স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে হঠাৎ সমস্যায় মানসিক চিন্তা ও উদ্বেগ। কাজকর্ম কমবেশি এগবে। অতিরিক্ত পরিশ্রমে ... বিশদ
‘মেরা বেটা মুঝে ছোড়কে চালা গিয়া। অব কেইসে ঘর জাউঙ্গা?’ এই বলে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন পাটনার সুষমা দেবী। সাগরের কে ওয়ান বাসস্ট্যান্ডে তাঁকে উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে এগিয়ে যায় পুলিস। কী হয়েছে, জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, ‘হামকো ছোড়কে চালা গিয়া। একই অবস্থা উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদের হরিলাল সিংয়ের। তাঁকে একাকী ঘুরতে দেখে স্বেচ্ছাসেবকরা কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই একরাশ হতাশা ঝরে পড়ল তাঁর কথায়। বললেন, ছেলে-বউমার সঙ্গে এসেছিলাম। ওরা আমায় রেখে চলে গিয়েছে। ওদের কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
মেলা চলাকালীন গত কয়েকদিন ধরে এমন বহু ঘটনার সাক্ষী গঙ্গাসাগর। যত্ন করে পুণ্যস্নান করাতে নিয়ে এসে বাবা-মায়ের ‘বোঝা’ ঝেড়ে ফেলে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন এমন অনেক সন্তান। নির্মম ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় আরও মিলল মেলা প্রাঙ্গণে। অসুস্থ মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চলে যায় ছেলে। দু’দিন কেটে গেলেও তাঁকে দেখতে না আসায় সন্দেহ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছেলে বেপাত্তা। বিহারের কিষাণগঞ্জের বাসিন্দা ভানুমতী দুগার এখন অসহায় হয়ে ছেলের পথ চেয়ে বসে আছেন। চোখের কোণ চিকচিক করছে, বিড় বিড় করে ঠাকুরের নাম নিচ্ছেন আর বলছেন, এই দিনটি দেখার জন্য কি ওর জন্ম দিয়েছিলাম?
সন্তানরা অসহায় বাবা-মাকে এভাবে ফেলে চলে গেলেও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। কীভাবে এই প্রবীণদের বাড়ি পাঠানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য হ্যাম রেডিওর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এমন পাঁচজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যাঁদের ফেলে পালিয়েছে ছেলে-বউমা। সুষমা দেবী, ভানুমতী কিংবা হরিলাল সিংয়ের ঠিকানা খুঁজে বের করে তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হ্যাম রেডিওর কর্তা অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, এমন অমানবিকতার ছবি ভাবা যায় না। বয়সের ভারে তাঁরা ন্যুব্জ। ছেলেরা তাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চাইছে না বলে সাগরে রেখেই ফিরে গিয়েছে।