সন্তানের স্বাস্থ্যহানির কারণে মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ। পরীক্ষায় মনোমতো ফললাভ ও নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ। ... বিশদ
তাঁদের কথায়, চোখের সামনে সঙ্গমে ব্যারিকেড ভাঙতে দেখেছি। লাখো লাখো মানুষ। ভিড়ে চাপে কেউ পড়ে গেলে তাঁকে তুলতে যাওয়া মানেই পদপিষ্ট হওয়া। সবাই ব্রহ্ম মুহূর্তে অমৃত স্নানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আচমকা এতটাই ভিড় হয়ে যায় যে, ভেঙে পড়ে ব্যারিকেড। নিরাপত্তারক্ষীদের উপর আছড়ে পড়ে জনস্রোত। ব্যারিকেড ভাঙার পর শুধু মানুষের আর্তনাদ আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনেছি। চোখের সামনে ওই দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আর বোধহয় বাড়ি ফিরতে পারব না। মোবাইলে চার্জ না থাকায় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছিল, মৃত্যু যেন শিয়রে!
২৬ তারিখ বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশনে পৌঁছান পাঁচ বন্ধু। এরপর বাসে চেপে সেখান থেকে প্রয়াগরাজে আসেন। বাস যেখানে নামিয়ে দেয় সেখান থেকে মূল মেলার দূরত্ব হাঁটা পথে ২৭ কিলোমিটার। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের পাতকাটা কলোনির বাসিন্দা সঞ্জীবন দাস, অমিত রায় বলেন, ২৭ ঘণ্টা হেঁটে আমরা সঙ্গমে পৌঁছেছিলাম। তারপর ওই ভয়াবহ ঘটনা। আমাদের কোনওমতে ‘লক্ষ্মী দুয়ার’ দিয়ে বের করে দেয় প্রশাসনের লোকজন। বলে দেন, কয়েক কিমি গেলেই ফেরার যানবাহন পেয়ে যাব। কিন্তু কিছুই মেলেনি। না আছে বাস, না আছে অটো, টোটো। বাইকে ১০ কিমি দূরে নামিয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল। এটা ওটা ব্যবস্থা করে কোনওমতে ফাঁপামোড় নামে একটি জায়গায় এসে পৌঁছই। বলা হয়েছিল, ওখান থেকে বাস পাব। কিন্তু সেখানে কোনও বাস ছিল না। নিরুপায় হয়ে গাড়ি ভাড়া করি। চার ঘণ্টার রাস্তা, অথচ ২০ ঘণ্টা ঘুরে সেই গাড়ি আমাদের পাটনা স্টেশনে নামায়। ৩০ হাজার টাকা গাড়িভাড়া গুনতে হয়েছে।
জলপাইগুড়ির এই পাঁচ বন্ধুর দলে ছিলেন পাতকাটা বাজারের ব্যবসায়ী প্রশান্ত দাস। কুম্ভের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, ‘শুধু যানবাহন নয়, খাওয়াদাওয়ারও মারাত্মক সমস্যা হয়েছে। অল্প ভাত, একটা রুটি আর সব্জি, এরই দাম নেওয়া হচ্ছিল ১৭০ টাকা!’ তিনি বলেন, চোখ বন্ধ করলেই এখনও ত্রিবেণী সঙ্গমের সেই ভয়াবহ ছবি ভেসে উঠছে। লোটাকম্বল ফেলে কোনওমতে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, এটাই অনেক। আক্ষরিক অর্থেই যেন, আমাদের পুনর্জন্ম হল।