরা ‘নবাব’। তাঁদের একজন সৈয়দ রেজা আলি মির্জা। মুর্শিদাবাদে ছোটে নবাব নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। আজ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভায় সেই সৈয়দ রেজাকে বাড়তি গুরুত্ব ও সম্মান জানিয়ে স্মরণ করালেন বাংলার নবাবি শাসনের দীর্ঘ ইতিহাসকে। মমতার স্পর্শে আবেগঘন হয়ে পড়লেন ছোটে নবাবও।
এদিন সরকারি প্রকল্প পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান ছিল লালবাগে। যথারীতি সেই অনুষ্ঠানে সাংসদ, বিধায়ক, প্রশাসনিক কর্তা সহ সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল চোখের পড়ার মতো। তার মধ্যেও সবার নজর ছিল ছোটে নবাবের দিকে। তাঁর দিকে তাকিয়ে পলাশী যুদ্ধের স্মৃতিও হয়তো কেউ কেউ রোমন্থন করলেন। এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক উপভোক্তার হাতে জমির পাট্টা তুলে দেওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেই পাট্টা মুখ্যমন্ত্রী ছোটে নবাবের হাতে তুলে দিয়ে সেই কাজের সূচনা করেন। এভাবে নবাব বংশের সদস্যকে সম্মান জানাতে দেখে করতালির সুনামি ওঠে সভাস্থলে।
সৈয়দ রেজা আলি মির্জার জন্ম লালবাগ শহরের বেগম মহলে। বর্তমানে সেই মহল প্রায় ধ্বংসের পথে। কিছু ভাঙা ঘর আর ক্ষতিগ্রস্ত একটি বারান্দা ছাড়া অবশিষ্ট তেমন কিছু নেই। মহলের চারিদিকে ঝোপ ঝাড়। একদা এই মহল ছিল বিলাসবহুল প্রাসাদ। জৌলুস ছিল চোখ ধাঁধানো। সেই প্রাসাদের সঙ্গে নিবিড় নাড়ির যোগ থেকেও সৈয়দ রেজা অতি সাধারণের মতো জীবন-যাপন করেন। সবার সঙ্গে খোলামেলা মেলামেশা করেন। তাঁদের জমির উপরই গড়ে উঠেছে স্কুল। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্কুলের উন্নতিতে লিখিত কিছু আবদার করেছেন রেজা সাহেব। বলছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে আজ এই সম্মান পেয়ে আমি আপ্লুত।’
সভা মঞ্চেই সেই চিঠি খুলে পড়তে শুরু করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। যা দেখে বেজায় খুশি হয়েছেন তিনি।
রেজা আলি সাহেব বলেন, আজকে আমরা খুব খুশি। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে আবেদন করলাম এই ইতিহাসের শহর নিয়ে। তিনি আমাদের শহরে এই প্রথম এসেছেন। আমাকে পাশে বসিয়ে সম্মান জানিয়েছেন। এই সম্মান আগে কেউ দেয়নি। খুব ভালো লাগল আজ। আমাদের দাদুর নামে এই স্কুল। তাই এই স্কুলের উন্নতি হলে এলাকার ছেলেমেয়েদের উন্নতি হবে। সেজন্য স্কুলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু আবেদন করেছি। তিনি মনোযোগ সহকারে সেই আবেদনের চিঠিখানি পড়েছেন। -নিজস্ব চিত্র