স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে হঠাৎ সমস্যায় মানসিক চিন্তা ও উদ্বেগ। কাজকর্ম কমবেশি এগবে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ... বিশদ
এক সময় নাদনঘাট থানার জাহান্নগর পঞ্চায়েতের পরাণপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত ভাগীরথী নদী। নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ জঙ্গল ঘেরা এলাকায় ছিল মহাশ্মশান। এলাকা সহ দূর দূরান্ত থেকে মৃতদেহ সৎকারের জন্য এখানে আনা হতো। দেহ সৎকার করে বাড়ি ফিরে যেতেন পরিজনরা। ভাগীরথী নদী গতি পরিবর্তন করতে করতে সরে গেলেও রয়ে গিয়েছে ছাড়িগঙ্গা। এক সময় এই অঞ্চল দিয়েই নবদ্বীপে যাতায়াতের সহজ নদীপথ ছিল। এই অঞ্চলে ছিল জগাই-মাধাইয়ের মুক্তাঞ্চল। কথিত আছে, এখানেই চৈতন্য মহাপ্রভুকে কলসি দিয়ে আঘাত করেছিল জগাই-মাধাই। পাশেই রয়েছে মাধাইপুর।
প্রাচীনকাল থেকে ছাড়িগঙ্গার পাড়ে শ্মশান এলাকায় কাঁদুনি মেলা হয়ে আসছে। কেন এই মেলাকে কাঁদুনি মেলা বলা হয়? স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এই মহাশ্মশানে যাঁদের পূর্বপুরুষদের দাহ করা হয়েছে এমন পরিবারের লোকজনই মকর সংক্রান্তিতে এখানে আসনে। নদীতে স্নান করে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ ও আত্মার শান্তি কামনায় উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করে চোখের জলে তর্পণ করেন। তাই মেলার নাম ‘কাঁদুনি মেলা’। এখন পঞ্চায়েতর উদ্যোগে রাস্তাঘাট, আলো সহ শ্মশানের উন্নতি হয়েছে।এদিন দোগাছিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা প্রবীণ সত্যনারায়ণ নাথ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। ছাড়িগঙ্গায় স্নান করে চোখের জল ফেলে পূর্ব পুরুষদের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে বাবা মারা যায়। এই শ্মশানে বাবাকে দাহ করেছি। দাদুকেও এখানেই দাহ করা হয়েছে। তখন নির্জন খোলা আকাশের নীচে দাহ করা হতো। আজ শ্মশান অনেকটা উন্নত হয়েছে। প্রতিবছর এই দিনে পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পন করতে এখানে আসি। আমার মতো অনেকেই আসেন চোখের জলে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে।
অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিলেন বৃদ্ধা কাননবালা সর্দার। স্বামীকে এখানেই দাহ করা হয়েছে বলে জানান। নাতির হাত ধরে মেলায় এসে অবসন্ন শরীরে স্বামীর আত্মার শান্তি কামনায় চোখের জল ফেললেন।
জাহান্নগর পঞ্চায়েত প্রধান মৃণালকান্তি দেবনাথ বলেন, শ্মশানে দাহ করা হয়েছে, এমন পরিবারের লোকেরা এসে নদীতে স্নান করে কান্নাকাটি করে প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলায় বহু মানুষ রান্না করে খাওয়া দাওয়াও করেন। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য করা হয়। -নিজস্ব চিত্র